ঔপন্যাসিক পরিচিতি: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮ – ১৮৯৪)
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা ভাষার প্রথম সার্থক ঔপন্যাসিক ছিলেন। তিনি ২৬ জুন ১৮৩৮ সালে (বাংলা ১৩ আষাঢ় ১২৪৫ সালে) পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার নৈহাটি শহরের নিকটস্থ কাঁঠালপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পিতার নাম – যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং মাতার নাম – দুর্গাসুন্দরী দেবী। বঙ্কিমচন্দ্র হলেন যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের তৃতীয় পুত্র।
পুরোহিত বিশ্বম্ভর ভট্টাচার্যের কাছে মাত্র ৫ বছর বয়সে শিশু বঙ্কিমচন্দ্রের লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়। শিশু বয়সেই বঙ্কিমচন্দ্রের বিস্ময়কর মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। ১৮৪৪ সালে পিতার কর্মস্থল মেদিনীপুরে বঙ্কিমচন্দ্রের প্রকৃত শিক্ষার সূত্রপাত হয়। এরপর ১৮৪৯ সালে বঙ্কিমচন্দ্র হুগলি কলেজে (বর্তমানে হুগলী মহসিন কলেজ) ভর্তি হন। হুগলী কলেজে তিনি ৭ বছর পড়াশোনা করেন। এ কলেজে পড়াশোনা কালে ১৮৫৩ সালে তিনি জুনিয়র ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। ছাত্রবৃত্তি হিসেবে তিনি মাসে ৮ টাকা বৃত্তি লাভ করেন। ১৮৫৮ সালে বঙ্কিমচন্দ্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি. এ. পরীক্ষায় পাশ করেন।
১৮৫৮ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং ডেপুটি কালেক্টর পদে চাকরিতে যোগদান করেন। বঙ্কিমচন্দ্ৰ ৩৩ বছর একই পদে চাকরি করেন। তিনি তাঁর দীর্ঘ এ কর্মময় জীবনে যশোর, খুলনা, মেদেনীপুর, কলকাতা, মুর্শিদাবাদ, আলিপুর, হাওড়া ও ঝিনাইদহে চাকরি করেন। এরপর ১৮৯১ সালে বঙ্কিমচন্দ্ৰ চাকরি থেকে অবসর নেন। জানা যায় যে, ব্রিটিশ সরকার বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে ২টি খেতাবে ভূষিত করে। এ খেতাবগুলো হল – ১৮৯১ সালে রায় বাহাদুর এবং ১৮৯৪ সালে কম্প্যানিয়ন অফ দ্য মোস্ট এমিনেন্ট অর্ডার অফ দ্য ইন্ডিয়ান এম্পায়ার।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছাত্র থাকাকালীন সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। পাশ্চাত্য ভাবাদর্শে বাংলা উপন্যাস রচনার পথিকৃৎ হিসেবে বঙ্কিমচন্দ্রের বিস্ময়কর সুখ্যাতি প্রকাশ পায়। তাঁর প্রথম বাংলা উপন্যাস দুর্গেশনন্দিনী, যা ১৮৬৫ সালে প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রকাশিত এ উপন্যাসটি বাংলা কথাসাহিত্যে এক নবদিগন্ত উন্মোচিত করে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য অন্যান্য উপন্যাসগুলো হল – কপালকুণ্ডলা, মৃণালিনী, বিষবৃক্ষ, যুগলাঙ্গুরীয়, ইন্দিরা, রাধারানী, চন্দ্রশেখর, রজনী, কৃষ্ণকান্তের উইল, রাজসিংহ, আনন্দমঠ, দেবী চৌধুরানী এবং সীতারাম। প্রবন্ধ সাহিত্যেও বঙ্কিমচন্দ্রের সুখ্যাতি রয়েছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ হল – কমলাকান্তের দপ্তর, কৃষ্ণ চরিত্র, লোকরহস্য, প্রভৃতি।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শেষ জীবনে নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় ভোগে ছিলেন। ১৮৯৪ সালের মার্চ মাসে বঙ্কিমচন্দ্রের বহুমূত্র রোগ (diabetes) বেশি মাত্রায় বেড়ে যায়। জানা যায় যে, এ বহুমূত্র রোগের কারণে বঙ্কিমচন্দ্রের মৃত্য হয়। ৮ এপ্রিল ১৮৯৪ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন। [সংকলিত]