অর্থের শ্রেণিবিভাগ | Classification of Money
আমরা সকলেই জানি, সাধারণত পণ্য ও সেবা ক্রয় বিক্রয় এবং দেনা-পাওনা মেটানোর মাধ্যম হিসেবে অর্থ ব্যবহৃত হয়। অর্থ হল যে কোন দেশের সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত এবং প্রচলিত একটি বিনিময়ের পদ্ধতি, যার মাধ্যমে যে কোন পণ্য ও সেবার মূল্য পরিমাপ করা হয়, দেনা-পাওনা মেটানো হয়, ঋণের ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃত হয় এবং সঞ্চয়ের বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ এবং তৈরির উপকরণের উপরে ভিত্তি করে অর্থকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। নিম্নে অর্থের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে আলোচনা করা হল:
(ক) তৈরির উপকরণ অনুসারে অর্থ: তৈরির উপকরণ অনুসারে অর্থকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হল:
ক. ১) ধাতব মুদ্রা (metal coins) ও
ক.২) কাগজি নোট (paper notes)
ক. ১) ধাতব মুদ্রা (metal coins): ধাতু দিয়ে তৈরিকৃত মুদ্রাকে ধাতব মুদ্রা বলে। ধাতব খণ্ড দিয়ে তৈরিকৃত মুদ্রার মাধ্যমে মানুষ দৈনন্দিন জীবনের লেনদেনের কাজ করে থাকে। বাংলাদেশে ৫০ পয়সা, ১ টাকা, ২ টাকা, ৫ টাকা, ইত্যাদি ধাতব মুদ্রা প্রচলিত রয়েছে। জানা যায় যে, ভারতে ১ রুপি, ২ রুপি, ৫ রুপি, ১০ রুপি ইত্যাদি ধাতব মুদ্রা প্রচলিত রয়েছে। সাধারণত ধাতব মুদ্রা যে কোন দেশের সরকার কর্তৃক প্রচলিত হয়।

আবার, ধাতব মুদ্রাকে বস্তুগত মূল্য মানের দিক থেকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন –
ক.১.১। প্ৰামাণিক মুদ্ৰা (authentic coins): যে সব মুদ্রা গলানোর মাধ্যমে ধাতু হিসেবে বিক্রি করলে দৃশ্যমান মূল্যের সমপরিমাণ মূল্য পাওয়া যায়, তাকে প্রামাণিক মুদ্রা বলা হয়।
ক.১.২। প্রতীক মুদ্রা (symbolic coins): যে সব মুদ্রার ধাতব মূল্য তার দৃশ্যমান মূল্যের চেয়ে কম থাকে, তাকে প্রতীক মুদ্রা বলা হয়।
ক.২) কাগজি নোট (paper notes): যে সব মুদ্রা কাগজ দিয়ে তৈরি করা হয়, তাকে কাগজি নোট বা কাগজি মুদ্রা বলা হয়। কাগজের নোটের উপর লিখিত মানই তার মূল্যের প্রকাশক। যা সাধারণত নোটের কাগজটির মূল্যের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। প্রায় সকল দেশেই সরকারি নির্দেশে কাগজি নোট বা কাগজি মুদ্রা দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক প্রচলিত (জারি) করা হয়।
বাংলাদেশের কাগজি নোট বা কাগজি মুদ্রা হিসেবে ১ টাকা, ২ টাকা, ৫ টাকা, ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৫০ টাকা, ১০০ টাকা, ৫০০ টাকা ও ১০০০ টাকার নোট প্রচলিত রয়েছে। জানা যায় যে, ভারতের কাগজি নোট বা কাগজি মুদ্রা হিসেবে ৫ রুপি, ১০ রুপি, ২০ রুপি, ৫০ রুপি, ১০০ রুপি, ৫০০ রুপি ও ২০০০ রুপির নোট প্রচলিত রয়েছে।
আবার, কাগজি মুদ্রাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন –

ক.২.১) রূপান্তরযোগ্য মুদ্রা: যে সব কাগজি নোট বা মুদ্রার পরিবর্তে চাওয়া মাত্র সরকার সমান মূল্যের দেশীয় মুদ্রা দিতে বাধ্য থাকে, সে সব মুদ্রাকে রূপান্তরযোগ্য মুদ্রা বলা হয়। বাংলাদেশে রূপান্তরযোগ্য কাগজি মুদ্রা বা নোট হল- ৫ টাকা, ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৫০ টাকা, ১০০ টাকা, ৫০০ টাকা ও ১০০০ টাকা।
ক.২.২) রূপান্তর অযোগ্য মুদ্ৰা: যে সব কাগজি নোট বা মুদ্রার পরিবর্তে সরকারের কাছ থেকে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা, রূপা পাওয়া যায় না, সে সব মুদ্রাকে রূপান্তর অযোগ্য মুদ্রা বলা হয়। বাংলাদেশে রূপান্তর অযোগ্য কাগজি মুদ্রা বা নোট হল- ১ টাকা ও ২ টাকা।
(খ) গ্রহণের বাধ্যবাধকতা অনুসারে অর্থ: গ্রহণের বাধ্যবাধকতার দিক থেকে অর্থকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যেমন –
খ.১) বিহিত অর্থ এবং
খ.২) ব্যাংক সৃষ্ট অর্থ।
খ.১) বিহিত অর্থ: সরকারি আইন দিয়ে প্রচলিত অর্থকে বিহিত অর্থ বলে। বাংলাদেশের বিহিত অর্থ সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক প্রচলিত ধাতব মুদ্রা ও কাগজি নোট নিয়ে গঠিত। বিহিত অর্থকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
খ.১.১) অসীম বিহিত অর্থ ও
খ.১.১) সসীম বিহিত অর্থ।
খ.১.১) অসীম বিহিত অর্থ: যে বিহিত অর্থ দিয়ে আইনগত যে কোনো পরিমাণ লেনদেন করা যায় এবং দেনা-পাওনা পরিশোধ করলে পাওনাদার তা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকে, তাকে অসীম বিহিত অর্থ বলে। বাংলাদেশের অসীম বিহিত অর্থ হল- ৫ টাকা, ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৫০ টাকা, ১০০ টাকা, ৫০০ টাকা ও ১০০০ টাকার নোট ।
খ.১.১) সসীম বিহিত অর্থ: যে বিহিত অর্থ দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত লেনদেন করা যায়, আইনগতভাবে জনগণকে অধিক গ্রহণে বাধ্য করা যায় না এবং জনগণ তার ইচ্ছা অনুযায়ী তা গ্রহণ করতে পারে, তাকে সসীম বিহিত অর্থ বলে। বাংলাদেশের সসীম বিহিত অর্থ হল – ৫০ পয়সা, ১ টাকা, ২ টাকা ও ৫ টাকার ধাতব মুদ্ৰা ।
খ.২) ব্যাংকসৃষ্ট অর্থ: ব্যবসায়িক লেনদেন ও দেনা-পাওনা পরিশোধ করতে বর্তমানে ব্যাংক সৃষ্ট অর্থ বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে মানুষ গ্রহণ করে থাকে। ব্যাংক সৃষ্ট অর্থকে ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সৃষ্ট অর্থও বলা হয়। তবে ব্যাংক হিসাব বা ব্যাংক সৃষ্ট অর্থ কাউকে গ্রহণ করতে বাধ্য করা যায় না ৷ এরূপ ভাবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আমানত সৃষ্টি কিংবা ঋণ প্রদান করে অর্থ সৃষ্টি করতে পারে ।

বর্তমানে ব্যাংকসৃষ্ট আমানত বা ওভার ড্রাফটের বিপরীতে চেক কেটে লেনদেন করা যায়। ব্যাংকসৃষ্ট আমানত বা হিসাবকে অর্থ হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশে ব্যাংকসৃষ্ট অর্থ হল- চলতি হিসাবে আমানত এবং সঞ্চয়ী হিসাবে আমানত। এ ধরনের আমানত সাধারণত চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করা যায়। তাছাড়া ব্যাংক কর্তৃক প্রচলিত ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। [সংকলিত]
অর্থনীতি অনুসারে অর্থের প্রকারভেদ
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL