গবেষণার পরিধি | Scope of Research

গবেষণা মূলত বিভিন্ন তথ্যানুসন্ধানের ক্ষেত্রে পরিচালিত হয়। তন্মধ্যে অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো হলো – ব্যবসায় গবেষণা, শিক্ষা গবেষণা, কৃষি গবেষণা, সামাজিক গবেষণা, প্রকৌশল গবেষণা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণা, জনসংখ্যা পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত গবেষণা, বাজারজাতকরণ গবেষণা, বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত গবেষণা, ইন্টারনেট সংক্রান্ত গবেষণা, সাহিত্য সংস্কৃতি সংক্রান্ত গবেষণা, আর্কাইভ গবেষণা এবং আইন সংক্রান্ত গবেষণা, প্রভৃতি। নিম্নে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ক্ষেত্র সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:

১। ব্যবসায় গবেষণা (business research): ব্যবসায় ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপকীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য যে তথ্যানুসন্ধান প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়, তাই ব্যবসায় গবেষণা। ব্যবসায় গবেষণা হলো ব্যবসায় সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধানের বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতির প্রয়োগ। ব্যবসায়ের সুযোগ ও সমস্যাসমূহ চিহ্নিতকরণ, ধারণার উদ্ভাবন ও মূল্যায়ন সম্পাদিত কার্যের মূল্যায়ন, ব্যবসায় প্রক্রিয়া অনুধাবন, পণ্যমূল্য নির্ধারণ, প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের কৌশল মূল্যায়ন, প্রবৃদ্ধি ও মুনাফা বিশ্লেষণ, ঋণ বিশ্লেষণ, ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবসায় গবেষণা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

২। শিক্ষা গবেষণা (education research): শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন শিক্ষাদান পদ্ধতি, শিক্ষণ প্রক্রিয়া (learnings process), শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ পদ্ধতি, শিক্ষার্থীদের আচরণগত দিক বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন পদ্ধতি, শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক দিকবিশ্লেষণ, শ্রেণিকক্ষের বিন্যাস, শিক্ষা পরিবেশ, ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান এবং দর্শন সংক্রান্ত গবেষণা কর্মগুলো ব্যাপক সহায়তা করে থাকে।

৩। সামাজিক গবেষণা (social research): সামাজিক গবেষণায় সমাজ জীবনের বিভিন্ন দিকের সঠিক চিত্র তুলে ধরা হয়। সামাজিক সমস্যা কী কারণে ঘটে? তা চিহ্নিত করতে সামাজিক গবেষণা সহায়তা করে। একটি সমস্যার কারণ, সমস্যার বিশ্লেষণ কীভাবে সমাধান করা যায়, এমনকি সমস্যা সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভাব জানার জন্যও সামাজিক গবেষণা সহায়তা করে। সামাজিক গবেষণায় বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা, যাচাই বাছাই ও বিশ্লেষণ করে একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং এ সিদ্ধান্ত কমবেশি সার্বজনীন (universal) হয়। সামাজিক গবেষণায় মূলত মানুষের আচরণগত দিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়। এক্ষেত্রে মানবীয় আচরণ সংক্রান্ত সমস্যা চিহ্নিতকরণ, বিচার বিশ্লেষণ, অনুধাবন, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ, আচরণ মূল্যায়ন, সামাজিক গতিবিধি অনুমান, ইত্যাদি বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান করা হয়। সামাজিক স্তর (social stratification) ও শ্রেণিবৈষম্যের কারণ উদ্ঘাটন ও তা সীমিতকরণের ক্ষেত্রে সামাজিক গবেষণা এক বিরাট ভূমিকা পালন করে।

৪। কৃষি গবেষণা (agricultural research): কৃষি গবেষণা এক ধরনের বিশেষায়িত ও ফলিত গবেষণা। কৃষি ক্ষেত্রের গবেষণা ল্যাবরেটরি ও মাঠ পর্যায়ে হয়ে থাকে। মূলত শস্য উৎপাদন, বীজ উৎপাদন, ফিসারিজ, বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ উন্নয়ন, পশুপালন, ইত্যাদি ক্ষেত্রে কৃষি গবেষণা পরিচালনা করা হয়ে থাকে।

৫। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা গবেষণা (health and medical research): রাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য প্রণীত স্বাস্থ্যনীতি, স্বাস্থ্যসেবা আইন এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর এর বিষয়গুলো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের জন্য স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা গবেষণা করা হয়। এছাড়া রোগ প্রতিরোধ, দীর্ঘায়ু লাভ এবং তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা, মাতৃসেবা, শিশু চিকিৎসা, পুষ্টি, ইত্যাদি বিষয়ে চিকিৎসা গবেষণা পরিচালিত হয়ে থাকে।

৬। বাজারজাতকরণ গবেষণা (marketing research): বাজারজাতকরণ গবেষণা হলো বাজারজাতকরণ সংক্রান্ত সমস্যাসমূহ চিহ্নিতকরণ, সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যসংগ্রহ এবং তা বিশ্লেষণের সাথে সম্পর্কিত বিষয়ের রীতিবদ্ধ ও উদ্দেশ্যমূলক কার্যক্রম। এ গবেষণার মুখ্য উদ্দেশ্য হলো বাজারজাতকরণ সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা, বিশ্লেষণ করা এবং সেগুলো সমাধান করা। এর মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বাজারজাতকরণের সুযোগ ও সমস্যাগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়। বাজারজাতকরণের সকল ক্ষেত্র এর আওতাভুক্ত। যেমন- পণ্য গবেষণা, মোড়কীকরণ গবেষণা, মূল্য গবেষণা, বাজার গবেষণা, বিক্রয় গবেষণা, প্রমিতকরণ, পর্যায়িতকরণ গবেষণা, ইত্যাদি।

পরিশেষে বলা যায়, গবেষণার আওতা অত্যন্ত ব্যাপক। তথাপি উপর্যুক্ত, ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করা হয়েছে। যাতে করে গবেষকগণ একটু ধারণা পেতে পারেন। [শারমিন জাহান সায়মা]


সহায়িকা: আলাউদ্দিন, প্রফেসর ড. মোঃ; উদ্দীন, প্রফেসর ড. মোঃ সেরাজ; আতিকুজ্জামান, এম. এম.; প্রধান, মোঃ সাইফুল্লাহ; (জানুয়ারি, ২০১৯); ব্যবসায় গবেষণা Business Research; গ্রন্থ কুটি: ঢাকা; পৃষ্ঠা-৬।


Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *