গবেষণায় নমুনা ও নমুনায়ন | Sample & Sampling in Research
নমুনা [Sample] বলতে সাধারণত যে কোন গবেষণায় তথ্য সংগ্রহের জন্য পরিচালিত সমীক্ষায় (study) বিবেচ্য তথ্যবিশ্বের (information universe) বা সমগ্রকের (population) প্রতিনিধিত্বকারী তথ্য বা অংশকে বুঝায়। অর্থাৎ তথ্যবিশ্বের বা সমগ্রকের কোন বৈশিষ্ট্যের পরিমাপ প্রাক্কলন করার জন্য তথ্যবিশ্ব বা সমগ্রক থেকে দৈবচয়িতভাবে (randomly) প্রতিনিধিত্বকারী তথ্য বা অংশ নির্বাচন করা হয়। যেমন – বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার সকল মানুষের বয়স হল তথ্যবিশ্ব বা সমগ্রক। গবেষণা কাজে জনসংখ্যার গড় বয়স বের করতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রতিনিধিত্বকারী অংশ হিসেবে বাংলাদেশের বড় বড় কয়েকটি জেলা থেকে নির্বাচিত মানুষের বয়সের তথ্য সংগ্রহ করা হল। এভাবে তথ্যবিশ্ব বা সমগ্রক থেকে প্রতিনিধিত্বকারী (representative) হিসেবে নির্বাচিত এবং সংগৃহীত তথ্য বা অংশটিকে নমুনা (sample) বলে। সূতরাং নমুনা হল তথ্যবিশ্বের এবং সমগ্রকের প্রতিনিধিত্বশীল অংশ। এ প্রতিনিধিত্বশীল অংশের উপর ভিত্তি করে যে কোন গবেষক একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন।
নমুনায়ন [Sampling] বলতে সাধারণত তথ্যবিশ্ব বা সমগ্রক থেকে নমুনা সংগ্রহের প্রক্রিয়া বা পদ্ধতিকে বুঝায়। অর্থাৎ গবেষণার প্রয়োজনে যে কোন গবেষক বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি অনুসরণ করে তথ্যবিশ্ব বা সমগ্রক থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বকারী তথ্য বা অংশটি সংগ্রহ করে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন।
উত্তম নমুনায়ন [Best Sampling] হল গবেষণা কাজ পরিচালনার জন্য তথ্যবিশ্ব বা সমগ্রক থেকে এমন প্রক্রিয়ায় বা পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহ করাকে বুঝায়, যা পরবর্তীতে গবেষণাকে সঠিক তথ্য প্রদান করতে সক্ষম হয়।
নিম্নে উত্তম নমুনায়নের কতিপয় বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হল:
ক) গবেষণার উদ্দেশ্য পূরণে এবং নির্ভূল ফলাফলের জন্য নমুনায়নের মাধ্যমে প্রাপ্ত নমুনাতে তথ্যবিশ্ব বা সমগ্রকের নির্ভরযােগ্য এবং পক্ষপাতহীন চিত্র প্রকাশ করতে হয়।
খ) নমুনাকে সংজ্ঞায়িত করার সময় খেয়াল রাখতে হয়, যেন তথ্যবিশ্বের বা সমগ্রকের কোন কোন উপাদান নেয়া হয়েছে কিংবা কোন কোন উপাদান বাদ পড়েছে, সে সম্পর্কে কোন ধরনের প্রশ্ন না আসে।
গ) নমুনায়ন পদ্ধতি এমনভাবে নির্বাচন করতে হয়, যেন প্রাপ্ত অর্থ বাজেট এবং সময়ের মধ্যে প্রত্যাশিত তথ্যসমূহ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়।
ঘ) সংগৃহীত নমুনার যথার্থতা মূল্যায়ন (evaluation) করার সুযোগ থাকতে হয়।
ঙ) সংগৃহীত নমুনার প্রত্যাশিত ভুলের বহিঃসীমা নির্ধারণ সম্ভাবনার (probability/feasibility) নিয়ম অনুসারে হতে হয়।
চ) নমুনার এককসমূহের সংগ্রহ পদ্ধতি যতটুকু সম্ভব সহজ হতে হয়, এর ফলে প্রতিটি একক নমুনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাব্যতা প্রায় সমান থাকে।
ছ) সংগৃহীত নমুনা অবশ্যই সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের জন্য পর্যাপ্ত হওয়া প্রয়োজন। এবং
জ) সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে নমুনা যেন অত্যাধিক না হয়, সে দিকেও লক্ষ্য রাখতে হয়।
নমুনা ভ্রান্তি [Sample Error]: নমুনায়নের মাধ্যমে তথ্যবিশ্ব বা সমগ্রকের কোন ধ্রুবকের (parameter) মান প্রাক্কলন করার জন্য তথ্যবিশ্ব বা সমগ্রক থেকে প্রতিনিধিত্বকারী অংশ বা নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এ প্রতিনিধিত্বকারী অংশ বা নমুনা থেকে তথ্যবিশ্বের বা সমগ্রকের বিবেচ্য বিষয় বা ধ্রুবকের (parameter) প্রাক্কলন করা হয়। তবে স্বল্প আকার নমুনায়ন, ভুল পদ্ধতি নির্বাচন, অপ্রতিনিধিত্বশীল নমুনা সংগ্রহ প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে কখন, কখন সমগ্রকের ধ্রুবকের (parameter) এবং নমুনার প্রাক্কলিত ধ্রুবকের (parameter) মধ্যে পরিমাণগত কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এ পার্থক্যকে নমুনা বিচ্যুতি বা নমুনা ভ্রান্তি বলে। একে “SE” দ্বারা প্রকাশ করা হয়। [মো: শাহীন আলম]
সহায়িকা:
১. Kathari, C.R., Research Methodology, methods and Techniques, 2015, New Age International (P) Ltd, New Delhi, India.
২. বাকী, আবদুল, ভুবনকোষ, ২০১৩, সুজনেষু প্রকাশনী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ১৪১।