বৃষ্টিপাত ও বৃষ্টিপাতের কারণ

বৃষ্টিপাত [Rainfall]: ভূপৃষ্ঠের জলভাগ সূর্যের তাপে উত্তপ্ত হয়ে বাষ্পীভূত হয়। নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ু নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট পরিমাণ জলীয়বাষ্প ধারণ করতে পারে। তখন এ বায়ুকে সম্পৃক্ত বায়ু বলে। জলীয়বাষ্প মিশ্রিত এ সম্পৃক্ত বায়ু কোনো কারণে শীতল হলে সম্পৃক্ত উদ্বৃত্ত জলীয়বাষ্প ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হয়। এ জলকণাগুলো তখন বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণার সাথে মিশে আকারে বড় হয়। ভারি জলকণাগুলো তখন আর আকাশে ভেসে বেড়াতে পারে না। মধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে এ জলকণাগুলো ভূপৃষ্ঠে বৃষ্টি রূপে পতিত হয়। একে বৃষ্টিপাত বলে।

আবহাওয়া ও জলবায়ু
চিত্র: বৃষ্টিপাত

বৃষ্টিপাতের কারণ [Causes of Rainfall]: সূর্যের উত্তাপে সৃষ্ট জলীয়বাষ্প উপরের শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এলে সহজেই তা সম্পৃক্ত হয়। অতঃপর ঐ সম্পৃক্ত বায়ু অতি ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হয়ে বায়ুমন্ডলের ধূলিকণাকে আশ্রয় করে জমাট বেঁধে মেঘের আকারে আকাশে ভেসে বেড়ায়। যে কোন কারণে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা আরও হ্রাস পেলে ঐ মেঘ ঘনীভূত (condensed) হয়ে পানিবিন্দুতে অথবা বরফকুচিতে পরিণত হয়। মধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে পরবর্তীতে তা নিচের দিকে নেমে আসার সময় বায়ুর উষ্ণতার সংস্পর্শে গলে গিয়ে পানির ফোঁটা (water droplets) আকারে ভূ-পৃষ্ঠর পতিত হওয়ার মাধ্যমে বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়। এটি কখনো প্রবল বর্ষণ আকারে আবার কখনো গুঁড়িগুঁড়ি আকারে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়ে থাকে।

যে কোন স্থানের বৃষ্টিপাত সংঘটনের জন্য মূলত তিনটি বিষয় কাজ করে থাকে। যেমন:
১. বাতাসে জলীয়বাষ্পের উপস্থিতি।
২. জলীয়বাষ্পের ঊর্ধ্বগমন এবং
৩. ঊর্ধ্বাকাশে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা কমে যাওয়া।
এর ফলে মেঘ থেকে জলকণা সৃষ্টির মাধ্যমে বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়ে থাকে। সাধারণত এ বৃষ্টিপাত সংঘটনকে দুই ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে-

১. শীতল বৃষ্টিপাতের উৎপত্তি [Formation of Cold Rain]: সুইডিস আবহাওয়াবিদ টর বারজেরন এবং ওয়াল্টার ফিন্ডেইসেন (Bergeron- Findeisen) – এর মতে, মধ্য ও উচ্চ অক্ষাংশের শীতল বৃষ্টিপাত প্রায় ১৫০০ mm এর বেশি গভীর মেঘ থেকে হয়ে থাকে। এ সময় তাপমাত্রা থাকে ০° থেকে ৮০° সেলসিয়াস এবং মেঘে প্রচুর পরিমাণে জলকণা ও বরফের কেলাস থাকে। বিশেষ প্রক্রিয়ায় বরফের কেলাসগুলো জলকণাগুলোকে মিশ্রণ করে বড় আকার ধারণ করে নিচে নামতে থাকে। আর উষ্ণতা বাড়ার সাথে সাথে বরফের কেলাসগুলো জলকণায় পরিণত হয়ে অনুকূল অবস্থায় শীতল বৃষ্টিরূপে পতিত হয়।

২. উষ্ণ বৃষ্টিপাতের উৎপত্তি [Formation of Warm Rain]: নিরক্ষীয় অঞ্চলের ভূপৃষ্ঠের জলভাগ থেকে প্রচুর পরিমাণ জলীয়বাষ্প বায়ুমন্ডলে উত্থিত হয়ে থাকে। এই জলীয়বাষ্প ঘনীভবন প্রক্রিয়ায় বায়ুতে ভাসমান জৈব ও অজৈব কণিকাকে আশ্রয় করে জলকণায় রূপান্তরিত হয়। পরবর্তীতে বড় আকারের এই জলকণাগুলো বাতাসে ভেসে থাকতে না পেরে মধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে বৃষ্টিরূপে নিচে পতিত হয়। [ইশরাত জাহান মিম]


সহায়িকা: মজুমদার, তাপস কুমার, ভূগোল, লেকচার পাবলিকেশন লি., ঢাকা, পৃ: ১৯৭।


Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *