পৃথিবী গোলাকার : এ সম্পর্কে যুক্তিসঙ্গত সহজ প্রমাণ
গ্রীক দার্শনিক ও গণিতবিদ পীথাগোরাস ৫০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে পৃথিবী গোলাকার এ সম্পর্কে প্রথম বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত দেন। পীথাগোরাসের ছাত্র ফিলোলাস প্রথম জানান, পৃথিবী ঘুরছে। মূলত, পৃথিবী নিজ মেরুদণ্ডের উপর সব সময় নির্দিষ্ট গতিতে পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করছে। নিয়মিত পশ্চিম থেকে পূর্বে পৃথিবীর এ আবর্তনের ফলে কেন্দ্রাতিগ শক্তির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পৃথিবীর মধ্যভাগ বা নিরক্ষীয় প্রদেশ কিছুটা ফুলে উঠেছে।
চিত্র-১: পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে পৃথিবীর আবর্তন।
১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে মহাকাশ গবেষণা শুরু হবার আগে পৃথিবীর আকার সম্পর্কে মানুষের যে ধারণা ছিল, তা চিত্র-২ এ ভাঙ্গা রেখার (কমলা রং) সাহায্যে দেখান হয়েছে। ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের পর স্পুৎটনিক ও অন্যান্য উপগ্রহের সাহায্যে পৃথিবীর ছবি সংগ্রহ করা হয়। এরপর গাণিতিক হিসাবের মাধ্যমে বর্তমানে পৃথিবীর আকার সম্পর্কে ধারণা করা হয়। এ ধারণা উপর ভিত্তি করে চিত্র-২ এ সাবলীল বক্ররেখার (নীল রং) সাহায্যে দেখান হয়েছে।
চিত্র-২: ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের আগে ও পরে সৃষ্ট ধারণার উপর অঙ্কিত পৃথিবীর আকৃতি।
আধুনিক যুগে মানুষ মহাশূন্য বিজয়ের অভিযান পরিচালনা করছে। ২০ জুলাই, ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে নীল আর্মষ্ট্রং ও এডউইন অলড্রিন প্রথম চাঁদে অবতরণ করেন। এর আগে বিভিন্ন মহাশূন্য যান থেকে পৃথিবীর ছবি তুলে আনা হয়। এসব অভিযানের মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীর প্রকৃত আকার দেখতে পায়। টেলিভিশনের মাধ্যমে চাঁদের দিগন্তের উপর পৃথিবীর দৃশ্য সারা পৃথিবীর মানুষ উপভোগ করে। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের মত পৃথিবীও গোলাকার। কিন্তু মহাশূন্য থেকে নিজের চোখে পৃথিবীকে দেখার সুযোগ সকলের হয় না। তাই পৃথিবীর গোলাকৃতি সম্পর্কে জানতে প্রয়োজন যুক্তিগ্রাহ্য সহজ প্রমাণ । এরূপ কয়েকটি সহজ প্রমাণ নিচে তুলে ধরা হল-
১. সমুদ্র বা বড় হ্রদের তীরে দাঁড়িয়ে জাহাজের বন্দর বা তীর ত্যাগের দৃশ্য থেকে পৃথিবী বক্রতার প্রমাণ পাওয়া যায়। তীর থেকে অনেক দূরে দিগন্তে পৌছাবার সময় প্রথমে জাহাজের নিচের অংশ অদৃশ্য হয়। পরে ধারাবাহিকভাবে জাহাজটির মধ্যভাগ এবং সব শেষে মাস্তুল বা উপরের অংশসহ সম্পূর্ণ জাহাজটি অদৃশ্য হয়ে যায়। দেখে মনে হয়, জাহাজটি সমুদ্রের পানিতে ডুবে গেল। আবার দিগন্তের ওপাশ থেকে জাহাজটি যখন তীরের দিকে ফিরে আসে, তখন প্রথমে মাস্তুল বা উপরের অংশ দেখা যায়, পরে মধ্যভাগ এবং সব শেষে নিচের অংশসহ সম্পূর্ণ জাহাজটি দৃষ্টিগোচর হয়। আর এ থেকে নি:সন্দেহে বলা যায় যে, গোলাকার পৃথিবী-পৃষ্ঠের বক্রতার জন্যই এরূপ ঘটে থাকে।
২. ১৫১৯ থেকে ১৫২২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মোট ৪ বছরে বিখ্যাত নাবিক ম্যাগেলান পালতোলা জাহাজে পৃথিবী পরিভ্রমণ করেন। তিনি পৃথিবী পরিভ্রমণ করে আবার তাঁর ভ্রমণ শুরুর স্থানটিতে ফিরে আসেন। ম্যাগিলান পরিভ্রমণ করে তাঁর ভ্রমণ শুরুর স্থানটিতে ফিরে আসা কেবল পৃথিবী গোল আকৃতি হওয়ার কারণে সম্ভব হয়েছে। এ থেকেও প্রমাণিত হয় যে, পৃথিবী গোলাকার।
৩. বহু বৈমানিক একই দিকে বিমান চালনা করেন এবং পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে আবার যাত্রাস্থলে ফিরে আসেন। একই রূপ বিমান চালনা পৃথিবীর মেরুদ্বয়ের উপর দিয়ে পরিচালনা করা হয়। এসব বিমান চালনা থেকে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, পৃথিবী গোলাকার।
চিত্র-৩: চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদের উপরে পৃথিবীর গোলাকার ছায়া।
৪. চন্দ্রগ্রহণের সময়ে পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর পড়ে। আর এ ছায়ার দৃশ্য হল গোলাকার। সাধারণত গোলাকার বস্তুর ছায়া গোলাকার হয়। এ থেকেও প্রমাণিত হয় যে, পৃথিবী গোলাকার। [সংকলিত][মো. শাহীন আলম]