দ্রাঘিমারেখার ব্যবহার: যে কোন স্থান-দেশের সময়ের পার্থক্য নির্ণয়
পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে ৩৬০টি কাল্পনিক রেখা দিয়ে ভাগ করা হয়েছে। উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু সংযুক্ত এ প্রতিটি কাল্পনিক রেখাকে দ্রাঘিমারেখা [Longitude] বলা হয় এবং এ রেখাসমূহের একক হল ডিগ্রি (x০)। যেমন- ০০, ১৫০, ৩০০, ৬০০ দ্রাঘিমারেখা………। যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের অদূরে অবস্থিত গ্রিনিচ শহরের মান মন্দির বরাবর পৃথিবীর ০০ দ্রাঘিমারেখা বা মূল মধ্যরেখা ধরা হয়েছে।
কাল্পনিক ৩৬০টি বা ৩৬০০ দ্রাঘিমারেখাকে মূল মধ্যরেখা থেকে পূর্ব দিকে ১৮০০ এবং পশ্চিম দিকে ১৮০০ ভাগ করা হয়েছে। আমরা জানি,
পৃথিবী তার নিজ অক্ষের ৩৬০০ পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একবার ঘুরে আসে। এ হিসেবে ৩৬০০ ঘুরে আসতে পৃথিবীর সময় লাগে ২৪ ঘণ্টা বা ২৪ ঘন্টা x ৬০ মিনিট = ১৪৪০ মিনিট। এ ১৪৪০ মিনিটকে ৩৬০০ দিয়ে ভাগ করা হলে পাই [১৪৪০ ÷ ৩৬০] = ৪ মিনিট। অর্থাৎ প্রতি (x০) ডিগ্রি দ্রাঘিমারেখার পার্থক্যের বা দূরত্বের জন্য সময় লাগে ৪ মিনিট। আবার, দ্রাঘিমারেখার প্রতি (x০) ডিগ্রিকে ৬০ মিনিটে ভাগ করা হয়। দ্রাঘিমারেখার প্রতি মিনিট দূরত্বের জন্য সময় লাগে ৪ সেকেন্ড। আবার, দ্রাঘিমারেখার প্রতি মিনিটকে ৬০ সেকেন্ডে ভাগ করা হয়। এখানে আমাদের জেনে রাখা ভাল যে,
দ্রাঘিমারেখার দূরত্বের মিনিট ও ঘড়ির সময়ের মিনিট একই বিষয় নয়। দ্রাঘিমারেখার দূরত্বের প্রতি (x০) ডিগ্রি বা ৬০ মিনিটের জন্য সময় লাগে ৬০ মিনিট x ৪ সেকেন্ড = ২৪০ সেকেন্ড বা ৪ মিনিট।
পৃথিবী নিজ অক্ষে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরার কারণে ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়ে পূর্বদিকের স্থান বা দেশগুলোতে আগে দিন হয় এবং পশ্চিমদিকের স্থান বা দেশগুলোতে পরে দিন হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাংলাদেশের পূর্ব দিকে অবস্থিত ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্যে এবং মিয়ানমারে আগে সকাল হয় এবং বাংলাদেশে তারপরে সকাল হয়। পশ্চিমে অবস্থিত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বাংলাদেশের পরে সকাল হয়। আবার বাংলাদেশের ঢাকা জেলার পূর্ব দিকে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ জেলায় আগে সকাল হয় এবং ঢাকায় তারপরে সকাল হয়। পশ্চিমে অবস্থিত মানিকগঞ্জ জেলায় ঢাকার পরে সকাল হয়।
উপর্যুক্ত তথ্য-উপাত্তসমূহের ভিত্তিতে যে কোন স্থান বা দেশের সময়ের পার্থক্য নির্ণয় করা যায়। বাংলাদেশের ঢাকা ও কুমিল্লা শহরকে বিবেচনায় নিয়ে নিম্নে কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে যে কোন স্থান বা দেশের সময়ের পার্থক্য নির্ণয় করার নিয়ম বা পদ্ধতি তুলে ধরা হল।
উদারহরণ-১: কুমিল্লা জেলা শহরের দ্রাঘিমা ৯০০ ২৫’ পূর্ব এবং ঢাকা শহরের দ্রাঘিমা ৯১০ ১০’ পূর্ব হলে ঢাকা শহর ও কুমিল্লা জেলা শহরের দ্রাঘিমার পার্থক্য কত এবং কুমিল্লা জেলা শহরে যখন ভোর ৬টা ৩ মিনিট তখন ঢাকা শহরের স্থানীয় সময় কত?
ঢাকা শহর ও কুমিল্লা জেলা শহরের দ্রাঘিমার পার্থক্য = ৯১০ ১০’ – ৯০০ ২৫’ = ০০ ৪৫’
∴ ঢাকা শহর ও কুমিল্লা জেলা শহরের দ্রাঘিমার পার্থক্য বা ব্যবধান = ০০ ৪৫’।
ঢাকা শহর থেকে কুমিল্লা জেলা শহরের সময়ের পার্থক্য বা ব্যবধান = ০০৪৫’
= (০ × ৪) মিনিট + (৪৫ × ৪) সেকেন্ড [যেহেতু, দ্রাঘিমার প্রতি (x০) ডিগ্রির পার্থক্যের জন্য সময় = ৪ মিনিট এবং প্রতি মিনিটের জন্য সময় = ৪ সেকেন্ড।]
= ০ মিনিট + ১৮০ সেকেন্ড
= ৩ মিনিট [যেহেতু ১ মিনিট = ৬০ সেকেন্ড]
= ৩ মিনিট
∴ ঢাকা শহর ও কুমিল্লা জেলা শহরের সময়ের পার্থক্য বা ব্যবধান = ৩ মিনিট।
উল্লেখিত ঢাকা শহরের দ্রাঘিমা ৯০০ ২৫’ পূর্ব ও কুমিল্লা জেলা শহরের দ্রাঘিমা ৯১০ ১০’ পূর্ব দেখে বুঝা যায় যে, ঢাকা কুমিল্লা জেলা শহরের পশ্চিমে অবস্থিত। তাই কুমিল্লার স্থানীয় সময় থেকে ৩ মিনিট বাদ দিতে হবে।
∴ ঢাকা শহরের স্থানীয় সময় হবে = কুমিল্লা জেলা শহরের স্থানীয় সময় – ঢাকা শহর ও কুমিল্লা জেলা শহরের সময়ের পার্থক্য
= ভোর ৬টা ৩ মিনিট – ৩ মিনিট
= ভোর ৬টা।
∴ ঢাকা শহরের স্থানীয় সময় = ভোর ৬টা।
উদারহরণ-২: ঢাকা থেকে পূর্ব দিকে অবস্থিত কুমিল্লা জেলা শহরের দ্রাঘিমার পার্থক্য ০০ ৪৫’। ঢাকা শহরের স্থানীয় সময় ভোর ৬:০০ টা হলে সে সময় কুমিল্লা জেলা শহরের স্থানীয় সময় কত এবং ঢাকা ও কুমিল্লা জেলা শহরের সময়ের পার্থক্য বা ব্যবধান কত?
ঢাকা থেকে কুমিল্লা জেলা শহরের ব্যবধান = ০০ ৪৫’
= (০ × ৪) মিনিট + (৪৫ × ৪) সেকেন্ড [যেহেতু দ্রাঘিমার প্রতি ডিগ্রির পার্থক্যের জন্য সময় = ৪ মিনিট এবং প্রতি মিনিট দূরত্বের জন্য সময় = ৪ সেকেন্ড।]
= ০ মিনিট + ১৮০ সেকেন্ড
= ৩ মিনিট [যেহেতু ১ মিনিট = ৬০ সেকেন্ড]
∴ ঢাকা ও কুমিল্লা জেলা শহরের সময়ের পার্থক্য বা ব্যবধান = ৩ মিনিট।
কুমিল্লা জেলা শহরের সময় = ঢাকার সময় + সময়ের পার্থক্য বা ব্যবধান [এখানে কুমিল্লা জেলা শহরের স্থানীয় সময় নির্ণয় করতে হবে, কুমিল্লা ঢাকার পূর্ব দিকে অবস্থিত। কুমিল্লা জেলা শহরের স্থানীয় সময় ঢাকার চেয়ে বেশি হবে, যেহেতু পূর্ব দিকে সূর্য আগে উদিত হয়েছে। ঢাকার সময়ের সাথে ৩ মিনিট যোগ করতে হবে।]
= ৬:০০ টা + ৩ মিনিট
= ৬টা ৩ মিনিট।
∴ কুমিল্লা জেলা শহরের স্থানীয় সময় = ৬টা ৩ মিনিট।
উদারহরণ-৩: ঢাকা শহর ও কুমিল্লা জেলা শহরের সময়ের পার্থক্য বা ব্যবধান ৩ মিনিট। ঢাকা শহরের দ্রাঘিমা ৯০০ ২৫’ পূর্ব হলে কুমিল্লা জেলা শহরের দ্রাঘিমার মান কত?
ঢাকা শহর ও কুমিল্লা জেলা শহরের সময়ের পার্থক্য বা ব্যবধান ৩ মিনিট
[দ্রাঘিমার প্রতি ৪ মিনিট = ১০ এবং প্রতি ৪ সেকেন্ড = ১ মিনিট অনুযায়ী হিসেব করে নিম্নরূপ পাওয়া যায়।]
= ৩ মিনিট
= (৩ x ৬০) সেকেন্ড
=০০ + ১৮০ সেকেন্ড
= ০০ + (১৮০ ÷ ৪) মিনিট [যেহেতু দ্রাঘিমার প্রতি ৪ মিনিট = ১০ ও প্রতি ৪ সেকেন্ড = ১ মিনিট]]
= ০০ + ৪৫ মিনিট
= ০০ ৪৫’
∴ ঢাকা শহর ও কুমিল্লা জেলা শহরের পার্থক্য বা ব্যবধান = ০০ ৪৫’ ।
কুমিল্লা জেলা শহরের দ্রাঘিমার মান = ঢাকা শহরের দ্রাঘিমা + ঢাকা শহর ও কুমিল্লা জেলা শহরের পার্থক্য
= ৯০০ ২৫’ পূর্ব + ০০ ৪৫’
= ৯১০ ১০’ পূর্ব
∴ কুমিল্লা জেলা শহরের দ্রাঘিমার মান = ৯১০ ১০’ পূর্ব। [সংকলিত] [মো: শাহীন আলম]
পহেলা জানুয়ারি ২০১৬ কলকাতায় অষ্টশি (৮৮ ডিগ্রী ৩০ মিনিট পূর্ব) যখন সকাল আটটা তখন নিউ ইয়র্কে (৭৪ ডিগ্রী পশ্চিম) সময় ও তারিখ কি হবে ?
পহেলা জানুয়ারি ২০১৬ কলকাতায় অষ্টাশি (৮৮ ডিগ্রী ৩০ মিনিট পূর্ব) যখন সকাল ৮টা তখন নিউইয়র্কে (৭৪ ডিগ্রী পশ্চিম) ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখ রাত ৯:১০টা (9:10 PM)।
ব্যাখ্যা:
১ ডিগ্রী দ্রাঘিমায় সময়ের ব্যবধান = ৪ মিনিট
৮৮ ডিগ্রী ৩০ মিনিট + ৭৪ ডিগ্রী = ১৬২ ডিগ্রী ৩০ মিনিট।
১৬২ ডিগ্রী দ্রাঘিমায় সময়ের ব্যবধান = (১৬২ x ৪) = ৬৪৮ মিনিট।
অতএব, ৬৪৮ মিনিট = ১০ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট।
অবশিষ্ট ৩০ মিনিট দ্রাঘিমায় সময়ের ব্যবধান = (৩০ x ৪) = ১২০ সেকেণ্ড, [যেহেতু ১ মিনিট দ্রাঘিমায় সময়ের ব্যবধান = ৪ সেকেণ্ড]
অতএব, ১২০ সেকেণ্ড = ২ মিনিট।
মোট সময়ের পার্থক্য = (১০ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট + ২ মিনিট) = ১০ ঘণ্টা ৫০ মিনিট।
যেহেতু নিউইয়র্ক হল কলকাতার পশ্চিমে, সুতরায় নিউইয়র্কের অবস্থান কলকাতার পিছনে।
অতএব, নিউইয়র্কে সময় = (সকাল ৮টা – ১০ ঘণ্টা ৫০ মিনিট) = ৯:১০টা (আগের রাত)।
সুতরাং নিউইয়র্কে (৭৪ ডিগ্রী পশ্চিম) ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখ রাত ৯:১০টা (9:10 PM)।
ঢাকা ও রিয়াদের মধ্যে সময়ের পার্থক্য ৩ ঘন্টা হলে দ্রাঘিমার পার্থক্য কত?
ঢাকা ও রিয়াদের মধ্যে সময়ের পার্থক্য ৩ ঘন্টা হলে দ্রাঘিমার পার্থক্য ৪৫ ডিগ্রি।
ব্যাখ্যা:
সম্পূর্ণ পৃথিবী (পশ্চিম থেকে পূর্ব) = ৩৬০ ডিগ্রি
৩৬০ ডিগ্রি (পৃথিবীর এক দিনে ঘূর্ণন) = ২৪ ঘণ্টা সময়
১ ঘণ্টা (৩৬০/২৪) = ১৫ ডিগ্রি দূরত্ব
অতএব, ৩ ঘণ্টা = (১৫ x ৩) = ৪৫ ডিগ্রি।