প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধানে ব্যবহৃত কতিপয় যন্ত্রপাতির পরিচিতি ও ব্যবহার
মানব সভ্যতার বহু সাংস্কৃতিক নিদর্শন বা প্রত্নবস্তু সময়ের পরিক্রমায় ভূ-গর্ভে গুপ্ত (hidden) হয়ে গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঐতিহাসিক বা প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বের বিবেচনায় কিংবা ইতিহাস পুন:গঠনে এসব গুপ্ত সাংস্কৃতিক নিদর্শন বা প্রত্নবস্তু আবিষ্কারের জন্য প্রত্নতাত্ত্বিকগণ (archaeologists) কাজ করে চলেছেন। স্থাবর (immovable) ও অস্থাবর (movable) এসব সাংস্কৃতিক নিদর্শন আবিষ্কারের জন্য প্রত্নতাত্ত্বিকগণ প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধান (archaeological excavation and exploration) কাজ পরিচালনা করেন। এ প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধান কাজ পরিচালনাকালে মাঠ পর্যায়ে কতিপয় যন্ত্রপাতি (tools) ব্যবহৃত হয়। এ প্রবন্ধটিতে এসব যন্ত্রপাতির পরিচিতি ও ব্যবহার সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হল।
১. দিকনির্দেশক কম্পাস [Directional Compass]: কাজের শুরুতে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের জন্য নির্বাচিত প্রত্নস্থান বা ঢিবির একটি লে-আউট প্লান করতে হয়। এ লে-আউট প্লান করার সময় প্রত্নস্থান বা ঢিবিটির দিক নির্ণয় করার প্রয়োজন হয়। দিকনির্দেশক কম্পাস (compass) দিয়ে খুব সহজে তা করা যায়। বর্তমান বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের এনালগ ও ডিজিটাল কম্পাস পাওয়া যায়।
২. জিপিএস মেশিন [GPS Machine]: প্রত্নতাত্ত্বিক খননের জন্য নির্বাচিত প্রত্নস্থান বা ঢিবিটির ভৌগোলিক অবস্থান (geocoordinate) জানা, সাইটপ্লান এবং সমোন্নতি রেখার মানচিত্র (contour map) প্রস্তুত করার প্রয়োজন রয়েছে। আর ডিজিটাল পদ্ধতিতে এসব কাজ করার জন্য জিপিএস মেশিন ব্যবহার করা হয়। বর্তমান বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের ও মডেলের সাদাকালো ও রঙ্গিন ডিসপ্লের জিপিএস মেশিন পাওয়া যায়।
৩. জিপিআর মেশিন [GPR Machine]: প্রত্নতাত্ত্বিক খননের জন্য নির্বাচিত প্রত্নস্থান বা ঢিবিটির ভূ-অভ্যন্তরে প্রোথিত সম্ভাব্য নিদর্শনের (objects) অবস্থান জানার জন্য আধুনিক কালের উন্নত প্রযুক্তি হল জিপিআর মেশিনের ব্যবহার। এ মেশিন দিয়ে স্ক্যান করে ভূ-অভ্যন্তরের ২-৩ মিটার কিংবা মেশিনের ধরন অনুসারে আরও বেশি গভীরতা পর্যন্ত প্রোথিত প্রত্ন-নিদর্শনের অবস্থানগত চিত্র পাওয়া যায়। প্রাপ্ত এ চিত্র দেখে পরবর্তীতে খুব সহজে খনন কাজ করে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন উন্মোচন করা যায়।

৪. লেবেলিং মেশিন [Leveling Machine]: প্রত্নতাত্ত্বিক খননের জন্য নির্বাচিত প্রত্নস্থান বা ঢিবিটির পৃষ্ঠদেশের উচ্চতাগত পরিমাপ নির্ণয়ে লেবেলিং মেশিন ব্যবহার করা হয়। নির্বাচিত প্রত্নস্থান বা ঢিবিটির বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে নির্ণীত উচ্চতার পরিমাপের মান ব্যবহার করে পরবর্তীতে খুব সহজে সমোন্নতি রেখার মানচিত্র (contour map) প্রস্তুত করা যায়। এছাড়া লেবেলিং মেশিনের মাধ্যমে খনন চলাকালে উন্মোচিত বিভিন্ন স্তর (layer) এবং নিদর্শনের উচ্চতাগত পরিমাপ নির্ণয় করা হয়। বর্তমান বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের ও মডেলের লেবেল মেশিন পাওয়া যায়।
৫. ক্যামেরা [Camera]: প্রত্নতাত্ত্বিক খননের জন্য নির্বাচিত প্রত্নস্থান বা ঢিবিটির খননের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতি দিনের প্রতিটি কাজ, উন্মোচিত স্থাবর (immovable) এবং অস্থাবর (movable) প্রতিটি নিদর্শন বা বস্তুর স্থিরচিত্র বা আলোকচিত্র (still image) ধারণ করতে হয়। আর এ কাজটি করার জন্য ক্যামেরার খুবই প্রয়োজন হয়। এছাড়াও মাঝে মাঝে ক্যামেরা ব্যবহার করে খননের গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা নিদর্শনের চলচ্চিত্র (video) ধারণ করতে হয়। বর্তমান বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের ও মডেলের উন্নত মানের ক্যামেরা পাওয়া যায়।
৬. পরিমাপের ফিতা [Measuring Tape]: প্রত্নতাত্ত্বিক খননের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতি দিনের বিভিন্ন পরিমাপে কাজ; বিশেষত উন্মোচিত স্থাবর (immovable) এবং অস্থাবর প্রতিটি নিদর্শন বা বস্তু পরিমাপের কাজ করতে হয়। আর পরিমাপের এ কাজ করার জন্য বিভিন্ন আকারের পরিমাপের ফিতা খুবই প্রয়োজন হয়। বর্তমান বাজারে স্টিল ও প্লাস্টিকের বিভিন্ন ব্রান্ডের ও মডেলের উন্নত মানের পরিমাপক বা পরিমাপের ফিতা (measuring tape) পাওয়া যায়।
৭. কাঠের খুঁটি/প্যাগ [Wooden Peg]: প্রত্নতাত্ত্বিক খননের কাজ করার জন্য নির্বাচিত প্রত্নস্থান বা ঢিবিটিকে বড় থেকে ছোট কতিপয় ছকে (grid) বিন্যস্ত (layout) করে খননের পরিকল্পনা (plan) প্রণয়ন করতে হয়। আর এ কাজটি করার জন্য বড়-ছোট খুঁটি/প্যাগের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও খননস্থলে বিভিন্ন নকশা অংকনসহ অন্যান্য বহুবিদ কাজেও কাঠের খুঁটি/প্যাগের ব্যবহার রয়েছে। কাজের চাহিদা মোতাবেক কাঠ দিয়ে ছোট-বড় বিভিন্ন পরিমাপের এসব খুঁটি/প্যাগ বানিয়ে নিতে হয়।
৮. কোদাল [Spade]: নির্বাচিত প্রত্নস্থান বা ঢিবিটিতে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোদালের বহুবিদ ব্যবহার রয়েছে। ঢিবিটির পৃষ্ঠদেশ চাঁছা, খনন খাদের মাটি কাটা ও মাটি ঝুঁড়িতে তুলে দেয়ার মত কাজগুলো করতে কোদাল ব্যবহার করা হয়। বাজারে ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের লোহার কোদাল পাওয়া যায়। তবে কাজের চাহিদা মোতাবেক লোহা দিয়ে ছোট ও বড় আকারের কোদাল বানিয়ে নিতে হয়।
৯. ছোট হাত পিক [Small Hand Pick]: প্রত্নতাত্ত্বিক খনন খাদে কাজ করার জন্য কোদালের পাশাপাশি ছোট হাত পিকের প্রয়োজন হয়। মূলত কোদালের মত দেখতে আকারে ছোট এ পিক দিয়ে খনন খাদের পার্শ্বচ্ছেদ (profile) সজ্জাকরণের (dressing) কাজে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও খননের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজে প্রয়োজন মত ছোট হাত পিক ব্যবহার করা যায়। কাজের প্রয়োজন অনুযায়ী লোহা দিয়ে এ হাত পিক বানিয়ে নিতে হয়।
১০. বড় হাত পিক [Large Hand Pick]: প্রত্নতাত্ত্বিক খনন খাদের মাটি কাটার একটি বিশেষায়িত যন্ত্র হল বড় হাত পিক। খনন খাদের পৃষ্ঠদেশ থেকে শুরু করে নিচের দিকের প্রতিটি স্তরের মাটি কাটা; বিশেষত আলগা (loose) করে দেয়ার জন্য বড় হাত পিক ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও খননের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজে প্রয়োজন মত বড় হাত পিক ব্যবহার করা যায়। কাজের প্রয়োজন অনুযায়ী লোহা দিয়ে এ হাত পিক বানিয়ে নিতে হয়।
১১. বেলচা [Shovel]: প্রত্নতাত্ত্বিক খনন খাদে কাজ করার অন্যতম প্রয়োজনীয় যন্ত্র হল বেলচা (shovel)। বেলচা ব্যবহার করে ঝুড়িতে মাটি উত্তোলন ও খনন খাদের পার্শ্বচ্ছেদ (profile) সজ্জাকরণ (dressing) করা হয়। এছাড়াও খননের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজে প্রয়োজন মত বেলচা ব্যবহার করা যায়। কাজের প্রয়োজন অনুযায়ী লোহা দিয়ে এ বেলচা বানিয়ে নিতে হয়।
১২. কর্ণিক [Trowel]: প্রত্নতাত্ত্বিক খনন খাদে কাজ করার অন্যতম প্রয়োজনীয় যন্ত্র হল কর্ণিক (trowel)। কর্ণিক ব্যবহার করে উন্মোচিত স্তর (context/stratum) পর্যবেক্ষণ, পরিষ্কারকরণ, স্যাম্পল তোলা প্রভৃতি নানাবিধ কাজ করা হয়। কাজের প্রয়োজন অনুযায়ী লোহা দিয়ে এ কর্ণিক বানিয়ে নিতে হয়।
১৩. মাটি বহনের ঠেলাগাড়ি, ঝুড়ি ও ট্রে [Soil Carrying Wheelbarrow, Baskets and Trays]: প্রত্নতাত্ত্বিক খনন খাদের মাটি অন্যত্র বহন করে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঠেলাগাড়ি, ঝুড়ি ও ট্রের প্রয়োজন হয়। এক চাকাবিশিষ্ট ঠেলাগাড়ি, বাঁশের ঝুড়ি ও লোহার ট্রে ব্যবহার করে খনন খাদের মাটি বহনের কাজে ব্যবহার করা হয়।
১৪. সয়েল কালার চার্ট [Soil Color Chart]: প্রত্নতাত্ত্বিক খননের অন্যতম অপরিহার্য উপকরণ হল সয়েল কালার চার্ট। এ কালার চার্ট ব্যবহার করে খনন চলাকালে উন্মোচিত স্তরসমূহের মাটির বর্ণ/রং নির্ণয় করা যায়। যা পরবর্তীতে প্রতিবেদন প্রণয়নকালে স্তরায়ন বা স্তরের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে সুবিধা হয়।
১৫. স্কেল [Scale]: প্রত্নতাত্ত্বিক খননের একটি অপরিহার্য যন্ত্র (tool) হল স্কেল। বিভিন্ন আকার ও পরিমাপের স্কেল ব্যবহার করে খনন চলাকালে খনন খাদে প্রাপ্ত স্থাবর ও অস্থাবর নিদর্শনের পরিমাপ ও অংকনের কাজ করা হয়।
১৬. সুতলী [Twine]: প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলাকালে গ্রিডপ্লান করাসহ বিভিন্ন ধরনের বাঁধাই করার কাজে মোটা-চিকন সুলতী অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমান বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের উন্নত মানের সুতলী পাওয়া যায়।
১৭. ছুরি [Knife]: প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলাকালে বিভিন্ন ধরনের কাটাকাটির কাজে ছুরি অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমান বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের উন্নত মানের ছুরি পাওয়া যায়।
১৮. দিক নির্দেশক তীর [Directional Arrow]: প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলাকালে দিক নির্দেশক তীর ব্যবহার করে আলোকচিত্র ধারণ করা হয়। সাধারণত তীরটি উত্তর দিকে নির্দেশ করে আলোকচিত্র ধারণ করা হয়। এতে করে খননোত্তর প্রতিবেদন প্রস্তুতকালে দিক নির্দেশযুক্ত আলোকচিত্র দেখে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে সুবিধা হয়।
১৯. প্রত্নবস্তু বহনের ঝুড়ি ও ব্যাগ [Antique Baskets and Bags]: প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলাকালে বিভিন্ন বর্গ ও স্তর থেকে প্রাচীনকালের প্রত্নবস্তু উন্মোচিত হয়। উন্মোচিত প্রত্নবস্তুগুলো বহন, ধৌতকরণ ও সংরক্ষণের জন্য বাঁশের কিংবা প্লাস্টিকের ঝুড়ি/crates এবং কাগজ কিংবা প্লাস্টিক ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের উন্নত মানের ঝুড়ি ও ব্যাগ পাওয়া যায়।
২০. স্যাম্পল ব্যাগ [Sample Bag]: প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলাকালে বিভিন্ন বর্গে উন্মোচিত স্তরগুলোর নমুনা (sample) ও প্রত্নবস্তু সংরক্ষণে স্যাম্পল ব্যাগ অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের উন্নত মানের grip seal bagসহ বহুবিধ স্যাম্পল ব্যাগ পাওয়া যায়।
২১. ফয়েল পেপার [Foil Paper]: প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলাকালে বিভিন্ন বর্গে উন্মোচিত স্তরগুলোর নমুনা (sample) সংরক্ষণে ফয়েল পেপার ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের উন্নত মানের ফয়েল পেপার পাওয়া যায়।
২২. ডকুমেন্টেশন ফরম [Documentation Form]: প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলাকালে বিভিন্ন বর্গে উন্মোচিত স্তর (context/strata) ও স্থাপত্যিক নিদর্শনগুলোকে চিত্র অংকনসহ লিপিবব্ধকরণে ডকুমেন্টেশন ফরম অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সুবিধামত এ ফরম প্রস্তুত করে নেয়া ভাল।

২৩. ফিল্ড নোটবুক [Field Notebook]: প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলাকালে বিভিন্ন বর্গে উন্মোচিত স্তর (context/strata) ও স্থাপত্যিক নিদর্শনগুলোকে চিত্র অংকনসহ লিপিবব্ধকরণে ডকুমেন্টেশন ফরমের পাশাপাশি ফিল্ড নোটবুক অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের ফিল্ড নোটবুট পাওয়া যায়। তবে খননের সুবিধামত ফিল্ড নোটবুট প্রস্তুত করে নিতে পারেন।

২৪. গ্রাফ শিট [Graph Sheet]: প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলাকালে বিভিন্ন বর্গে উন্মোচিত স্তর ও স্থাপত্যিক নিদর্শনগুলোকে চিত্র অংকনসহ লিপিবব্ধকরণে গ্রাফ শিট অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমান বাজারে বিভিন্ন স্কেলের (ইঞ্চি/সে.মি.) গ্রাফ শিট পাওয়া যায়।

২৫. ক্লিপ বোর্ড [Clipboard]: প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলাকালে বিভিন্ন বর্গে উন্মোচিত স্তর ও স্থাপত্যিক নিদর্শনগুলোকে ডকুমেন্টেশন ফরম, ফিল্ড নোটবুকে এবং গ্রাফ শিটে চিত্র অংকনসহ লিপিবব্ধকরণে ক্লিপ বোর্ড অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের উন্নত মানের ক্লিপবোর্ড পাওয়া যায়।
২৬. কলম [Pen]: প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলাকালে বিভিন্ন বর্গে উন্মোচিত স্তর ও স্থাপত্যিক নিদর্শনগুলোকে ডকুমেন্টেশন ফরমের পাশাপাশি ফিল্ড নোটবুকে চিত্র অংকনসহ লিপিবব্ধকরণে কলম অন্যতম অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডে উন্নতমানের কলম পাওয়া যায়।
২৭. পেন্সিল [Pencil]: প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলাকালে বিভিন্ন বর্গে উন্মোচিত স্তর ও স্থাপত্যিক নিদর্শনগুলোকে ডকুমেন্টেশন ফরমের পাশাপাশি ফিল্ড নোটবুকে চিত্র অংকনসহ লিপিবব্ধকরণে পেন্সিল অন্যতম অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডে উন্নতমানের পেন্সিল পাওয়া যায়।
২৮. মার্কার পেন [Marker Pen]: প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলাকালে বিভিন্ন বর্গে উন্মোচিত স্তরগুলোর নমুনা (sample) ও প্রত্নবস্তু সংরক্ষণের ঝুড়ি, স্যাম্পল ব্যাগ ও ফয়েল পেপার ট্যাগ লিখন ও অন্যান্য লেখালেখির কাজে অন্যতম অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডে উন্নতমানের মার্কার পেন পাওয়া যায়।
২৯. শনাক্তকরণ ট্যাগ [Identification Tag]: প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলাকালে বিভিন্ন বর্গে উন্মোচিত স্তরগুলোর নমুনা (sample) ও প্রত্নবস্তু বিভিন্ন স্যাম্পল ব্যাগ, সাধারণ ব্যাগ, ফয়েল পেপার ও ঝুড়িতে সংরক্ষণ করে শনাক্তকরণ ট্যাগ যুক্ত করা হয়। যাতে পরবর্তীতে প্রতিবেদন লিখন, প্রত্নবস্তু হস্তান্তর ও গ্রহণসহ প্রদর্শনকালে খুব সহজে নমুনা (sample) ও প্রত্নবস্তু শনাক্ত করা যায়।
৩০. জ্যামিতি বক্স [Geometry Box]: প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলাকালে বিভিন্ন বর্গে উন্মোচিত স্তর ও স্থাপত্যিক নিদর্শনগুলোকে ডকুমেন্টেশন ফরম, ফিল্ড নোটবুকে এবং গ্রাফ শিটে চিত্র অংকনসহ লিপিবব্ধকরণে ছোট স্কেল, সেট স্কয়ার, কম্পাস, চাঁদাসহ বিভিন্ন জ্যামিতিক টুলস ব্যবহৃত হয়। তাই প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বিভিন্ন জ্যামিতিক টুলসহ জ্যামিতি বক্স অন্যতম অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
৩১. ব্যাগ প্যাক [Bag Pack]: প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলাকালে খনন দলের সদস্যদের কাগজ, কলম, পেন্সিল, নোটবুক, জ্যামিতি বক্স, শনাক্তকরণ ট্যাগ, স্যাম্পল ব্যাগ, ছুড়ি, কর্ণিক, গ্রাফ শিট প্রভৃতি উপকরণ বহনের জন্য ব্যাগ প্যাক ব্যবহার করা হয়।
উপর্যুক্ত মৌলিক যন্ত্রপাতিসমূহ ছাড়া প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ পরিচালনাকালে কম্পিউটার (ডেস্কটপ/ল্যাপটপ), মই (ladder), মাকো (pottery gauge), মাসকিন টেপ, স্লাইড ক্যালিপার্স, ম্যাগনিফাইং গ্লাস, বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র, চেয়ার-টেবিলসহ অন্যান্য আরও জিনিসপত্র বা যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের জন্য নির্ধারিত একজন মাঠ পরিচালক (field director) তাঁর অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞানের আলোকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে খনন কাজ শুরু করেন। [মো: শাহীন আলম]
Introduction and Use of the Common Tools Used in Archaeological Excavation