আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের শ্রেণিবিভাগ

দুই বা ততোধিক স্বাধীন দেশের মধ্যে থেকে যে বাণিজ্য পরিচালনা করা হয় তাকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। অন্যভাবে বলতে গেলে, দুই বা ততোধিক দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদিত হয় তাকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলে। ক্রয়-বিক্রয়ের প্রকৃতি অনুসারে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে সাধারণত তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যেমন:

ক. আমদানি বাণিজ্য (import trade)
খ. রপ্তানি বাণিজ্য (export trade)
গ. পুনঃরপ্তানি বাণিজ্য (re-export Trade)। নিচে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের এসব শ্রেণি নিয়ে আলোচনা করা হলো:

ক. আমদানি বাণিজ্য (import trade): বিশ্বের কোনো দেশই প্রয়োজনীয় দ্রব্যসমূহ ও সেবাকর্ম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তাই দেশের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য ও সেবাসমূহ ক্রয় করতে হয়। আর বিদেশ থেকে এ পণ্য ক্রয় করার প্রক্রিয়াকে আমদানি বাণিজ্য বলে। আমদানি বাণিজ্য সম্পর্কে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।

১। Skinner and Invancevich এর মতে, “Importing is purchasing goods made in another country” অর্থাৎ, অন্য কোনো দেশে তৈরি পণ্য নিজ দেশে ক্রয় করে আনাকে আমদানি বলে।

২। Y.P.Singh and Saud এর মতে, “Import is the buying of goods or services from other countries in exchange for foreign currency” অর্থাৎ অন্য দেশ থেকে পণ্য বা সেবা বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে কিনে আনাই হলো আমদানি।

৩। David J. Rachman ও তাঁর সহযোগীদের মতে, “Importing is purchasing goods or services from another country and bringing them into once own country” অর্থাৎ বিদেশ থেকে পণ্য দ্রব্য বা সেবা ক্রয় করে কেউ নিজ দেশে আনলে তাকে আমদানি বাণিজ্য বলে।

সুতরাং বিশেষজ্ঞদের মতামত ও বক্তব্যের আলোকে বলা যায়, কোনো দেশ তার নিজস্ব চাহিদা পরিপূরণের নিমিত্তে বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে দ্রব্য ও সেবাসমূহ ক্রয় করাকে আমদানি বলে।

খ. রপ্তানি বাণিজ্য (export trade): আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হল রপ্তানি বাণিজ্য। একটি স্বাধীন অখণ্ড দেশ যদি আরেকটি স্বাধীন অখন্ড দেশে পণ্য ও সেবাসমূহ বিক্রয় করে থাকে তাকে রপ্তানি বাণিজ্য বলে। অর্থাৎ বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে দেশের সীমান্তের বাহিরে পণ্য দ্রব্য প্রেরণকে রপ্তানি বলা হয়। কোনো দেশে আমদানি অপেক্ষা রপ্তানির পরিমাণ বেশি হলে সে দেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। রপ্তানি বাণিজ্য সম্পর্কে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।

১। Skinner and Ivancevich এর মতে, “Exporting is selling domestic made goods in another country.” অর্থাৎ দেশের তৈরি পন্য অন্য কোনো দেশে বিক্রয় করাকে রপ্তানি বাণিজ্য বলে।

২। David J. Rachman ও তার সহযোগিগণ বলেন, “Exporting is selling in shipping goods or service to another country”. অর্থাৎ রপ্তানি হলো অন্য কোনো দেশে পণ্যসামগ্রী বা সেবা বিক্রয় ও জাহাজিকরণ।

৩। P. H. Collin বলেন, “Export means goods sent to a foreign country be sold”. অর্থাৎ বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে নিয়ে বিদেশে পণ্য প্রেরণই হলো রপ্তানি বাণিজ্য।

উপরের অংশ থেকে বলা যায় যে, অন্য দেশের আমদানিকারকের ফরমায়েশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট রীতি পালন করে রপ্তানিকারক কর্তৃক বিদেশে পণ্য প্রেরণ করাকে রপ্তানি বাণিজ্য বলে।

গ. পুনঃরপ্তানি বাণিজ্য (re-export Trade): বিদেশ থেকে পণ্য ক্রয় করে বা বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করে তা সরাসরি প্রক্রিয়াজাত করে পুনরায় তৃতীয় কোনো দেশে রপ্তানি করা হয় তাকে পুনঃরপ্তানি বলে। যেমন: চীন থেকে কাপড় আমদানিপূর্বক তা তৈরি পোশাকে রূপান্তর করে কানাডায় রপ্তানি করা হলে তাই পুনঃরপ্তানি বাণিজ্য।

১. J. C Sinha ও V. N Mugali মতে, “When goods are imported from foreign country and are exported to buyers in some other foreign countries, it is called re-exported trade.” অর্থাৎ, যখন বিদেশ থেকে পণ্য দ্রব্য আমদানি করে এনে অন্য কোনো দেশের বিক্রেতার নিকট বিক্রয় করা হয় তখন তাকে পুনঃরপ্তানি বাণ্যিজ্য বলে।

সুতরাং, যারা কোনো দেশ হতে পণ্য দ্রব্য আমদানি করে তৃতীয় কোনো দেশের আমদানিকারকের নিকট রপ্তানি করে তাদেরকে পুনঃরপ্তানিকারক এবং তাদের ব্যবসায়কে পুনঃরপ্তানি বাণিজ্য বলে। [শারমিন জাহান সায়মা]


আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রকারভেদ


Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL


Leave a Reply