পরাগায়ন কাকে বলে ও পরাগায়ন এর প্রকারভেদ

জীবের ক্ষেত্রে জন্ম এবং মৃত্যু অবধারিত। পৃথিবীতে একদিকে যেমন জীবের মৃত্যু ঘটছে, অপরদিকে তেমনি প্রজননের মাধ্যমে জীবের জন্ম হচ্ছে। প্রজনন হচ্ছে এমন একটি শারীরতত্ত্বীয় কার্যক্রম, যার মাধ্যমে জীব তার প্রতিরূপ সৃষ্টি করে ভবিষ্যৎ বংশধর রেখে যায়। এ প্রজননের প্রধান দুটি ধাপ হলো (১) পরাগায়ন ও (২) নিষেক। নিচে পরাগায়ন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
পরাগায়ন: পরাগায়ন (pollination) হলো ফুল এবং বীজ উৎপাদন প্রক্রিয়ার পূর্বশর্ত। পরাগায়নকে পরাগ সংযোগও বলা হয়। ফুলের পরাগধানী থেকে পরাগরেণুর একই ফুলে অথবা একই জাতের অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হওয়াকে পরাগায়ন বলে। পরাগায়ন দুধরনের। যেমন (ক) স্ব-পরাগায়ন এবং (খ) পর-পরাগায়ন।
ক) স্ব-পরাগায়ন: একই ফুলে বা একই গাছের ভিন্ন দুটি ফুলের মধ্যে যখন পরাগায়ন ঘটে, তখন তাকে স্ব-পরাগায়ন বলে। সরিষা, ধুতুরা, ইত্যাদি উদ্ভিদে স্ব-পরাগায়ন ঘটে। স্ব-পরাগায়নের ফলে পরাগরেণুর অপচয় কম হয়। এ পরাগায়নের জন্য বাহকের উপর নির্ভর করতে হয় না এবং পরাগায়ন নিশ্চিত হয়। এর ফলে নতুন যে উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়, তাতে বৈশিষ্ট্যের কোনো পরিবর্তন আসে না এবং কোনো একটি প্রজাতির চরিত্রগত বিশুদ্ধতা বজায় থাকে। তবে স্ব-পরাগায়নে জিনগত বৈচিত্র্য কম থাকে। এ প্রক্রিয়া বীজ থেকে জন্ম নেয়া নতুন গাছের অভিযোজন ক্ষমতা কমে যায় এবং নিমেষেই প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটে।
খ) পর-পরাগায়ন: একই প্রজাতির দুটি ভিন্ন উদ্ভিদের ফুলের মধ্যে যখন পরাগ সংযোগ ঘটে, তখন তাকে পর-পরাগায়ন বলে। শিমুল, পেঁপে, ইত্যাদি গাছের ফুলে পর-পরাগায়ন হতে দেখা যায়। পর-পরাগায়নের ফলে নতুন চরিত্রের সৃষ্টি হয়, বীজের অংকুরোদগমের হার বৃদ্ধি পায়, বীজ অধিক জীবনী শক্তি সম্পন্ন হয় এবং নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয়। দুটি ভিন্ন গুণসম্পন্ন গাছের মধ্যে পরাগায়ন ঘটে, তাই এর ফলে যে বীজ উৎপন্ন হয়, তা নতুন গুণসম্পন্ন হয় এবং বীজ থেকে যে গাছ জন্মায় তা গুণসম্পন্ন হয়। এ কারণে এসব গাছে নতুন বৈচিত্র্যের সৃষ্টি হয়। তবে পর-পরাগায়ন বাহক নির্ভর প্রক্রিয়া হওয়ায় পরাগায়নের নিশ্চয়তা থাকে না, এতে প্রচুর পরাগরেণুর অপচয় ঘটে। ফলে প্রজাতির বিশুদ্ধতা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। [ইশরাত জাহান মিম]
সহায়িকা : জীববিজ্ঞান (নবম-দশম), বাংলাদেশ: জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, পৃষ্ঠা – ২৩৭।
পরাগায়ন কাকে বলে?
ছবি: পরাগায়ন।
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL