সাংস্কৃতিক আত্মীকরণ | Cultural Assimilation

সাংস্কৃতিক আত্মীকরণ [Cultural Assimilation] বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বুঝায়, যে প্রক্রিয়ায় যে কোন একজন ব্যক্তি কিংবা জনগোষ্ঠী কর্তৃক অপর কোন ব্যক্তি কিংবা জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি গ্রহণ বা আয়ত্ত করে। মানুষ যখন নতুন কোন সংস্কৃতিতে বা সাংস্কৃতিক পরিবেশে এসে বসবাস করে, তখন সেই সাংস্কৃতিক পরিবেশের মধ্যে মানুষের আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ, চিন্তা-চেতনাসহ সমগ্র জীবনধারার সাথে আত্তীকৃত হতে থাকে। এরূপে নতুন কোন সংস্কৃতিতে বা সাংস্কৃতিক পরিবেশে মানুষের সাংস্কৃতিক আত্তীকরণ সম্পন্ন হয়। একটি সাধারণ উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, একটি মেয়ে বিয়ের পরে নিজের বাড়ির সংস্কৃতি বা সাংস্কৃতিক পরিবেশ ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি যায়, যেখানে মেয়েটি শ্বশুরবাড়ির সংস্কৃতি বা সাংস্কৃতিক পরিবেশের সাথে নিজেকে আত্তীকরণের মাধ্যমে বসবাস করার চেষ্টা করে। আরও একটি উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, একজন ব্যক্তি চাকুরি করতে নিজের সংস্কৃতি বা সাংস্কৃতিক পরিবেশ ছেড়ে নতুন কর্মস্থলে যায়, যেখানে ব্যক্তিটি ঐ কর্মস্থলের নিয়ম-কানুন ও রীতি নীতিযুক্ত নতুন সংস্কৃতি বা সাংস্কৃতিক পরিবেশের সাথে নিজেকে আত্তীকরণের মাধ্যমে চাকুরি করে যেতে হয়।

সাংস্কৃতিক আত্মীকরণ

চিত্র : সাংস্কৃতিক আত্মীকরণ পর্যায়সমূহ।

আবার, যে কোন ব্যক্তি বা জনগোষ্ঠী কর্তৃক একটি প্রলক্ষণ গ্রহণ করলেও নিজের প্রয়োজন মত পরিবর্তন ও অভিযোজনের মধ্য দিয়ে নিজের প্রয়োজন মেটানোর প্রক্রিয়াকে সাংস্কৃতিক আত্মীকরণ বলে। আর সাংস্কৃতিক ব্যাপন প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত পর্ব হল সাংস্কৃতিক আত্মীকরণ। যে কোন সমাজে সংস্কৃতির যে কোন নতুন একটি প্রলক্ষণ উপস্থাপিত হলে, সেই প্রলক্ষণটি বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে সমাজ কর্তৃক গৃহীত হয়।

উপর্যুক্ত যে সংজ্ঞা ও উদাহরণ উল্লেখ করা হয়েছে, এর বাহিরেও সাংস্কৃতিক আত্মীকরণ সম্পর্কিত আরও অনেক ঘটনা রয়েছে, যে ঘটনাগুলো মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করা হয়। যেমন – বাংলাদেশের ঢাকা শহরে আলো-অন্ধকারের রেস্তোরাঁয় যে বিশেষ ধরনের খাবার পরিবেশন করা হয়, তা ‘চাইনিজ খাবার’ নামে অধিক পরিচিত। তবে, এসব রেস্তোরাঁয় যে খাবার পরিবেশন করা হয়, সে খাবার মোটেও স্থানীয় নয়। এ বিশেষ খাবার বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে সংযোজন (acculturation) করা হয়েছে। তবে চীন দেশে যে খাবার চাইনিজ বলে পরিচিত,  প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের ঢাকার রেস্তোরাঁয় সে খাবার দেয়া হয় না। [মো: শাহীন আলম]


সহায়িকা:
১। বাকী, আবদুল, সাংস্কৃতিক ভূগোল (Cultural Geography), ২০১২, সুজনেষু প্রকাশনী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ৫৯-৬০;
২। বাকী, আবদুল, ভুবনকোষ, ২০১৩, সুজনেষু প্রকাশনী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ৩১০; 
৩। quora.com


Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *