প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই বলতে কি বুঝায়?
কোন প্রতিষ্ঠান তার তহবিল (অর্থ) বিনিয়োগ করার জন্য প্রকল্পের বিভিন্ন রকমের বিচার-বিশ্লেষণ করে থাকে। বিচার-বিশ্লেষণ শেষে যে প্রকল্পটি সুবিধাজনক ও লাভজনক, তা প্রতিষ্ঠানটি গ্রহণ করে। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই (feasibility study of a project)। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইকে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষাও বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, প্রকল্পে বিনিয়োগ করার পূর্বে প্রকল্প বিচার-বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাকেই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই বলা হয়। এক্ষেত্রে অবশ্য নানারকম অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক, প্রাকৃতিক, ভৌগোলিক, বৈদেশিক পরিবেশ, আবহাওয়া, জলবায়ু, ইত্যাদি বিষয়াবলীকে বিবেচনায় আনতে হয়। কেননা এসব বিষয় প্রকল্পকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে থাকে। এসব বিষয় বিবেচনায় না আনা হলে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত যুক্তিযুক্ত হবে না। এর ফলে প্রতিষ্ঠানে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে, যা কখনও মঙ্গলজনক নয়। কোন প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগ করতে গেলে বা কোন নতুন প্রকল্প প্রতিষ্ঠিত করতে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য যে সব বিষয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হয়, সে সব বিষয় থেকে নিম্নে কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১. অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাই (feasibility study of financial position): অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাই বা পরীক্ষার জন্য নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হয়।
ক. প্রকল্পের মাধ্যমে যে গুণ বা মানের দ্রব্য উৎপাদিত হবে, দেশে ও বিদেশে তার চাহিদা কেমন।
খ. উৎপাদিত দ্রব্য সম্পর্কে ক্রেতাদের মনোভাব কেমন।
গ. বছরে কি পরিমাণ দ্রব্য বিক্রি হবে তা অনুমান করা।
ঘ. উৎপাদন খরচ সমজাতীয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কম হবে কিনা।
ঙ. প্রতিষ্ঠানটি কেমন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে।
উল্লেখিত এসব বিষয় বিবেচনা করে যদি দেখা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করলে অর্থনৈতিক দিক থেকে মালিক, প্রবর্তক ও দেশ সামগ্রিকভাবে লাভবান হবে, তবে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি গ্রহণ করা যেতে পারে।
২. বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মুনাফা অর্জনের সম্ভাব্যতা যাচাই (feasibility study of commercial based profit): প্রকল্প থেকে যেন প্রতি বছর ঈপ্সিত হারে মুনাফা অর্জন করা যায়, সে জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হয়।
ক. দেখতে হবে ঈপ্সিত মুনাফার চেয়ে মূলধনের ব্যয় কম কিনা।
খ. প্রকল্পের যন্ত্রপাতি দেশে পাওয়া যায় কি-না। দেশে পাওয়া না গেলে আমদানির জন্য বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যাবে কিনা।
গ. প্রকল্পের জমি, দালান, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য খরচ যেন আয়ের তুলনায় বেশি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা।
ঘ. প্রকল্পের জন্য পর্যাপ্ত কার্যকরী মূলধন পাওয়া যাবে কি-না।
ঙ. প্রকল্প থেকে কি পরিমাণ মুনাফা অর্জিত হবে তা বিশ্লেষণ করে দেখা।
উল্লেখিত এসব বিষয় বিবেচনা করে যদি দেখা যায়, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালনা করা লাভজনক, তবে প্রকল্পটি গ্রহণ করা যেতে পারে।
৩. শিল্প ও কারিগরি সম্ভাব্যতা যাচাই (feasibility study of intdustrial and technical aspect): প্রকল্পের শিল্প ও কারিগরি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হয়।
ক. সরকারে শিল্প ও বিনিয়োগ নীতিতে প্রস্তাবিত শিল্প অন্তর্ভুক্ত আছে কি-না।
খ. প্রকল্পটি স্থাপনে সরকারের নৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা পাওয়া যাবে কিনা।
গ. দেশে বিদ্যমান আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক সহযোগিতা দিবে কিনা।
ঘ.প্রকল্পটি দীর্ঘদিন টিকে থাকবে কিনা।
ঙ. উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী উন্নতমানের হবে কিনা।
চ. প্রকল্পের জন্য কাঁচামাল ও খুচরা যন্ত্রাংশ দেশে পাওয়া যাবে কিনা।
ছ. দক্ষ শ্রমিক ও তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা দেশে আছে কিনা।
জ. প্রকল্পের জন্য বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি ও পানি সরবরাহ পর্যাপ্ত কিনা।
উল্লেখিত এসব বিষয় বিবেচনা করে যদি সবকিছু ইতিবাচক হয়, তবে প্রকল্পটি গ্রহণ করা যেতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, এ প্রবন্ধে উল্লেখিত সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের বিষয়গুলো কতিপয় সাধারণ বিবেচ্য বিষয়। তবে প্রকল্পের ধরন বুঝে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের বিষয় কম বেশি ভিন্ন হতে পারে। যা হোক না কেন, প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিবেচনা করে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে যদি প্রকল্পটি সুবিধাজনক ও লাভজনক মনে হয়, তবে সে প্রকল্প গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা যেতে পারে। [শারমিন জাহান সায়মা]
সহায়িকা: রাসুল, ড. মোঃ সিরাজুর এবং ইসলাম, মোঃ নজরুল, প্রকল্প পরিকল্পনা, (২০১৬/২০১৭), কমার্স পাবলিকেশন্স, ঢাকা, পৃষ্ঠা ৯৮।