অর্থের কার্যাবলি | Function of Money

আধুনিক সমাজ জীবনে এবং উৎপাদন ব্যবস্থায় অর্থ বিভিন্ন প্রকার গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে। অর্থের কার্যাবলি বর্ণনা করতে গিয়ে একজন কবি উল্লেখ করেন,

যাহা করে বিনিময় ও মূল্য পরিমাপ
ঋণ পরিশোধ আর সঞ্চয় সাধন
অর্থ বলি গণ্য তারে করে সর্বজন।

ইংরেজি সাহিত্যের কবিতায় নিম্নরূপ অর্থের কার্যাবলি সম্পর্কে প্রকাশ পায় –

“Money is a matter of functions four;
A medium, a measure, a standard, a store.”

তার মানে হল, অর্থের কার্যাবলি চারটি। যেমন:
(১) বিনিময়ের মাধ্যম, (২) মূল্যের পরিমাপক, (৩) লেনদেনের বাহন ও (৪) সঞ্চয়ের বাহন। নিচে অর্থের প্রধান চারটি কার্যাবলির বিবরণ নিম্নে দেয়া হল:

(১) বিনিময়ের মাধ্যম (medium of exchange): অর্থ (money) সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ায় অর্থের বিনিময়ে মানুষ লেনদেন সম্পাদন করে থাকে। ক্রেতা অর্থের বিনিময়ে দ্রব্যসামগ্রী সংগ্রহ করে, অপরদিকে বিক্রেতা কোনো দ্রব্যের বিনিময়ে অর্থ গ্রহণ করে। এরূপ ভাবে অর্থ দিয়ে মানুষ যে কোনো সময় যে কোনো পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী ও সেবা ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে। যার ফলস্বরূপ লেনদেন সহজ ও গতিশীল হয়। আর এজন্য বলা হয়, অর্থ বিনিময়ের সবচেয়ে সহজ ও সুবিধাজনক মাধ্যম।

(২) মূল্যের পরিমাপক (measure of value): কিলোগ্রাম যেমন ওজনের, এবং মিটার যেমন দৈর্ঘ্যের পরিমাপক, ঠিক তেমনি পণ্য-দ্রব্যসামগ্রী ও সেবার মূল্যের পরিমাপের মাপকাঠি হিসেবে অর্থ ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- রুবেল ১টি কলম ক্রয় করে ১০টাকা দিয়ে । এক্ষেত্রে ১০টাকা হলো ঐ কলমটির মূল্যের পরিমাপক। অর্থের সাহায্যে সহজেই পণ্য ও সেবার মূল্য পরিমাপ করে অতীত ও ভবিষ্যতের পণ্য ও সেবার মূল্য সম্পর্কে তুলনামূলক আলোচনা করা যায়।

(৩) সঞ্চয়ের বাহন (way of savings): উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রীর অধিকাংশ পচনশীল হওয়ায় দ্রব্যসামগ্রীর মাধ্যমে সঞ্চয় করা অসম্ভব। এছাড়া সেবা (service) জীবন্ত উপকরণ হওয়ায় শ্রম ও সেবা সঞ্চয় করে রাখা যায় না। তবে অর্থ দিয়ে সবকিছু বিনিময় করা যায়। তাই এসব দ্রব্যসামগ্রী ও সেবার মূল্য অর্থের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা সম্ভব। বর্তমানে মানুষ তার অর্জিত আয় থেকে ভোগ ব্যয় বাদ দিয়ে উদ্বৃত্ত অংশটুকু অর্থের মাধ্যমে সঞ্চয় করতে পারে। কারণ অর্থের মাধ্যমে সঞ্চয় করা অনেক বেশি নিরাপদ ও তুলনামূলকভাবে স্থায়ী।

(৪) স্থগিত লেনদেনের বাহন (way of stopped transaction): স্থগিত লেনদেন বলতে সাধারণত ভবিষ্যৎ দেনা-পাওনাকে নির্দেশ করে। এ ধরনের দেনা-পাওনাগুলোর হিসাব-নিকাশ অর্থের মাধ্যমেই করা হয়। অর্থের মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ এবং ঐ ঋণ পরিশোধ করা সহজ ও সুবিধাজনক। এর ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নে চালানো যায়। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ ব্যবসায়িক লেনদেন ব্যাংক ড্রাফট, চেক, বিনিময় বিল, প্রভৃতি ও ঋণপত্রের মাধ্যমে সম্পাদন করা হয়। ব্যাংকে আমানত হিসেবে রক্ষিত নগদ অর্থের উপরে ভিত্তি করেই ব্যাংক এসব ঋণপত্র প্রদান করে। আর এ কারণেই অর্থকে ঋণের স্থগিত লেনদেনের বাহন হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

উপরে উল্লেখিত কার্যাবলি ব্যতিত অর্থ সাধারণত মূল্য স্থানান্তরের বাহন, তারল্যের মান ও সামাজিক মর্যাদার প্রতীক হিসেবে কাজ করে। অর্থের এ কার্যাবলি পৃথক নয়, একটি অপরটি থেকে উদ্ভূত ও সম্পর্কিত। এ কারণে বলা হয়, অর্থের কার্যাবলির মাধ্যমে সমাজের সকল ধরনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ সুগম হয়েছে। [সংকলিত]


অর্থের কার্যাবলি আলোচনা কর


Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL


Leave a Reply