অদৃশ্য বায়ু অবলোকনের সহজ উপায়
আমাদের চারপাশে প্রচুর বায়ু বা বাতাস বিরাজ করছে। কিন্তু তা চোখে দেখা যায় না এবং খুঁজে পাওয়াও অনেক কঠিন। তাছাড়া বায়ুর স্বাদ গ্রহণ করা যায় না এবং স্পর্শ করাও যায় না। তবে ফুল, ফল, রান্নার গ্যাসোলিনের গ্যাস প্রভৃতির গন্ধ অনুভব করা যায়। গন্ধ বাতাসের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। যখন বায়ু চলাচল করে কেবল তখন গন্ধ অনুভব করা যায়। আবার দেখা যায়, বাতাস অন্য যেকোন কিছুর উপর বিভিন্ন রকম প্রভাব ফেলে থাকে। যেমন – বাতাস ঘাস বা গাছপালাকে দোলা দেয়, আবার বাঁকিয়ে ফেলে এবং বাতাসের প্রবাহে মেঘ আকাশে ভেসে বেড়ায় ইত্যাদি। ডুবরী শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য পানির নিচে তাদের পিঠে বায়ুর ট্যাংক বেঁধে নেয়। যখন তারা শ্বাস ছেড়ে দেয়, তখন বায়ুর বুদবুদ পানির মধ্যে নিচ থেকে উপরে উঠে আসে।
পানির নিচে কোন বস্তু রেখে বায়ুকে অবলোকন করা যায়। বুদবুদের মাধ্যমে বায়ুকে উপরে উঠতে দেখা যায়। অদৃশ্য বায়ু খুঁজে বের করার সহজ কয়েকটি উপায় নিচে তুলে ধরা হল:
১. একটি খালি বোতল পানির নিচে রাখি এবং একে পানি ভর্তি হতে দেই। যখন পানি বোতলের ভিতরে প্রবেশ করতে থাকে, তখন বোতলের ভিতর থেকে বুদবুদ বের হতে থাকে। আর এ বুদবুদই হল বায়ু।
২. একটি পাত্র পানি দিয়ে পূর্ণ করি। তারপর কতগুলো ছোট বড় মাটির টুকরো একসাথে পাত্রের পানিতে ছেড়ে দেই। দেখা যায, মাটির টুকরোগুলো পাত্রের নিচে জমা হচ্ছে এবং সাথে সাথে বুদবুদ বের হচ্ছে। আর এ বুদবুদই হল বায়ু।
৩. এক গ্লাস পানি কিছু সময়ের জন্য কোন চুলায় বা উত্তপ্ত স্থানে রাখি। দেখা যাবে, ছোট ছোট বুদবুদ উঠছে এবং তা গ্লাসের ভিতরের পাশে জমা হচ্ছে। যখন গ্লাসের পানি আরো গরম হবে এবং ফুটতে থাকবে, তখন অনেক বুদবুদ আসতে থাকবে। এ থেকে দেখা যায়, পানির নিজের মধ্যেও বায়ু রয়েছে।
৪. একটি খালি গ্লাসকে উল্টো করি এবং সোজা পানির নিচে নেই। এক হাত দিয়ে খালি গ্লাসটি ধরি, অন্য হাত দিয়ে আরেকটি গ্লাস পানির নিচে নামাই। যখন দ্বিতীয় গ্লাসটিকে নিচু করা হয়, তখন এটি পানি দিয়ে ভর্তি হবে। দ্বিতীয় গ্লাসটি প্রথমটির কাছে নেই। গ্লাস দুটি এক সাথে নাড়াই এবং প্রথম গ্লাসটি কাত করি, যেন বুদবুদ দ্বিতীয় গ্লাসে যেতে পারে। দেখা যাবে, দ্বিতীয় গ্লাসটিতে বায়ুর বুদবুদ দিয়ে পূর্ণ হচ্ছে এবং প্রথম গ্লাসটি পানি ভর্তি হচ্ছে।
বায়ু জায়গা দখল করে, একটি সহজ পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে –
১. একটি পাত্র বা বোতলের উপরে একটি ফানেল রাখি । পাত্র ও ফানেলের মধ্যকার খালি জায়গাগুলো কাদামাটি দিয়ে পূর্ণ করি। ফানেলের উপর দিয়ে পানি ঢালি। দেখা যায়, পানি পাত্রের ভিতরে প্রবেশ করছে না।
২. একটি সুঁই অথবা শলাকা দিয়ে কাদামাটির উপর গর্ত বা ছিদ্র করি। দেখা গেল, এবার পানি পাত্রের ভিতরে সহজে প্রবেশ করল। বিষয়টি কি ঘটল ?
পাত্রটি বায়ুতে পূর্ণ ছিল। কিন্তু কাদামাটির প্রলেপ বায়ুকে পাত্রের ভিতর থেকে বের হতে দিচ্ছে না। যখন কাদামাটিতে একটি গর্ত করা হল, তখন বায়ু বের হয়ে গেল। এতে পানি বোতলের খালি জায়গা দখল করার জন্য যেতে পারল।
এর বিপরীতও ঘটতে পারে। একটি ক্যান থেকে পানি বা যেকোন তরল ঢালা যায় না, যদি এতে আরো একটি গর্ত বা ছিদ্র না থাকে। যদি ক্যানের ছিদ্র বন্ধ করে দেই, তাহলে বায়ু তরলের জায়গায় যেতে পারবে না । আবার যদি অন্য একটি গর্ত তৈরী করা হয়, তাহলে দেখা যাবে বায়ু ভিতরে প্রবেশ করছে এবং তরল বাহিরে প্রবাহিত হচ্ছে। [মো. শাহীন আলম]
Easy Way to Observe Invisible Air