রকস মিউজিয়াম | পঞ্চগড়

রকস মিউজিয়াম

অবস্থান | Location

রকস মিউজিয়াম (rocks museum) পঞ্চগড় জেলাধীন সদর উপজেলার পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজে অবস্থিত। পঞ্চগড় জেলার রকস মিউজিয়ামটির জিও কো-অর্ডিনেট (অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ) হল 26°20’03.4″ N 88°33’32.4″ E [26.33429, 88.55899]।

বিবরণ | Description

পরিচিতি বোর্ডে (মার্চ, ১৯৯৭) অধ্যক্ষ ড. মো: নাজমুল হক -এঁর প্রদত্ত বিবরণ থেকে জানা যায় যে, প্রায় ৭ কোটি বছর আগে পঞ্চগড় জনপদসহ হিমালয় পর্বতমালার বিস্তৃত অঞ্চল ছিল টেথিস নামক একটি অগভীর সাগর। এ সাগরের দুই দিক থেকে গণ্ডোয়ানা ও লরেশিয়া নামক মহাদেশ বা মহাদেশীয় প্লেট পরষ্পরের দিকে এগিয়ে আসে। মায়োসিন যুগে মহাদেশীয় প্লেট দু’টির প্রচণ্ড চাপে টেথিস সাগরের বুকে জমে থাকা পলি উত্থিত হয়ে হিমালয় পর্বতটি জন্ম হয়। তখনই পৃথিবীর বুক থেকে টেথিস সাগরটি চিরকালের জন্য হারিয়ে যায়। হিমালয়ের উপ অগ্রবর্তী গহ্বরের অংশবিশেষ হল পঞ্চগড়  অঞ্চল। পঞ্চগড়ের ভূ-অভ্যন্তরে টারশিয়ারী যুগের (আনুমানিক ১ কোটি ৬০ লক্ষ বছর পূর্বে) শিলা স্তর, প্রাক ক্যাব্রিয়ান যুগের (আনুমানিক ১০ কোটি ২৬ লক্ষ বছর পূর্বে) ভিত শিলা রয়েছে। এ ভিত শিলার উপরে সর্বনিম্ন ১৩০ মিটার পুরু পাললিক শিলা স্তর পাওয়া যায়। যা পঞ্চগড় এলাকায় উচু, তবে দক্ষিণ দিকে ক্রমশ ঢালু।

ভারতের জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলায় ১৬ লক্ষ থেকে ৬ কোটি বছর ব্যাপ্তির টারশিয়ারী যুগের পাথর পাওয়া গেছে। জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং সংলগ্ন পঞ্চগড় জেলাতেও অনুরূপ প্রাচীন পাথর পাওয়া যায়। দার্জিলিং-এ নব্য প্রস্তর যুগের পাথরের হাতিয়ার আবিস্কৃত হয়। পাথরের হাতিয়ার আবিস্কৃত না হলেও পঞ্চগড় জেলাতে মসৃণ ও অমসৃণ শিলা বা পাথর (rocks) পাওয়া যায়। এসব শিলার খণ্ড প্রাচীনকালে সেতু নির্মাণে ব্যবহৃত হত। এমন কি আধুনিককালেও থালা, বাসন, বসার পিঁড়ি, ধান মাড়াই, সিঁড়ি প্রভৃতিতে পাথরের ব্যাপক ব্যবহার পঞ্চগড় অঞ্চলে প্রচলিত রয়েছে। বিশাল বিশাল পাথরখণ্ড দিয়ে ‍মূর্তি তৈরি, পাথর কেটে স্ল্যাব তৈরি, স্মৃতি সৌধে পাথরের ব্যবহার প্রভৃতি থেকে প্রমাণিত হয় যে, পঞ্চগড় অঞ্চলে নব্য প্রস্তর যুগের সংস্কৃতি পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়েছিল। বাংলাদশের পঞ্চগড় অঞ্চলের প্রাগৌতিহাসিক চিত্র তুলে ধরার জন্য এ রকস মিউজিয়ামটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

১ মার্চ, ১৯৯৭ সালে স্থাপিত এ মিউজিয়ামটিতে রয়েছে ফোকলোর ও জাতিতাত্ত্বিক বিভাগ। এর গ‌্যালারীতে প্রদর্শিত হচ্ছে ছোট-বড় বিভিন্ন প্রকারের পাথর (rocks) খণ্ড, পাথরের তৈজসপত্র, ধাতব লোকজ যন্ত্রপাতি, গৃহস্থলী উপকরণ, কাঠ ও বাঁশের তৈরি বিভিন্ন প্রকারের জিনিসপত্র, সামুদ্রিক শামুক ও ঝিনুক প্রভৃতিসহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন আলোকচিত্র।

লেখক: মো: শাহীন আলম

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *