বাংলা লিপি কীভাবে সৃষ্টি ?
ভারত উপমহাদেশে আর্য ভাষার প্রাচীনতম এক বর্ণমালার সন্ধান পাওয়া যায়। সন্ধানপ্রাপ্ত এ বর্ণমালাটি হল খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় (৩য়) শতাব্দীতে (3rd century BC) ভাষা লিখিতভাবে প্রকাশের প্রতীক চিহ্ন। তখন ভারতীয় উপমহাদেশে ৩য় মৌর্য সম্রাট অশোকের অনুশাসন (২৭৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ – ২৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) চলমান ছিল। বাংলাদেশে বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়ে এক ধরনের লিপির সন্ধান পাওয়া যায়। মহাস্থানগড়ে সন্ধানপ্রাপ্ত এ লিপিটিকে ব্রাহ্মী লিপি বলা হয়। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, সম্রাট অশোকের শাসনকালের লিপি ও মহাস্থাগড়ে প্রাপ্ত লিপির মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে। আরও জানা যায় যে, এ ব্রাহ্মী লিপি কুষাণ (১ম শতাব্দী থেকে ৩য় শতাব্দী) এবং গুপ্ত (৩য় শতাব্দী থেকে ৬ষ্ঠ শতাব্দী) রাজাদের শাসন আমলে পরিবর্তিত হয়ে ৩টি রূপ ধারণ করে। এগুলো হল: –
১) সারদা: ব্রাহ্মী লিপির সারদা রূপটি মূলতঃ কাশ্মির এবং পাঞ্জাবে প্রচলিত রূপ।
২) নাগর: ব্রাহ্মী লিপির নাগর রূপটি মূলতঃ ভারতের রাজস্থান, মালব, গুজরাট, ও মধ্যপ্রদেশে প্রচলিত রূপ; ও
৩) কুটিল: ব্রাহ্মী লিপির কুটিল রূপটি মূলতঃ ভারত উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলে (বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে) প্রচলিত রূপ।

ব্রাহ্মী লিপির কুটিল রূপ থেকে বাংলা লিপি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়। এখানে কুটিল বলতে জটিল (complicated) বুঝানো হয়েছে। মূলতঃ বর্ণের মাত্রা ও বর্ণগুলো জটিল বলে ব্রাহ্মী লিপির এ রূপটিকে কুটিল বলা হয়। বাংলার এ রূপের বর্ণগুলোর কোনটি পূর্ণ মাত্রার, কোনটি অর্ধমাত্রার, আবার কোনটি মাত্রাহীন। এ লিপির বর্ণগুলো বিশেষ করে যুক্তাক্ষরগুলো খুবই জটিল প্রকৃতির।
বাংলা লিপি ছাড়াও অসমিয়া, উড়িয়া, ও মৈথিলি লিপি ব্রাহ্মী লিপির কুটিল রূপ থেকে সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়। আর সময়ের পরিক্রমায় হাজার বছরে বাংলা, অসমিয়া, উড়িয়া, ও মৈথিলি লিপি নিজ নিজ বিশিষ্টতা অর্জন করেছে। আরও জানা যায় যে, পাল রাজাদের শাসন আমলে এ ভারত উপমহাদেশে লিপি ক্রম বিবর্তিত হয়ে বাংলা লিপির রূপ পরিগ্রহ করে। ৯ম শতব্দীর বাংলার পাল বংশের অন্যতম রাজা নারায়ণ পালের একটি তাম্র শাসনের (copperplate) সন্ধান পাওয়া যায়। নারায়ণ পালের এ তাম্র শাসনে বাংলা লিপির সুস্পষ্ট রূপ পরিলক্ষিত হয়েছে। বর্তমানের বাংলা ভাষার লিপি সে ধারার পরবর্তী রূপ বলে মনে করা হয়। [মো: শাহীন আলম]