নড়াইল জমিদারদের প্রাচীন কীর্তি গোবিন্দ মন্দির

গোবিন্দ মন্দির

 অবস্থান | Location

নড়াইল জমিদারদের প্রাচীন কীর্তি গোবিন্দ মন্দির নড়াইল জেলাধীন সদর উপজেলা শহরে অবস্থিত। নড়াইল সরকারি শিশু পরিবারের প্রাচীর ঘেরা আঙ্গিনায় এ মন্দিরটির অবস্থান। এ মন্দিরটির ভূ-স্থানাঙ্ক (geo-coordinate) হল 23°09’38.9″N 89°29’38.9″E (23.160806, 89.494139)।

স্থাপত‌্যিক বিবরণ | Architectural Description

নড়াইল জমিদারদের প্রাচীন এ গোবিন্দ মন্দির বর্গাকার পরিকল্পনায় নির্মিত। নড়াইল সরকারি শিশু পরিবারের আঙ্গিনায় অবস্থিত জলসা ঘর থেকে প্রায় ১০ মিটার উত্তর পাশে এ প্রাচীন মন্দিরটির অবস্থান। পূর্বমুখী এ মন্দিরের দৈর্ঘ্য ৪.২৭ মিটার। মন্দিরটির পূর্ব ও পশ্চিম দেয়ালে ১টি করে প্রবেশপথ রয়েছে। অর্ধবৃত্তাকার খিলানযুক্ত প্রবেশপথগুলোর উচ্চতা প্রায়ই একই রকম। ইট ও চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত এ মন্দিরের দেয়ালগুলো ৬৮ সেন্টিমিটার চওড়া। মন্দিরের অভ্যন্তরে উত্তর এবং দক্ষিণ দেয়ালে একই পরিমাপের ৩টি করে কুলঙ্গি রয়েছে। মন্দিরের সামনের (পূর্ব পাশের) দেয়ালটি লতা-পাতা, জীব-জন্তু এবং জালিকা ও জ্যামিতিক নকশা সজ্জিত রয়েছে। মন্দিরের উপরে রয়েছে আটচালা ছাদ। আটচালাবিশিষ্ট এ মন্দিরের ছাদের কার্ণিসে রয়েছে সাপের ফণা, লতা-পাতাসহ বিভিন্ন ধরনের জালিকা নকশা। মন্দিরটির অপর ৩টি দেয়ালে উল্লেখযোগ্য কোন অলংকরণ নেই।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট | Historical Background

‘নড়াইল জমিদারদের পূর্বপুরুষ রূপরাম দত্তের পুত্র কালীশংকর রায় প্রতাপশালী নড়াইল জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা। কালীশংকর রায় নাটোরের জমিদার রাণী ভবানীর অনুগ্রহে নড়াইলে জমিদারির সূত্রপাত করেন। কালীশংকর নড়াইলের আদালতপুরের তালুক প্রথম ইজারা নেন। এরপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তকালে তিনি তার জমিদারির সীমা আরও বৃদ্ধি করেন। অত্যাচার ও শোষণ করলেও নড়াইল জমিদারগণ কিছু জনকল্যাণমূলক কাজও করেছিলেন। নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ, নড়াইল কলেজিয়েট স্কুল, রাস্তাঘাট প্রভৃতি নড়াইল জমিদারদেরই প্রতিষ্ঠিত।
‘নড়াইল জমিদার পরিবারের অন্যতম ব্যক্তিত্ব রাম রতন রায়ের প্রত্যক্ষ উদ্যোগে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ, দাতব্য চিকিৎসালয় প্রভৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫১ সালে বাংলাদেশে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হলে জমিদারদের বংশধরেরা দেশত্যাগ করে ভারতের কলকাতায় চলে যান। আর নড়াইল শহরের বিশাল বিশাল প্রাচীন প্রাসাদ, নাট্যমঞ্চ, কাচারি, গোবিন্দ মন্দিরসহ অন্যান্য মন্দির, মঠ, চিত্রা নদীর তীরবর্তী বাঁধাঘাট, ছোট-বড় পুকুর, দিঘি ও ফলের বাগান প্রভৃতি হল নড়াইল জমিদারদের নির্মিত কীর্তি।’

লেখক: মো. শাহীন আলম  

তথ্যসূত্র :
১. হোসাইন, মহসিন, নড়াইল জেলা সমীক্ষা ও স্থান নাম, (ঢাকা: বাংলা একাডেমী, মে ২০০১), পৃষ্ঠা-৫৪ – ৫৬।
২. নড়াইল জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ প্রতিবেদন, ২০১৭, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, ঢাকা, পৃষ্ঠা ২৯ – ৩৩।
৩. প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, বাংলাদেশ।


Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *