বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য

দুই বা ততোধিক স্বাধীন সার্বভৌম দেশের মধ্যে যে বাণিজ্য পরিচালিত হয় তাকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলে। বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে দ্রব্যসামগ্রীর অন্য দেশে বিনিময়ই হল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা নিচে আলোচনা করা হলো:

১। আমদানি নির্ভরতা: বাংলাদেশ যে পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী বিদেশে রপ্তানি করে, তা অপেক্ষা অধিক পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী বিদেশ থেকে আমদানি করে থাকে। যেমন – বাংলাদেশ ভারত থেকে সবচেয়ে পরিমাণে দ্রব্যসামগ্রী আমদানি করে থাকে।

২। শিল্পজাত দ্রব্য আমদানি: বাংলাদেশ বিদেশ থেকে শিল্পজাত দ্রব্যসামগ্রী আমদানি করে থাকে। যেমন – কলকব্জা, ইস্পাত, যন্ত্রপাতি, ওষুধ, রাসায়নিক দ্রব্য, ইত্যাদি।

৩। দ্রব্য রপ্তানি এবং অধিক সংখ্যক দ্রব্য আমদানি: বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাত্র কয়েকটি দ্রব্য রপ্তানি করে। বাংলাদেশের রপ্তানিকৃত দ্রব্যের মধ্যে কাঁচা পাট, পাটজাত দ্রব্য, চা, চামড়া, মাছ, প্রভৃতি প্রধান। কিন্তু বাংলাদেশের আমদানিকৃত দ্রব্যের সংখ্যা অগণিত।

৪। কাঁচামাল রপ্তানি: বাংলাদেশ বিদেশে সাধারণত কাঁচামাল রপ্তানি করে। বাংলাদেশের মোট রপ্তানির শতকরা ৬৫ ভাগই হল কাঁচামাল ও কৃষিজাত দ্রব্য।

৫। শিল্পজাত ভোগ্য ও মূলধনী দ্রব্য আমদানি: বাংলাদেশ বহুসংখ্যক শিল্পজাত ভোগ্য ও মূলধনী দ্রব্য বিদেশ থেকে আমদানি করে। শিল্পের অনুন্নতির কারণে প্রয়োজনীয় আরামপ্রদ ও বিলাসী শিল্পজাত ভোগ দ্রব্য বিপুল পরিমাণে প্রতি বছর আমদানি করে।

৬। জনশক্তি রপ্তানি: জনশক্তি রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের এক বৃহৎ অংশ অর্জিত হয়। মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আজ বাংলাদেশের দক্ষ ও অদক্ষ জনসমষ্টি কর্মরত। এ সকল জনসমষ্টি দেশে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করছে।

৭। খাদ্যশস্য আমদানি: খাদ্য ঘাটতি পূরণের জন্য বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে বাংলাদেশকে খাদ্যদ্রব্য আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশ প্রতি বছর গড়ে ২৫ – ৩০ লক্ষ টন খাদ্য আমদানি করে থাকে।

৮। মুষ্টিমেয় দেশের সাথে বেশিরভাগ বাণিজ্য: বাংলাদেশের বেশির ভাগ বাণিজ্য মাত্র কয়েকটি দেশের সাথে সংঘটিত হয়ে থাকে। এসব দেশ হল যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, কানাডা, ভারত, জাপান ও চীন।

৯। প্রতিবেশী দেশসমূহের সাথে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক: ভারত, মায়ানমার, নেপাল, শ্রীলংকা, প্রভৃতি প্রতিবেশী দেশসমূহের সাথে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক বিদ্যমান। সার্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়াতে প্রতিবেশী দেশসমূহের সাথে বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত হওয়ার সুযোগ বেড়েছে।

১০। প্রতিকূল ভারসাম্য: বাংলাদেশ প্রধানত কাঁচামাল ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি করে। বৈদেশিক বাজারে এসব দ্রব্যের চাহিদা স্থিতিস্থাপক। পক্ষান্তরে, বাংলাদেশ বিদেশ হতে প্রধানত শিল্পের প্রয়োজনীয় কলকব্জা ও যন্ত্রপাতি আমদানি করে। এসব দ্রব্যের চাহিদা অস্থিতিস্থাপক। এর ফলে সর্বদা প্রতিকূল ভারসাম্য অবস্থা বিরাজ করে।

১১। নৌপথে বাণিজ্য: বাংলাদেশের বহির্বাণিজ্যের অধিকাংশই সমুদ্রপথে পরিচালিত হয়ে থাকে। বৈদেশিক বাণিজ্যে আমদানি-রপ্তানি চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের মাধ্যমে সংঘটিত হয়ে থাকে।

১২। ওয়েজ আর্নার্স স্কিম: বিদেশে কর্মরত প্রবাসী ব্যক্তিদের জন্য বাংলাদেশে ওয়েজ আর্নাস স্কিম প্রবর্তন করা হয়েছে। ওয়েজ আর্নার্স স্কিমের আওতায় বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দ্বারা বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী আমদানি করা হয়।

১৩। বেসরকারি খাত: স্বাধীনতার পর পরই দেশে সরকারে খাতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রিত হত। কিন্তু বেশ কিছুদিন হল বাংলাদেশে বাজার অর্থনীতি চালু হয়েছে। ফলে বর্তমানে বৈদেশিক বাণিজ্যে বেসরকারি খাতের প্রাধান্য লক্ষণীয়। [শারমিন জাহান সায়মা]


সহায়িকা: জোয়ারদার, সুকেশ চন্দ্র; আলম, মোঃ শাহ; আখতার, সুফিয়া ও ইসলাম, মোঃ নজরুল, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, (২০২০), মিলেনিয়াম পাবলিকেশন্স, ঢাকা, পৃষ্ঠা ২৮।


বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্যসমূহ


Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL


Leave a Reply