অবাধ বাণিজ্যের সুবিধা
এ্যাডাম স্মিথ, ডেভিড রিকার্ডো প্রমুখ ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদগণ অবাধ বাণিজ্যের অন্যতম সমর্থক ছিলেন। তাদের মতে, অবাধ বাণিজ্যের ফলে প্রত্যেক দেশই লাভবান হয় এবং আন্তর্জাতিক বিশেষীকরণের ফলে পৃথিবীর মোট উৎপাদন ও ভোগ বৃদ্ধি পাবে। অবাধ বাণিজ্যের যে সব সুবিধা রয়েছে, সে সব নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. মোট উৎপাদন বৃদ্ধি: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অবাধ ও মুক্ত হলে বাণিজ্যরত দেশগুলো তাদের সুবিধা মতো দ্রব্য উৎপাদন করতে পারে। অপর কথায়, যে দেশ যে সব দ্রব্য উৎপাদনে তুলনামূলকভাবে বেশি সুবিধা ভোগ করে, সে দেশ সে সব দ্রব্য বেশি উৎপাদন করে। এর ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন দ্রব্য উৎপাদনে বিশেষত্ব অর্জন করে। এ অবস্থায় বাণিজ্যরত সকল দেশেরই উৎপাদন বাড়ে।
২. আন্তর্জাতিক বিশেষায়ন: অবাধ বাণিজ্য শুরু হলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে আঞ্চলিক শ্রম বিভাগ ও বিশেষীকরণ বাড়ে। বাণিজ্যে অংশগ্রহণকারী দেশ নিজ নিজ সুবিধা অনুযায়ী দ্রব্য সামগ্রী উৎপাদন করে। অর্থনীতিবিদ বেনহামের (Benham) মতে, “Free Trade enables the maximum advantage to be gained from specialisation between countries.” (অর্থাৎ অবাধ বাণিজ্য দুটি দেশের বিশেষায়ন হতে অধিকাংশ সুবিধা অর্জন করতে সক্ষম হয়।)
৩. প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার: অবাধ বাণিজ্য লাভের আশায়, আপেক্ষিক সুবিধার ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশ বিশেষ বিশেষ দ্রব্য উৎপাদন করে বিধায় স্ব স্ব দেশের প্রাকৃতিক ও অন্যান্য সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার সম্ভব হয়।
৪. ক্রেতা ও বিক্রেতার লাভ: অবাধ বাণিজ্যের ফলে ক্রেতারা কম দামে ভাল পণ্য দ্রব্য ক্রয় করতে পারে। বিক্রেতারা নিজ দেশে উৎপাদন ব্যয়ের ভিত্তিতে দেশের অভ্যন্তর অপেক্ষা বাহিরে বেশি দামে দ্রব্য বিক্রয় করতে পারে। ফলে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই লাভবান হয়।
৫. একচেটিয়া কারবার প্রতিরোধ: অবাধ বাণিজ্যের ফলে একচেটিয়া কারবার গড়ে উঠতে পারে না। অবাধ বাণিজ্যে প্রত্যেক দেশ কয়েকটি দ্রব্য উৎপাদনে পারদর্শিতা লাভ করে এবং উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো কাম্য আয়তনের হয়, যাতে প্রতিটি দ্রব্যের উৎপাদন ব্যয় সর্বনিম্ন থাকে। এ কারণে দামও কম থাকে। অবাধ বাণিজ্যে তাই আমদানি ও রপ্তানি দ্রব্যের দাম কম থাকে এবং এ অবস্থায় কেউ বেশি দামে বিক্রি করতে পারে না। এ ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ একচেটিয়া কারবার গড়ে ওঠার পরিপন্থি।
৬. কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধি: অবাধ বাণিজ্যের সুযোগে প্রত্যেক দেশে সুবিধা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের রপ্তানিমুখী শিল্প গড়ে ওঠে। শ্রমিকরা এসব সমৃদ্ধ শিল্পে কাজ পায় এবং উচ্চ মজুরি লাভ করে। এর ফলে একদিকে দেশে কর্মসংস্থান বাড়ে এবং অপর দিকে শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
৭. বিস্তৃত বাজার: অবাধ বাণিজ্য দ্রব্য ও সেবার বাজার বিস্তৃত করতে সাহায্য করে। বাণিজ্য অবাধ হলে দেশে উৎপাদিত দ্রব্যসমূহের চাহিদা কেবল দেশের সীমানার মধ্যে সীমিত থাকে না, বরং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সেগুলোর চাহিদা সৃষ্টি হয়। এর ফলে দ্রব্যের বাজার সমগ্র বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত হয়।
৮. প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী আমদানি: অবাধ বাণিজ্যের ফলে প্রত্যেক দেশ সহজেই বিদেশ থেকে বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী আমদানি করতে পারে। যেমন: কোনো দেশে অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য, কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি, প্রভৃতির ঘাটতি দেখা দিলে দ্রুত এসব দ্রব্য বিদেশ থেকে আমদানি করে ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হয়।
৯. দামের সমতা অর্জন: অবাধ বাণিজ্যে লিপ্ত বিভিন্ন দেশের বাজারগুলো একে অপরের নিকটবর্তী হয়। ফলে বিভিন্ন দেশের দ্রব্যের দামের মধ্যে সমতা অর্জিত হয়।
১০. জ্ঞান ও সংস্কৃতির প্রসার: অবাধ বাণিজ্যের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ একে অপরের সাথে পণ্য বিনিময়ের সাথে সাথে জ্ঞান ও সংস্কৃতিগত বিনিময় সম্পাদন করে। আবার উন্নয়নশীল দেশগুলো উন্নত দেশসমূহ হতে উন্নত প্রযুক্তি জ্ঞান আমদানির মাধ্যমে প্রযুক্তিগত জ্ঞানের বিকাশ ঘটায়।
১১. বিশ্ব শান্তি: অবাধ বাণিজ্য চালু থাকলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যে দ্রব্য সামগ্রী বিনা বাধায় আমদানি-রপ্তানি হতে পারে। দ্রব্য সামগ্রীর এরূপ আদান-প্রদানের পাশাপাশি সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, প্রভৃতি সংক্রান্ত বিনিময় হয়। ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায় এবং বিশ্ব শান্তির পথ সুগম হয়। [শারমিন জাহান সায়মা]
সহায়িকা: জোয়ারদার, সুকেশ চন্দ্র, আলম, মোঃ শাহ, ও আখতার, সুফিয়া, (২০২০), আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, মিলেনিয়াম পাবলিকেশন্স, ঢাকা, পৃষ্ঠা ১১১-১১২।
✅ অবাধ বাণিজ্যের পক্ষে যুক্তি
✅ Arguments for Free Trade
✅ Advantages of Free Trade
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL