ভূমিকম্পের কারণ

ভূমিকম্প বলতে সাধারণ যে কোনো কারণে ভূমিতে সৃষ্ট আন্দোলন বা কম্পনকে বুঝায়। নানাবিধ কারণে পৃথিবীতে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়ে থাকে। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞানীগণ ভূমিকম্পের নিম্নলিখিত কারণগুলো উল্লেখ করেছেন-

১। ভূআন্দোলন: ভূমিকম্পের অন্যতম একটি কারণ হলো ভূআন্দোলন। আকস্মিক ভূআন্দোলনের ফলে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। আবার ধীর ভূআন্দোলনেও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ভূমিকম্প সংঘটিত হতে পারে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভূআন্দোলন ভূমিকম্পের অন্যতম প্রধান কারণ হওয়ায় সাম্প্রতিককালের ভূগাঠনিক ক্রিয়া সংবলিত মানচিত্রের সাথে ভূকম্পীয় মানচিত্রের মিল পাওয়া যায়।

২। তাপ বিকিরণ: তাপ বিকিরণের ফলে পৃথিবীর উপরিভাগ শীতল ও কঠিন হলেও পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ এখনও অত্যধিক উত্তপ্ত। যে কারণে ভূঅভ্যন্তরভাগ হতে বিকিরণের প্রক্রিয়া এখনও থেমে যায়নি। কোনো কোনো গবেষকের মতে, পরিচালনের মাধ্যমে উত্তল তরঙ্গের সৃষ্টি করে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ তাপ বিকিরণ করে। এ তরঙ্গের ফলে ভূপৃষ্ঠ কেঁপে ওঠে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।

৩। ভূপৃষ্ঠের চাপ বৃদ্ধি: নানা কারণে ভূপৃষ্ঠের কোনো নির্দিষ্ট স্থানে চাপ বৃদ্ধি পেতে পারে। চাপ বৃদ্ধি পেয়ে নিচে শিলাচ্যুতি হয়ে ভূমিকম্প হতে পারে। কোনো কোনো নিচু স্থানে ক্রমাগত পলি সঞ্চিত হলে ধীরে ধীরে ঐ স্থান পুরু হয়। ফলে সেখানকার চাপ পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পায়। চাপ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ভারি পাললিক শিলাস্তর নিচে নেমে যায়। ফলে ভূআলোড়নের সৃষ্টি হয় এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

৪। ভূগর্ভস্থ বাষ্প: নানা কারণে ভূগর্ভে বাষ্পের সৃষ্টি হতে পারে। যখন কোনো কারণে ভূপৃষ্ঠের চাপ কমে যায় তখন নিচের কঠিন শিলাস্তর তরল অবস্থা প্রাপ্ত হয়। ফলে প্রচুর বাষ্পের সৃষ্টি হয়।

৫। ভূগর্ভস্থ আগ্নেয় পদার্থ: ভূগর্ভস্থ আগ্নেয় পদার্থের চাপেও ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। ম্যাগমা প্রকোষ্ঠে আগ্নেয় পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে তা উপরের দিকে চাপের সৃষ্টি করে। ফলে সে ধাক্কার প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

৬। শিলাচ্যুতি: উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে বৃহৎ কোনো শিলাখণ্ডে ফাটল দেখা দিতে পারে। তখন সে শিলাখন্ড উচ্চ স্থান হতে কখনও কখনও নিচে গড়িয়ে পড়ে। পার্বত্য অঞ্চলে এ ধরনের শিলাচ্যুতির কারণে ভূপৃষ্ঠ কেঁপে উঠে। যার কারণে পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভূমিকম্প হয়।

৭। ভূগর্ভে পানির প্রবেশ: ভূগর্ভে পানি প্রবেশ করলেও ভূমিকম্প হতে পারে। ভূপৃষ্ঠের পানি কখনও কখনও বিভিন্ন ফাটল বা সরু কোনো ছিদ্রপথে ভূগর্ভে প্রবেশ করলে সেখানকার উত্তাপের প্রভাবে প্রচুর বাষ্পের সৃষ্টি হয়। এ বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ঊর্ধ্বমুখী চাপ প্রয়োগ করে। যার ফলে ভূপৃষ্ঠ কেঁপে ওঠে।

৮। হিমানী সম্প্রপাত: উচ্চ কোনো পর্বতগাত্র হতে কখনও কখনও বৃহৎ আকারের কোনো তুষারখণ্ড নিচে পড়ে যায়। ফলে ভূপৃষ্ঠ কেঁপে ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

৯। গুহা বা খনির ভাঙন: চুনাপাথর অঞ্চলে যে কোনো আকৃতির গুহার ছাদ নিচে ধসে পড়লে কিংবা কোনো খনি অঞ্চলে খননকার্যের ফলে যে খালি জায়গার সৃষ্টি হয় অনেক সময় তা অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে নিচের দিকে ধসে পড়লে ভূপৃষ্ঠ কেঁপে ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

১০। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত: আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময় জ্বালামুখ দিয়ে প্রবল বেগে ভূগর্ভস্থ লাভা জাতীয় পদার্থ বের হয়ে আসে। ফলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

এছাড়া বিস্ফোরণের প্রভাব, পাহাড় ধস, পানির বাষ্পীভবন, ভূত্বক পরিবর্তন, পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ প্রভৃতি কারণেও ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। [ইশরাত জাহান মিম]


সহায়িকা: মজুমদার, তাপস কুমার, লেকচার পাবলিকেশন্স লি., ঢাকা, পৃষ্ঠা ৮৯।


ভূমিকম্পের কারণগুলো কি কি?
ভূমিকম্পের কারণগুলোর বর্ণনা।
Causes Of Earthquake


Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *