বদর যুদ্ধ (১৭ মার্চ, ৬২৪ খ্রিস্টাব্দ)
ইসলামের ইতিহাসে ‘গাজওয়ায়ে বদর’ বা বদর যুদ্ধ নামে যে যুদ্ধটি সংগঠিত হয়েছিল তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। ইসলামের ইতিহাসের সেই বদর যুদ্ধ সম্পর্কে নিম্নে আলোকপাত করা হলো:
হিজরতের পর মদিনায় ইসলামের দৃঢ় প্রতিষ্ঠা ও প্রসার, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি ও কর্মকাণ্ডে সাফল্য লাভ এবং মদিনা নগরীর শাসন শৃঙ্খলা উন্নত হওয়ায় মক্কা কুরাইশদের মনে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এই ঈর্ষা ও শত্রুতা থেকেই পৌত্তলিক মক্কাবাসী মহানবী (স.) এর সঙ্গে প্রথম যে সংঘর্ষের সুত্রপাত ঘটায়, ইসলামের ইতিহাসে তা ‘গাজওয়ায়ে বদর’ বা বদর যুদ্ধ নামে পরিচিত। ইসলামের ইতিহাসের এই বদর যুদ্ধের কতগুলো কারণ রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হল:
মক্কার কুরাইশদের শত্রুতা, আবদুল্লাহ ইবনে উবাই-এর ষড়যন্ত্র, মদিনার ইহুদিদের ষড়যন্ত্র, আর্থিক কারণ, কুরাইশদের হিংসাত্মক কার্যকলাপ, নাখলার খণ্ড যুদ্ধ, এবং আবু সুফিয়ানের কাফেলা আক্রমণ মিথ্যা গুজব।
মহানবী (স.) ঐশী বাণী লাভ করে অনুপ্রাণিত হলেন। ওহি নাযিল হয় যে, ‘আল্লাহর পথে তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করো, যারা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে।’ সাথে সাথে মহানবী (স.) নেতৃস্থানীয় সাহাবাদের পরামর্শে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আনসার এবং মুহাজির নিয়ে গঠিত মাত্র ৩১৩ জনের একটি মুসলিম বাহিনী কুরাইশ বাহিনীর মোকাবিলা করার জন্য বদর অভিমুখে রওনা হয়।
মদিনা থেকে ৮০ মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে বদর উপত্যকায় ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে ১৩ মার্চ ( ১৭ই রমজান, জুমাবার দ্বিতীয় হিজরি) মুসলিম বাহিনীর সঙ্গে কুরাইশদের সংঘর্ষ হয়। মহানবী (স.) স্বয়ং যুদ্ধ পরিচালনা করেন। আল- ওয়াকিদী বলেন- মহানবী (স.) মুসলিম সৈন্য সমাবেশের জন্য এমন একটি স্থান বেছে নেন, যেখানে সূর্যোদয়ের পরে যুদ্ধ শুরু হলে কোন মুসলমান সৈন্যের চোখে সূর্য কিরণ পড়বে না। বদর যুদ্ধে মহান আল্লাহ হাজার হাজার ফেরেশতা পাঠিয়ে মুসলিম বাহিনীকে সাহায্য করেন। এ যুদ্ধে ৭০ জন কুরাইশ সৈন্য নিহত হয় ও সমসংখ্যক সৈন্য বন্দী হয়। অপরদিকে মাত্র ১৪ জন মুসলিম সৈন্য শাহাদত বরণ করেন। আবু জাহেল এ যুদ্ধে নিহত হয়। হযরত মুহাম্মদ (স.) যুদ্ধবন্দীদের প্রতি যে উদার ও মধুর ব্যবহার করেন, তা তার মহানুভবতার পরিচয় বহন করে। মুক্তিপণ গ্রহণ করে কুরাইশ বন্দীদের মুক্তি প্রদান করা হয়। মাত্র ৪০০০ দিরহাম মুক্তিপণ নির্ধারিত হয়। যারা মুক্তিপণ দিতে অক্ষম, তারা মুসলমানদের বিরোধিতা না করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে ও মুসলমান বালককে শিক্ষাদান করে মুক্তি লাভ করে। ইসলামের ইতিহাসে এই বদরের যুদ্ধ বিজয় ইসলাম প্রচারে নব দিগন্তের সূচনা করে। [ইশরাত জাহান মিম]