নেটওয়ার্ক টপোলজি | Network Topology
কম্পিউটার নেটওয়ার্কে একটি কম্পিউটার হতে অপর কম্পিউটারের সাথে Physical ও Logical সংযোগ ব্যবস্থাকেই নেটওয়ার্ক টপোলজি (network topology) বলে। কম্পিউটার নেটওয়ার্কে অনেকগুলো কম্পিউটার একসাথে জুড়ে দেয়া হয়, যেন একটি কম্পিউটার অন্য কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। জুড়ে দেয়া কম্পিউটারগুলোর অবস্থানের উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কের প্রকারভেদ: বিভিন্ন প্রকারের কম্পিউটার নেটওয়ার্কগুলো হলো:
ক) PAN (Personal Area Network);
খ) LAN (Local Area Network);
গ) MAN (Metropolitan Area Network); এবং
ঘ) WAN (Wide Area Network)।

ক) PAN (Personal Area Network): ব্যক্তিগত পর্যায়ে যে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয় তাকে PAN (Personal Area Network) বলে। যেমন- ব্লু-টু এর মাধ্যমে।
খ) LAN (Local Area Network): স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়, সে সবকেই LAN (Local Area Network) বলা হয় ।
গ) MAN (Metropolitan Area Network): সাধারণত একটি শহরের মধ্যে যে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয় তাকে MAN (Metropolitan Area Network) বলা হয়।
ঘ) WAN (Wide Area Network): দেশ জুড়ে বা পৃথিবী জুড়ে যে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয় তাকে WAN (Wide Area Network) বলা হয়।
নেটওয়ার্ক টপোলজি: কম্পিউটার নেটওয়ার্কের অন্তর্গত কম্পিউটারগুলো জুড়ে দেয়ার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিকে বলা হয় নেটওয়ার্ক টপোলজি। নেটওয়ার্ক টপোলজি মূলত ছয় ধরনের হয়ে থাকে। যেমন-
১. বাস টপোলজি (bus topology);
২. রিং টপোলজি (ring topology);
৩. স্টার টপোলজি (star topology);
৪. ট্রি টপোলজি (tree topology);
৫. মেশ টপোলজি (completely connected topology) এবং
৬. হাইব্রিড টপোলজি (hybrid topology)।
১. বাস টপোলজি (bus topology): বাস টপোলজিতে একটা মূল লাইনের সাথে সবগুলো কম্পিউটারকে জুড়ে দেয়া হয়। বাস টপোলজিতে কোনো একটা কম্পিউটার যদি অন্য কোন কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করতে চায়, তাহলে সব কম্পিউটারের কাছেই সেই তথ্য পৌঁছে যায়। তবে যার সাথে যোগাযোগ করার কথা কেবল সেই কম্পিউটারটি তথ্য গ্রহণ করে। অন্য সব কম্পিউটার তথ্যগুলোকে উপেক্ষা করে। বাস টপোলজিতে মূল বাস / ব্যাকবোন নষ্ট হয়ে গেলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক অকেজো হয়ে যায়।
২. রিং টপোলজি (ring topology): যে নেটওয়ার্ক সবগুলো কম্পিউটারকে ক্যাবলের মাধ্যমে সংযুক্ত করে একটি রিং বা লুপের মত সৃষ্টি করে তাকে রিং টপোলজি বলে। রিং টপোলজি প্রত্যেকটা কম্পিউটার অন্য দুটো কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকে। এই টপোলজিতে প্রত্যেকটা কম্পিউটার অন্য দুটো কম্পিউটারের সাথে যুক্ত। এই টপোলজিতে একটা নির্দিষ্ট দিকে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে তথ্য যায়। তবে রিং টপোলজিতে কম্পিউটারগুলোকে বৃত্তাকারে থাকার প্রয়োজন নেই, সেগুলো এলোমেলোভাবেও থাকতে পারে। তবে সব সময়ই কম্পিউটারগুলোর মাঝে বৃত্তাকার যোগাযোগ থাকলে সেটি রিং টপোলজি। এক্ষেত্রে কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক অচল হয়ে যায়।
৩. স্টার টপোলজি (star topology): যে নেটওয়ার্কে সবগুলো কম্পিউটার যদি একটি কেন্দ্রীয় হাব (hub) বা সুইচ (switch) এর সাথে যুক্ত থাকে, তাহলে সেটিকে স্টার টপোলজি বলে। এটি তুলনামূলকভাবে একটি সহজ টপোলজি এবং অনুমান করা যায়, কেউ যদি খুব তাড়াতাড়ি সহজে একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চায়, তাহলে সে স্টার টপোলজি ব্যবহার করতে পারে। এই টপোলজিতে একটি কম্পিউটার নষ্ট হলেও বাকি নেটওয়ার্ক সচল থাকে। কিন্তু কোনোভাবে কেন্দ্রীয় হাব বা সুইচ নষ্ট হলে পুরো নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়ে।
৪. ট্রি টপোলজি (tree topology): একাধিক হাব (hub) ব্যবহার করে সব কম্পিউটারকে একটি বিশেষ স্থানে সংযুক্ত করা হয়, যাকে রুট (root) বা সার্ভার (server) কম্পিউটার বলে। এ রুট (সার্ভার কম্পিউটার) ও শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট নেটওয়ার্ককে ট্রি নেটওয়ার্ক টপোলজি বলে।
রুট হিসেবে সেখানে তাদের সংকেত পাঠানোর গতি বৃদ্ধির জন্য উচ্চ গতি সম্পন্ন সংযোগ দ্বারা সার্ভার কম্পিউটারের সাথে যুক্ত করা হয়। মূলত স্টার টপোলজির সম্প্রসারিত নেটওয়ার্কই হলো ট্রি টপোলজি। ট্রি সংগঠন এক বা একাধিক স্তরের কম্পিউটার হোস্ট কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকে। দ্বিতীয় স্তরের কম্পিউটারের সাথে আবার তৃতীয় স্তরের কম্পিউটার যুক্ত থাকে। দ্বিতীয় স্তরের কম্পিউটারগুলো তৃতীয় স্তরের কম্পিউটারের হোস্ট হিসেবে কাজ করে। হোস্ট হিসেবে সুইচ বা হাব ব্যবহার করা হয়। এটা মূলত ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ক-এর জন্য ব্যবহৃত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের জন্য ট্রি টপোলজি উন্নত এবং খরচ একটু বেশি।
৫. মেশ টপোলজি (completely connected topology): মেশ টপোলজিতে কম্পিউটারগুলো একটি আরেকটির সাথে যুক্ত থাকে এবং একাধিক পথে যুক্ত হতে পারে। এখানে কম্পিউটাগুলো কেবল যে অন্য কম্পিউটার থেকে তথ্য নেয় তা কিন্তু নয়, বরং সেটি নেটওয়ার্কের অন্য কম্পিউটারের মাঝে বিতরণও করতে পারে। যদি এমন হয় যে একটি নেটওয়ার্কের প্রতিটি কম্পিউটারই সরাসরি নেটওয়ার্কভুক্ত অন্য সবগুলো কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকে, তাহলে সেটিকে বলে কমপ্লিট মেশ (Complete mesh)।
৬. হাইব্রিড টপোলজি (hybrid topology): স্টার, রিং, বাস, ইত্যাদি টপোলজির সমন্বয়ে যে নেটওয়ার্ক গঠিত হয় তাকে হাইব্রিড টপোলজি বলা হয়। ইন্টারনেট একটি হাইব্রিড টপোলজি। এখানে, সব ধরনের টপোলজির নেটওয়ার্ক সংযুক্ত থাকে। হাইব্রিড টপোলজিতে নেটওয়ার্কের সমস্যা নির্ণয় করা সহজ। প্রয়োজন অনুযায়ী নেটওয়ার্ককে বৃদ্ধি করা যায়। [ইশরাত জাহান মিম]
তথ্যসূত্র:
১। দাস, প্রকাশ কুমার এবং হাসান, প্রকৌ. মোঃ মেহেদী, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি, লেকচার পাবলিকেশন লি., ঢাকা পৃ: ১৪০-১৪৩।
২। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অষ্টম শ্রেণি, ২০২০, জাতীয় শিক্ষাক্রমও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, পৃ: ২১ ২২।