আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
বিশ্ব অর্থনীতিতে বর্তমান বাণিজ্য ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। যে কোনো দেশের জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে অন্য দেশের সাথে নির্ভরশীলতার সম্পর্ক গড়ে তুলে। তাই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। নিম্নে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো:
১। বিশ্বের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি: সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিষয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য। রবার্টসনের ভাষায় ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য’। এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সূচিত হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দ্বারা সারা বিশ্বের উৎপাদন ও ভোগের পরিমাণ বাড়ে।
২। সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার: যে কোনো দেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য লিপ্ত হলে সে দেশটি অবশ্যই আপেক্ষিক ব্যয় সুবিধা অনুযায়ী যে দ্রব্য উৎপাদনে ব্যয় কম সেই দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করে। ফলে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হবে।
৩। উৎপাদন ব্যয় হ্রাস: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আপেক্ষিক সুবিধা অনুযায়ী দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম উৎপাদন করা হয়। ফলে বিশ্বের মোট উৎপাদন বাড়ে। আর বেশি উৎপাদন দ্বারা ব্যয় হ্রাস পায়।
৪। দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে মুক্তি: অনুন্নত বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র। দারিদ্র্যের এ দুষ্টচক্র থেকে মুক্তি পেতে হলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি সর্বাধিক প্রয়োজন। বিনিয়োগ বাড়াতে গেলে মূলধন সংগ্রহের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে রপ্তানি বাণিজ্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৫। আয় ও নিয়োগ বৃদ্ধি: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দ্বারা উৎপাদন ও আয় বাড়ে। আয় ও নিযোগ একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আয় ও নিয়োগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৬। দেশীয় দ্রব্যের বাজার সৃষ্টি: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে এক দেশের দ্রব্যসমূহ অন্য দেশে প্রবেশ করতে পারে। যে কোনো দেশ যদি তার দ্রব্যসমূহ বিশ্বব্যাপী বাজারে প্রসারিত করতে চায়, তাহলে তা শুধু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পক্ষেই সম্ভব। যেমন: বাংলাদেশের পাট এর বাজার বিশ্বব্যাপী প্রসারিত।
৭। জনশক্তির মানোন্নয়ন: বিভিন্ন দেশের মধ্যে শুধু দ্রব্য সামগ্র্রী আদান-প্রদান করা হয় না। বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দ্বারা কারিগরি জ্ঞান ও কলাকৌশল আদান-প্রদান করা হয়ে থাকে। যার মাধ্যমে অদক্ষ জনশক্তিকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করা হয়।
৮। বিশ্ব কল্যাণ বৃদ্ধি: অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, Goods are good অর্থাৎ যত দ্রব্য তত ভালো। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বিশ্ব উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। উৎপাদন না করেও বাণিজ্যের মাধ্যমে অনুৎপাদিত দ্রব্য ভোগ করা যায়।
৯। একচেটিয়া কারবার প্রতিরোধ: কোনো দেশ যদি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে লিপ্ত না হয়ে থাকে, তাহলে সে দেশের উৎপাদকগণ একচেটিয়া ক্ষমতা ব্যবহার করে ছোট মানের দ্রব্য অধিক দামে বিক্রয় করে থাকে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাণিজ্য থাকলে বিভিন্ন দেশের দ্রব্যসমূহের মধ্যে প্রতিযোগিতা বিরাজ করে। ফলে একচেটিয়া কারবারী অবস্থাটি একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজারের দিক ধাবিত হয়।
১০। আন্তর্জাতিক সম্প্রীতি: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। ফলে এর ধারা শিক্ষা, সংস্কৃতি ও জ্ঞানের আদান-প্রদান ঘটে। যা বিশ্ব বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও সম্প্রীতি গড়ে তুলতে সাহায্যে করে।
১১। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। ফলে যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন: জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, সাইক্লোন, বন্যা প্রভৃতি হলে বৈদেশিক সাহায্যে এবং দ্রব্যসামগ্রী আমদানির মাধ্যমে দুর্যোগকে খুব সহজেই মোকাবিলা করা যায়।
পরিশেষে বলা যায় যে, দারিদ্র্য বিমোচন ও দেশের মানবসম্পদসহ উৎপাদন বৃদ্ধি, মোট উৎপাদন বৃদ্ধি, উন্নত দেশের সাথে অভিজ্ঞতা, কারিগরি জ্ঞান প্রভৃতি আদান-প্রদান ও বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। [শারমিন জাহান সায়মা]
✅ বিশ্ব অর্থনীতিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
✅ Importance and Necessity of International Trade in the Global Economy
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL