বিশ্বগ্রাম (global village) এবং এর সুবিধা ও অসুবিধা

বিশ্বগ্রাম (global village) হলো বৈশ্বিক যোগাযোগের ব্যবস্থা সমৃদ্ধ স্থান। বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজ এমন একটি শব্দ, যেখানে গোটা বিশ্ব বা পৃথিবীকে একটি গ্রাম হিসেবে কল্পনা করা হয়। কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক, বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী এবং দার্শনিক হারবার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান (Herbert Marshall Mcluhan) ১৯৬২ সালে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘The Gutenberg Galaxy’ এবং ১৯৬৪ সালে ‘Understanding Media’ -তে সর্বপ্রথম বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজ সম্পর্কে ধারণা দেন। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (World Wide Web) বা WWW ইন্টারনেট আবিষ্কারের প্রায় ৩০ বছর পূর্বেই তিনি এ সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিলেন। নিম্নে বিশ্বগ্রামের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে তুলে ধরা হলো:

বিশ্বগ্রামের সুবিধা (advantages of global village): বিশ্বগ্রামের ফলে মানুষের চিন্তা চেতনা ও ধ্যান- ধারণার ব্যাপক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। উন্নত বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে স্বল্পোন্নত দেশগুলোও আজ তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে তাদেরকে সমপর্যায়ে ভাবতে শুরু করেছে। তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের সাথে আন্তর্জাতিক পরিবহন, যোগাযোগ, ব্যবসায় বাণিজ্য প্রতিটি ক্ষেত্রে ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহারের ফলে মানুষ বিশ্বগ্রামের সুবিধা পাচ্ছে। আধুনিক বিশ্বে প্রায় প্রতিটি কাজেই আমরা বিশ্বগ্রামের সুবিধা পাচ্ছি। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুবিধা বা ইতিবাচক দিকগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
১। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের সাথে তাৎক্ষণিক ও কার্যকর যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে।
২। কাজের দক্ষতা ও গতি বৃদ্ধির পাশাপাশি সময় ও শ্রমের অপচয় রোধ হচ্ছে।
৩। কম খরচে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের লোকের সাথে যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে।
৪। জীবনযাত্রার মান উন্নত হওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংরক্ষিত হচ্ছে।
৫। ব্যবসায় বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে এবং লেনদেন সহজ হচ্ছে।
৬। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী কর্মসংস্থান হচ্ছে এবং ই-ব্যাংকিং সেবার সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।
৭। ঘরে বসেই অনলাইনে কেনাকাটার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে।
৮। টেলিমেডিসিন ব্যবস্থায় রোগী ডাক্তারের সাথে সরাসরি চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারে।
৯। গবেষণার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহার করেই সহজে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
১০। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছবি, অডিও, ভিডিও, এবং প্রয়োজনীয় তথ্যাদি আপলোড ও ডাউনলোড করা যাচ্ছে।
১১। টেলিকনফারেন্সিং ও ভিডিও কনফারেন্সিং সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।
১২। ই-লার্নিং এর মাধ্যমে ঘরে বসেই বিশ্বের স্বনামধন্য শিক্ষা সেবা গ্রহণ করতে পারছে।
১৩। অনলাইনে পত্রিকা পড়া, ব্লগে লেখালেখি এবং মতামত প্রধানের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়।
১৪। মহাকাশে স্যাটেলাইট স্থাপন করা সহজ হয়েছে।
১৫। জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং ব্যবহার করে খাদ্যের উপাদান বৃদ্ধি করা যায়।

বিশ্বগ্রামের অসুবিধা (disadvantages of global village): অনুন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো বর্তমানে বিশ্বগ্রামের সুবিধার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত হুমকি ও বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। বিশ্বগ্রামের প্রভাবে যন্ত্রপাতি ও আধুনিকায়নের ফলে এসব দেশের ব্যবসায় বাণিজ্য ক্ষতির মধ্যে পড়ছে। তাছাড়া শিল্প কারখানায় প্রতিনিয়ত আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি ক্রয়ে অতিরিক্ত পুঁজি বিনিয়োগ করতে বাধ্য হচ্ছে। বিশ্বগ্রামের উল্লেখযোগ্য অসুবিধা বা নেতিবাচক দিকগুলো হলো:
১। ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে হ্যাকিং এর মাধ্যমে গোপনীয় তথ্য চুরি হচ্ছে।
২। সাইবার আক্রমণ সংঘটিত হচ্ছে।
৩। ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরি ই-কমার্স পদ্ধতিতে হুমকির মুখে ফেলছে।
৪। ফাইল শেয়ারিং সাইটগুলো মাধ্যমে কপিরাইটের বস্তুসমূহের বিতরণ ও ব্যবহার উৎসাহিত হচ্ছে।
৫। বিশ্বগ্রামের অবাধ প্রতিযোগিতা স্বল্পোন্নত দেশগুলো উন্নত দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে।
৬। মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লংঘিত হচ্ছে।
৭। ডিজিটাল ডিভাইস বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অদক্ষরা কর্মহীন হয়ে পড়ছে। [ইশরাত জাহান মিম]


সহায়িকা: দাস, প্রকাশ কুমার এবং হাসান, প্রকৌ. মো: মেহেদী, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি, লেকচার পাবলিকেশন লি., ঢাকা, পৃষ্ঠা ৪, ৫, ৭, ৮, ৭০।


Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *