আয়োডিন | Iodine
আয়োডিন একটি রাসায়নিক মৌল। এটি এমন একটি খনিজ, যা থাইরয়েড গ্রন্থির দ্বারা থাইরয়েড হরমোন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয়। থাইরয়েড হরমোন শরীরের বিকাশ এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। আয়োডিনের অভাবে প্রথমত যে সমস্যা বেশি দেখা যায়, তা হলো গলগন্ড। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে গলগণ্ড রোগ বেশি হয়, কারণ সেখানে জমিতে আয়োডিন কম। এবং এদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে আয়োডিনের অভাবজনিত রোগ তুলনামূলক কম লক্ষ্য করা যায়, কেননা সেখানকার মাটি ও পানি লবনাক্ত থাকার কারণে আয়োডিন পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে।
আয়োডিন থাইরক্সিনের একটি উপাদান। একজন সাধারণ প্রাপ্তবয়স্কের ওজনের প্রায় ২৫ মিলিগ্রাম, মাত্র ১০ মিলিগ্রাম আয়োডিন থাকে৷ প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে সামগ্রিকভাবে প্রায় ৫০ মিলিগ্রাম আয়োডিন থাকে৷ আয়োডিন থাইরয়েড গ্রন্থির শক্তি বিপাক এবং শরীরের বৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রাপ্তবয়স্কদের দেহের থাইরয়েড গ্রন্থিতে থাইরোগ্লোবুলিন আয়োডিন আকারে সংরক্ষিত থাকে, যা থাইরক্সিন (T4) এবং ট্রাই-আইডোথাইরোনিন (T3) উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য।
আয়োডিনের উৎস:
1. আয়োডিনের সেরা উৎস: সাদা মাছ, ডিম, যকৃতের তেল, সামুদ্রিক খাবার ও মাছ; ও
2. অল্প পরিমাণে উৎস: মাংস, দুধ, শাকসবজি।
কৃত্রিম উৎস: আয়োডিনযুক্ত লবণ।
আয়োডিনের কার্যকারিতা:
1. থাইরয়েড হরমোন-থাইরক্সিন (Ta) এবং ট্রাই আয়োডোথাইরোনিন (T1) এর সংশ্লেষণের জন্য আয়োডিন প্রয়োজন;
2. সমস্ত মানুষের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বিকাশ এবং সুস্থতার জন্য অপরিহার্য;
3. টিস্যু দ্বারা অক্সিজেন খরচের জন্য আয়োডিন প্রয়োজন;
4. স্নায়বিক এবং পেশী টিস্যু, রক্ত সঞ্চালন এবং পুষ্টির বিপাক সঠিকভাবে কাজ করার জন্য আয়োডিন প্রয়োজন।
আয়োডিনের অভাবজনিত রোগ:
A. আয়োডিনের ঘাটতিজনিত ব্যাধি:
এন্ডেমিক গলগন্ড: আয়োডিনের অভাবজনিত রোগ গলগণ্ড খুবই পরিচিত, এ সমস্যাটি বেশি লক্ষ্য করা যায়। শিশুদের ক্ষেত্রে আয়োডিনের তীব্র ঘাটতির ফলে বৃদ্ধিতে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এ অবস্থা ক্রেটিনিজম নামে পরিচিত। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে আয়োডিনের ঘাটতি থাকায় ঐ অঞ্চলে শিলা এবং মাটিতে আয়োডিনের পরিমাণ কম। আয়োডিনের অভাবে থাইরয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে যায় এবং গলগণ্ড রোগের সৃষ্টি হয়।
B. আয়োডিনের অভাবের অন্যান্য গুরুতর রোগ:
আয়োডিন শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ না থাকলে শরীরে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়, তার মধ্যে আরও আছে-
1. হাইপোথাইরয়েডিজম।
2. প্রতিবন্ধী শারীরিক বিকাশ এবং প্রতিবন্ধী মানসিক কার্যকারিতা।
3. স্বতঃস্ফূর্ত গর্ভপাত এবং মৃতপ্রসবের হার বৃদ্ধি।
4. স্নায়বিক ক্রেটিনিজম, বধির, মিউটিজম এবং
5. মাইক্সো-এডিমেটাস ক্রিটিনিজম, বামনতা এবং গুরুতর প্রতিবন্ধকতা।
আয়োডিনের দৈনিক প্রয়োজনীয়তা: আয়োডিনের স্বাভাবিক মাত্রা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
শিশু ও শৈশবকালে: 40-120 μg
কৈশোরে: 140-150 μg
প্রাপ্তবয়স্ক: 150-160 μg
গর্ভবতী মা: 175 μg
স্তন্যদানকারী মা: 175 μg [ইশরাত জাহান মিম]
সহায়িকা: Al-Hasib, Dr. Tanvir Islam, Basic Science (2019), Diploma in Nursing Science and Midwifery, Neuron Publication, Dhaka-1205, Page: 165-167.