খাদ্যের উপাদান: কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা
খাদ্যের উপাদানের মধ্যে শক্তি উৎপাদনকারী অপরিহার্য উপাদান হল কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, মানুষের শরীরের মোট কর্মশক্তির ৬০% – ৭০% শক্তি কার্বোহাইড্রেট থেকে গ্রহণ করা হয়। অন্যান্য খাদ্যের তুলনায় কার্বোহাইড্রেট প্রকৃতিতে ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়। কার্বোহাইড্রেটের মূল উপাদান হল কার্বন (c), হাইড্রোজেন (h), অক্সিজেন (o)। কার্বোহাইড্রেট অনুতে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন সর্বদা ২:১ অনুপাতে থাকে। সুতরাং কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন দিয়ে গঠিত একশ্রেণির যৌগ পদার্থই কার্বোহাইড্রেট নামে পরিচিত। প্রকৃতিতে যত জৈব যৌগ আছে, তার মধ্যে কার্বোহাইড্রেটের সংখ্যাই বেশি। উৎপন্ন কার্বোহাইড্রেটের বেশির ভাগই আমরা উদ্ভিদের মূল, কান্ড ও বীজ থেকে পেয়ে থাকি। স্তন্যপায়ী জীবজন্তুর রক্তে গ্লুকোজরুপে, দুগ্ধে ল্যাকটোজরুপে এবং দেহের অভ্যন্তরে গ্লাইকোজেনরুপে অবস্থান করে। ১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থেকে ৪ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়।
কার্বোহাইড্রেটের শ্রেণিবিভাগ: বিভিন্ন পদার্থের উপস্থিতি ও গঠনের উপর ভিত্তি করে কার্বোহাইড্রেটকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:
ক) শর্করার উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে কার্বোহাইড্রেটকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:
ক.১। শর্করা (carbohydrate) ও
ক.২। অশর্করা (non carbohydrate)। নিম্নে এগুলোর বর্ণনা দেয়া হলো;
ক.১। শর্করা (carbohydrate): শর্করা জাতীয় কার্বোহাইড্রেটগুলো সাধারণত দানাদার পদার্থ। এরা পানিতে দ্রবণীয় ও স্বাদে মিষ্টি। উদাহরণস্বরুপ – গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, ও সুক্রোজ।
ক.২। অশর্করা (non carbohydrate): অশর্করা জাতীয় কার্বোহাইড্রেটগুলো সাধারণত অদানাদার পদার্থ। পানিতে অদ্রবণীয় ও স্বাদহীন। উদাহরণস্বরুপ – স্টার্চ, শ্বেতসার, ও সেলুলোজ। আবার,
খ) রাসায়নিক গঠন কাঠামোর উপর ভিত্তি করে কার্বোহাইড্রেটকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন:
খ.১। মনোস্যাকারাইড;
খ.২। ডাইস্যাকারাইড; এবং
খ.৩। পলিস্যাকারাইড।
খ.১। মনোস্যাকারাইড: মনো (mono) অর্থ এক। অর্থাৎ এক অনুবিশিষ্ট কার্বোহাইড্রেটকে মনোস্যাকারাইড বলে। একে ভেঙ্গে অন্য কোনো যৌগে পরিণত করা যায় না। একে বিশ্লেষণ করলে কার্বন (c), হাইড্রোজেন (h), ও অক্সিজেন (o) পাওয়া যায়। যেমন: গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, ও গ্যালাকটোজ এক অনুবিশিষ্ট কার্বোহাইড্রেট।
খ.২। ডাইস্যাকারাইড: ডাই (di) অর্থ দুই। তাই যে সকল কার্বোহাইড্রেটকে বিশ্লেষণ করলে দুটি মনোস্যাকারাইড পাওয়া যায় তাকে ডাইস্যাকারাইড বলে। যেমন: সুক্রোজ, মল্টোজ, ও ল্যাকটোজ।
সুক্রোজ = গ্লুকোজ + ফ্রুক্টোজ
মল্টোজ = গ্লুকোজ + গ্লুকোজ
ল্যাকটোজ = গ্লুকোজ + গ্যালাকটোজ
খ.৩। পলিস্যাকারাইড: অনেকগুলো মনোস্যাকারাইড অনু দিয়ে পলিস্যাকারাইড গঠিত। পলি (poly) অর্থ একাধিক। যে সকল কার্বোহাইড্রেট দুইয়ের অধিক মনোস্যাকারাইড দিয়ে গঠিত তাকে পলিস্যাকারাইড বলে। যেমন: সেলুলোজ, স্টার্চ, ও গ্লাইকোজেন।
কার্বোহাইড্রেটের উৎস: কার্বোহাইড্রেট প্রধানত চাল, গম, আলু, মিষ্টি আলু, সাগু, সুজি, বার্লি, মধু, আখ যব, চিনি, গুড়, পাকা কলা, খেজুর, ইত্যাদিতে পাওয়া যায়। এছাড়া ছোলা, শাকসবজি এবং ফলমূলের উপরের খোসা, কচু, কাঁচা কলা, পাকা মিষ্টি ফল, ইত্যাদিতেও কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। [ইশরাত জাহান মিম]
সহায়িকা: সুলতানা, প্রফেসর রাফিকা এবং আরা, গাজী হোসনে, গার্হস্থ বিজ্ঞান, কাজল ব্রাদার্স লি., ঢাকা, পৃ: ২০৩, ২০৪।