সমুদ্র-পৃষ্ঠের ক্রমোত্থান | Sea-Level Rising
সমুদ্র-পৃষ্ঠের ক্রমোত্থান [Sea-Level Rising] বলতে সাধারণত পৃথিবীর মহাসাগর, সাগর ও উপসাগরসমূহের পানির পৃষ্ঠদেশ ধীরে ধীরে উপরে দিকে উত্থিত হওয়াকে বুঝায়। অর্থাৎ মানুষের নানাবিধ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডসহ (CO2) অন্যান্য গ্রীন হাউজ গ্যাসের পরিমাণ ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাপ ধরে রাখতে সক্ষম এসব গ্রীন হাউজ গ্যাস বৃদ্ধির সাথে সাথে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির এ অবস্থাটি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন (global warming) হিসেবে অভিহিত। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের পরিণতি হিসেবে মেরু ও পার্বত্য এলাকার স্থায়ী বরফাবৃত অঞ্চলের বরফ বা হিমবাহ বিগত সময়ের তুলনায় বর্তমানে অধিক হারে গলে যেতে শুরু করেছে। বরফ বা হিমবাহ-এর গলিত অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত হয়ে অধিক হারে সমুদ্রে জমা হচ্ছে। অতিরিক্ত পানি (water) জমার ফলে সমুদ্রের পানির পৃষ্ঠদেশের উচ্চতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরূপ প্রক্রিয়ায় সমুদ্রের পানির পৃষ্ঠদেশের উচ্চতা বৃদ্ধিকে মূলত সমুদ্র-পৃষ্ঠের ক্রমোত্থান বলা হয়। বিশ্ব জলবায়ু সম্পর্কিত আন্ত:রাষ্ট্রীয় প্যানেল [IPCC]-এর এক হিসেবে উল্লেখ করা হয় যে, বিগত কয়েক শতকে পৃথিবীর সমুদ্র-পৃষ্ঠের উচ্চতা ১০ – ২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে সমুদ্র-পৃষ্ঠের উচ্চতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলস্বরূপ তখন পৃথিবীর সকল উপকূলবর্তী নিম্নাঞ্চল নিমজ্জিত হতে পারে। উপকূলবর্তী অঞ্চলে জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে যেতে পারে। উপকূলবর্তী বহু লোক কৃষি জমি হারাতে পারে। একই সাথে উপকূলবর্তী এলাকার বহু লোক গৃহহীন হয়ে অন্যত্র আবাসনের জন্য ছুটে যেতে হতে পারে। [মো: শাহীন আলম]
সহায়িকা: বাকী,আবদুল, ভুবনকোষ, ২০১৩, সুজনেষু প্রকাশনী, ঢাকা।