মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলাফল

সাম্প্রতিককালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হল মুদ্রার অবমূল্যায়ন তথা মুদ্রার বহির্মূল্য হ্রাস। আমরা অনেকেই জানি, সাধারণ পণ্যদ্রব্যের ন্যায় মুদ্রারও মূল্য রয়েছে। আর মুদ্রার অবমূল্যায়ন মানুষের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রের উপর ভাল ও মন্দ বিভিন্ন রকম প্রভাব বিস্তার করে থাকে। নিম্নে মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলাফল বা প্রভাবসমূহ আলোচনা করা হলো:

১. বাণিজ্য ভারসাম্যের ঘাটতি দূর: বাণিজ্য ঘাটতি দূর করার ক্ষেত্রে মুদ্রার অবমূল্যায়নের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি একটি কার্যকর এবং চূড়ান্ত পদ্ধতি হিসেবে গৃহীত হয়ে থাকে। মুদ্রার অবমূল্যায়নের প্রভাবে আমদানি হ্রাস পায়, অন্যদিকে রপ্তানি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। ফলশ্রুতিতে বাণিজ্য ভারসাম্যের ঘাটতি দূর করা সম্ভব হয়।

২. আন্তর্জাতিক প্রভাব: মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে অবমূল্যায়নকারী দেশের নিকট বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন দেশের নিকট অবমূল্যায়নকারী দেশের রপ্তানিকৃত পণ্যসামগ্রীর চাহিদা বৃদ্ধি পায়।

৩. অভ্যন্তরীণ প্রভাব: মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে রপ্তানির মাধ্যমে রপ্তানিকারকগণ বেশি পরিমাণে বিদেশি মুদ্রা আয় করে, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের জাতীয় আয়কে উন্নত করে থাকে। অপরদিকে, আমদানিকৃত পণ্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশীয় পর্যায়ে পণ্যসামগ্রীর উৎপাদনে বিনিয়োগকারীগণ উৎসাহিত হয়ে থাকে।

৪. বাণিজ্য শর্তের ক্ষেত্রে প্রভাব: মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে আমদানি-রপ্তানিকৃত পণ্যসামগ্রীর মূল্য অপরিবর্তিত হয়। এতে দেশের বাণিজ্য শর্ত প্রভাবিত হয়ে থাকে।

৫. মূল্য ও মজুরির ক্ষেত্রে প্রভাব: মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে দ্রব্যমূল্য ও মজুরি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। তবে অবমূল্যায়নের পরবর্তীতে আমদানি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাসমূহ প্রত্যাহার করা হলে দ্রব্যমূল্য ও মজুরি বৃদ্ধির সম্ভাবনা তেমন কার্যকর হয় না।

৬. বিদেশি ক্রেতাদের নিকট পণ্যসামগ্রীর মূল্যের প্রভাব: মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে অবমূল্যায়নকারী দেশের পণ্যসামগ্রী বিদেশিদের নিকট তাদের দেশীয় মুদ্রায় সস্তা হবে। অর্থাৎ বিদেশিরা অবমূল্যায়নকারী দেশের পণ্যসামগ্রী কম মূল্যে ক্রয় করতে সমর্থ হবে।

৭. অভ্যন্তরীণ আয় ও সম্পদের ক্ষেত্রে প্রভাব: মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হলে পুরোপুরি অভ্যন্তরীণ শিল্পসমূহের উপকরণের মূল্য আপেক্ষিকভাবে হ্রাস পাবে। ফলশ্রুতিতে সম্পদের পুনর্বণ্টন এবং অভ্যন্তরীণ আয় বণ্টনে পরিবর্তন হয়ে থাকে।

৮. নিয়োগ ও আয় বৃদ্ধি: মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হলে বাণিজ্য ভারসাম্য অনুকূলে পরিলক্ষিত হয়ে জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়। ফলে দেশের অভ্যন্তরে নিয়োগ ও আয় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।

৯. মূলধন প্রবাহ ব্যাহত: কোনো কারণে অবমূল্যায়ন প্রত্যাশিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলে দেশ থেকে ব্যাপক হারে মূলধন বিদেশে চলে যেতে পারে। যা সার্বিকভাবে দেশের মূলধন প্রবাহকে ব্যাহত করবে।

পরিশেষে বলা যায় যে, বিভিন্ন ক্ষেত্রের উপরে মুদ্রার অবমূল্যায়ন প্রভাব বিস্তার করে থাকে। মুদ্রার অবমূল্যায়নের ঋণাত্মক প্রভাব কার্যত উন্নত দেশসমূহের চেয়ে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে বেশি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। [শারমিন জাহান সায়মা]


সহায়িকা: জোয়ারদার, সুকেশ চন্দ্র; আলম, মোঃ শাহ; আখতার, সুফিয়া ও ইসলাম, মোঃ নজরুল, (২০২০), আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, মিলেনিয়াম পাবলিকেশন্স, ঢাকা, পৃষ্ঠা ১৮৮।


Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *