কোয়াশিওরকর ও ম্যারাসমাস রোগ নির্ণয় এবং এর প্রতিরোধের উপায়

কোয়াশিওরকর (kwashiorkor) হলো প্রোটিনের তীব্র অপুষ্টিজনিত রোগ, যাতে শোথ এবং ফ্যাটি লিভার হয়। এটি তখনই ঘটে যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি গ্রহণ ঘটে কিন্তু অপর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন খরচ বা ভালো মানের প্রোটিনের অভাব থাকে। এবং ম্যারাসমাস (marasmus) হলো শক্তির ঘাটতির জন্য সৃষ্ট এক ধরনের তীব্র অপুষ্টি। এধরনের অপুষ্টিতে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। তবে সাধারণ শিশুদের মধ্যে এটি বেশি লক্ষ করা যায়। এক্ষেত্রে বয়সের তুলনায় শরীরের স্বাভাবিক ওজন ৬২% কম হয়। নিম্নে কোয়াশিওরকর ও ম্যারাসমাস রোগ নির্ণয় এবং এর প্রতিরোধক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো:

কোয়াশিওরকর (kwashiorkor): ঘানা দেশীয় ভাষা থেকে কোয়াশিওরকর শব্দটির উৎপত্তি। এর অর্থ হলো বঞ্চিত শিশু। অতি শৈশবে শিশু মায়ের দুধ থেকে বঞ্চিত হলে ও খাবারে প্রোটিনের অভাব ঘটলে কোয়াশিওরকর রোগ হয়। কোয়াশিওরকর রোগের লক্ষণসমূহ নিম্নরূপ –
১. শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও ওজন হ্রাস পায়।
২. মাংসপেশি শুকিয়ে শরীর শীর্ণ হয়ে যায়।
৩. হাত-পা সরু ও পেট অপেক্ষাকৃত বড় দেখায়।
৪. পায়ে শোথ (ইডিমা) দেখা যায়।
৫. মাথার চুল লালচে রঙের হয় এবং চুল উঠে পাতলা হয়ে যায়।
৬. যকৃতের আকার বৃদ্ধি পায়, ও ক্ষুধামান্দ্য দেখা যায়।
৭. শিশু উদাসীন হয়, ও কোনো কাজে উৎসাহ থাকে না।

নাইজেরিয়ান-বিয়াফ্রান যুদ্ধের সময় কোয়াশিওরকর রোগে আক্রান্ত শিশু, সূত্র: wikipedia.org

ম্যারাসমাস (marasmus): ছোট শিশুদের খাদ্যে প্রোটিন ও ক্যালরিজনিত অপুষ্টির কারণে ম্যারাসমাস রোগ হয়। সাধারণত এক বছরের শিশুদের মধ্যে এই রোগ বেশি হতে দেখা যায়। ম্যারাসমাস রোগে নিম্নলিখিত লক্ষণসমূহ দেখা দেয়-
১. দেহের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও ওজন হ্রাস পায়।
২. দেহ হাড্ডিসার হয়, ও দেহের সঞ্চিত স্নেহ পদার্থ নিঃশেষ হয়ে যায় এবং মাংসপেশি শীর্ণ হয়।
৩. চামড়া ঢিলে হয়ে কুঁচকে যায়।
৪. শিশুর মধ্যে রক্তস্বল্পতা দেখা যায়।
৫. শিশু ঘন ঘন ডায়রিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়।
৬. চুলের রং বদলে যায় এবং চুল উঠে যেতে থাকে।
৭. ঘন ঘন ক্ষুধা পায়।

১৯৭২ সালে ভারতে মারাসমাসে আক্রান্ত শিশু, সূত্র: wikipedia.org

কোয়াশিওরকর ও ম্যারাসমাস রোগ প্রতিরোধের উপায়:
১. শিশুকে শালদুধসহ মায়ের দুধ অবশ্যই খাওয়াতে হবে।
২. পাঁচ মাস বয়সের পর দুধের পাশাপাশি শিশুকে পরিপূরক খাবারে অভ্যস্ত করতে হবে।
৩. শিশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হলে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. নিয়মিত শিশুর ওজন পরিমাপ করতে হবে।
৫. বাব-মায়ের আয় বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে। মা ও শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দিতে হবে।
৬. পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে বাবা-মাকে ঘন ঘন সন্তান উৎপাদন বন্ধ করতে হবে।
৭. বাড়ন্ত শিশুদের খাদ্যে ২/৩ অংশ প্রাণিজ প্রোটিনের ব্যবস্থা করা ভালো। আর্থিক অসচ্ছলতায় ডাল ও ভাত, ডাল ও রুটি, দুধ ও ভাত ইত্যাদি মিশ্র খাদ্য খাওয়ালে প্রোটিনের মান উন্নত হয়। [ইশরাত জাহান মিম]


সহায়িকা: সুলতানা, প্রফেসর রাফিকা এবং আরা, গাজী হোসনে, গার্হস্থ বিজ্ঞান, কাজল ব্রাদার্স লি., ঢাকা, পৃ: ২০৬, ২০৭।


Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *