শব্দ ও বাতাস: বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা
বাতাস কেবল উড়োজাহাজ কিংবা পাখিই করে না, বরং শব্দও বহন করে। আশ্চার্যের বিষয় হল, পৃথিবীর বাহিরে কোন শব্দ নেই, কারণ সেখানে কোন বাতাস নেই। বাতাসের মাধ্যমে শব্দ চলাচল করে। একটি পাথর পুকুরের পানিতে নিক্ষেপ করলে পুকুরের যেখানে পাথরটি পড়ে, তার চারপাশে মৃদু তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। তখন পুকুরে ছোট একটি কাঠি থাকলে পানির তরঙ্গ কাঠিকেও নাড়িয়ে দেয়। ঠিক একইভাবে শব্দও বাতাসে তরঙ্গ সৃষ্টি করে, যাকে কম্পন (vibration) বলা হয়। যদি এ তরঙ্গ কানে পৌঁছায় তাহলে কানের পর্দায় কম্পন তৈরি হয় এবং সে শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। শব্দ ও বাতাসের কয়েকটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিম্নে তুলে ধরা হলো:
শব্দের তরঙ্গ (sound waves): উচ্চ শব্দ যে তরঙ্গ সৃষ্টি করে, তা খুব কাছাকাছি থাকে। নিম্ন শব্দ যে তরঙ্গ সৃষ্টি করে, তা দূরে থাকে। পুকুরের পানির মতই শব্দের তরঙ্গগুলো ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যায়। যতই শব্দের উৎসের কাছে যাওয়া যায়, ততই শব্দ ভালভাবে শুনতে পাওয়া যায়।
হার্প (harp) বাদ্যযন্ত্র ও বাতাসে শব্দ: হার্প তৈরির জন্য একটি কার্ডবোর্ড অথবা প্লাষ্টিকের বাক্স এবং আটটি রাবারের ব্যান্ড সংগ্রহ করি। বাক্সের চারপাশে রাবারের ব্যান্ড লাগিয়ে নিয়ে হার্পটি বাজানোর জন্য আঙ্গুল দিয়ে ব্যান্ডগুলো তুলে নেই। শক্ত করে বাঁধানোর জন্য ব্যান্ডের শেষে আঙ্গুল দিয়ে লাগিয়ে নেই। স্থিতিস্থাপক ব্যান্ডটি যত শক্ত করে বাঁধা যায়, ততই ভালভাবে এটিতে শব্দ বেঁজে উঠবে।
বাজনা বাজানো (playing music) ও বাতাসে শব্দ: বাদ্যযন্ত্র বিভিন্ন উপায়ে শব্দ তৈরি করে। প্রত্যেকটি বাতাসকে নিজস্ব উপায়ে আন্দোলিত করে। একটি ড্রাম আন্দোলিত হয়, যখন এর ত্বকের পৃষ্ঠের উপর বিশেষ একটি কাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। ত্বকটি উপরে ওঠতে এবং নামতে থাকে এবং শব্দের তরঙ্গ প্রবাহিত হয়। তারের যন্ত্র; যেমন: একটি বেহালা বা গীটারকে ‘বো’ বা আঙ্গুল দিয়ে প্লাক করলে তরঙ্গের প্রবাহ সৃষ্টি হয়। কাঠের যন্ত্রের একটি মুখ থাকে। বাদক একটি তরঙ্গ বাজানোর জন্য এর মধ্যে ফুঁ দেয়। (যেমন: ওবো অথবা ক্ল্যারিনেট) অথবা একটি ছিদ্র দিযে ভিতরে ফুঁ দেয় যেন বাদ্যযন্ত্রের ভিতরে সুরের সৃষ্টি হয়। যেমন: বাঁশি।
বোতলের বাজনা (singing bottles) ও বাতাসে শব্দ: একটি সারিতে অনেকগুলো বোতল সাজাই। প্রথমটি খালি করে পরেরটি সামান্য পানি ভর্তি করি। তৃতীয়টিতে কিছুটা বেশি পানি ভর্তি করি, পরেরটা সামান্য বেশি, এভাবে সারিতে যে কয়টি বোতল থাকবে সেভাবে পানি ভর্তি করি। শেষ বোতলটি প্রায় সবটুকু ভর্তি করি। চামচ দিয়ে বোতলকে আঘাত করি অথবা উপর থেকে ফুঁ দেই। যখনই বোতলকে আঘাত করা হবে অথবা ফুঁ দেয়া হবে তখনই ভিতরের বায়ুকে আন্দোলিত করবে। প্রত্যেকটি বোতলের ভিতরে বিভিন্ন পরিমাণের বাতাস রয়েছে, তাই বিভিন্ন রকম শব্দ তৈরি হবে।
বজ্রপাত ও শব্দ থেকে ঝড়ের (storm) দূরত্ব নির্ণয়: ঝড়ের সময় বজ্রপাতের শব্দের আগে আলো দেখতে পাওয়া যায়। যখনই আলো জ্বলে উঠে তখনই প্রচুর পরিমাণ তাপ তৈরি হয়। বাতাসের এ তাপ, যা ছোট বিস্ফোরণের মাধ্যমে তৈরি হয়, তাকে বলা হয় বজ্র। আলো সাথে সাথেই দেখতে পাওয়া যায়, কারণ আলোর তরঙ্গ শব্দের তরঙ্গের তুলনায় দ্রুত বেগে ছুটে চলে। কিন্তু বজ্রপাতের শব্দ কানে এসে পৌঁছাতে আলোর চেয়ে বেশি সময় নেয়। যখন বিদ্যুৎ চমকানোর আলো দেখতে পাওয়া যায়, ঠিক তখন থেকে বজ্রপাতের শব্দ শোনার সময়ের ব্যবধান গণনা করা যাক। এরপর, বজ্রপাতের আলো দেখা ও শব্দ শোনার মধ্যবর্তী সময়কে পাঁচ দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যাবে, ঝড়টি (storm) ঠিক কত মাইল বা কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। [সংকলিত]