উপাত্ত এবং উপাত্তের শ্রেণিবিভাগ

উপাত্ত (data) বলতে সাধারণত বিশেষ জ্ঞান লাভের জন্য কোনো বিষয়ের উপর সংগৃহীত খবরাদি বা তথ্যকে বুঝায়। তবে, বিশেষ জ্ঞান লাভের জন্য মাঠ পর্যায় থেকে সংগৃহীত তথ্যসমূহের সংখ্যাগত রূপই হলো উপাত্ত। আবার, পরিসংখ্যান সমস্যার সমাধানের জন্য সংগৃহীত খবরাদি বা তথ্যাদির সংখ্যাত্মক বিবৃতিকে পরিসংখ্যানিক উপাত্ত বলা হয়। সুতরাং বলা যায়, অনুসন্ধানের মাধ্যমে সুশৃঙ্খলভাবে পরিসংখ্যানিক কলাকৌশল প্রয়োগ করে তথ্য সংগ্রহ করলে তারা পরিসংখ্যানিক উপাত্ত হিসেবে পরিগণিত হবে। এসব সংখ্যাত্মক উপাত্তই পরিসংখ্যান পদ্ধতির মূলভিত্তি। নিম্নে পরিসংখ্যানিক উপাত্তের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো:

১. সংখ্যাত্মক বিবৃতির মাধ্যমে উপাত্ত নির্দেশিত হয়;
২. উপাত্তগুলো পারস্পরিক সম্পর্কে সম্পর্কিত হয়;
৩. উপাত্ত কোনো বিষয়ের উপর বিশেষ জ্ঞান লাভের জন্য সংগৃহীত হয়;

পরিসংখ্যানিক অনুসন্ধানে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার নিমিত্তে সুস্পষ্ট ও সংখ্যাত্মক উপাত্তের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তাই উপাত্ত পরিসংখ্যানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচ্য। সংগৃহীত উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে পরিসংখ্যানের পরবর্তী কার্যক্রম; যেমন- তথ্য বিশ্লেষণ, উপস্থাপন, প্রক্রিয়াকরণ, ইত্যাদি সঠিকভাবে সম্পাদিত হতে পারে। পরিসংখ্যানের পরবর্তী কার্যক্রমসমূহ অনুসন্ধান ক্ষেত্র হতে সংগৃহীত সংখ্যাত্মক উপাত্তের উপর সম্পূর্ণরূপেই নির্ভরশীল। আর এ কারণে সংগৃহীত সংখ্যাত্মক উপাত্তগুলো যথার্থ ও নির্ভুল হওয়া খুবই জরুরি।

উপাত্তের শ্রেণিবিভাগ: উপাত্ত সংগ্রহের উৎস ও পদ্ধতির ভিত্তিতে পরিসংখ্যানের উপাত্তকে সাধারণত দু’টি ভাগ দেখা যায়। যেমন –
১. প্রাথমিক তথ্য বা মৌলিক উপাত্ত (primary data) ও
২. মাধ্যমিক তথ্য বা মূলজ উপাত্ত (secondary data)। নিচে এদের বর্ণনা করা দেয়া হলো:

১. প্রাথমিক উপাত্ত বা মৌলিক উপাত্ত (primary data): যে সমস্ত উপাত্ত অনুসন্ধানের মাধ্যমে সরাসরি উপাত্তের প্রকৃত উৎস বা মূল হতে সংগৃহীত হয়ে থাকে তারা প্রাথমিক উপাত্ত বা মৌলিক উপাত্ত হিসেবে পরিচিত। উদাহরণস্বরূপ, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কোনো গবেষণা কার্যসম্পাদনের উদ্দেশ্যে অনুসন্ধান ক্ষেত্র হতে সংগৃহীত উপাত্তই হলো প্রাথমিক বা মৌলিক উপাত্ত।

২. মাধ্যমিক বা মূলজ উপাত্ত (secondary data): যে সকল উপাত্ত সরাসরি উৎস বা মূল হতে সংগৃহীত নয় এবং অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সংগৃহীত উপাত্ত হতে প্রয়োজন মতো সংগ্রহ করা হয়, তাকে মাধ্যমিক বা মূলজ উপাত্ত বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাঁর নিজস্ব গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য যদি ব্যবহার করেন, তবে এটিই হবে মাধ্যমিক বা মূলজ তথ্য। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট কোনো উপাত্ত হবে প্রাথমিক উপাত্ত। আবার ঐ প্রাথমিক উপাত্তই অন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট মাধ্যমিক বা মূলজ উপাত্ত হিসেবে আখ্যায়িত হয়।

বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের পরিমাপের প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে পরিসংখ্যান উপাত্তকে নিম্নের দু’টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যেমন –
১. পরিমাণগত বা পরিমাণবাচক উপাত্ত (quantitative data) ও
২. গুণগত বা গুণবাচক উপাত্ত (qualitative data)। নিম্নে এদের বর্ণনা দেয়া হলো:

১. পরিমাণগত বা পরিমাণবাচক উপাত্ত (quantitative data): যে সমস্ত বৈশিষ্ট্যে তথ্যাদিকে পরিমাণ দ্বারা বা সরাসরি সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করে পরিমাপ করা হয়, তাদেরকে পরিমাণগত বা পরিমাণবাচক তথ্য বলা হয়। যেমন- উচ্চতা, ওজন, মূল্য, বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্র সংখ্যা, বিভিন্ন অফিসের কর্মচারীর সংখ্যা ইত্যাদি পরিমাণগত বা পরিমাণবাচক বৈশিষ্ট্যের আওতাভুক্ত। পরিসংখ্যানের ভাষায় এগুলোকে চলকও বলা হয়।

২. গুণগত বা গুণবাচক উপাত্ত (qualitative data): পরিসংখ্যানে যে সমস্ত বৈশিষ্ট্যকে গুণের মাধ্যমে সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা হয়, অথচ সরাসরি সংখ্যা বা পরিমাণ দ্বারা পরিমাপ করা যায় না তাদেরকে গুণগত বা গুণবাচক উপাত্ত বলা হয়। এ ধরনের তথ্যাদি প্রথমে বিশেষ কোনো গুণ বা অবস্থা দ্বারা প্রকাশ করা হয় এবং পরে উক্ত গুণের ভিত্তিতে তাদেরকে গণনার মাধ্যমে সংখ্যায় পরিমাপ করা হয়। যেমন- ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, মেধা, ধর্ম ইত্যাদি গুণগত যা গুণবাচক তথ্য। কারণ পরিমাপের ক্ষেত্রে এগুলো সরাসরি সংখ্যার আওতাভুক্ত হয়। পরিসংখ্যানে এ ধরনের উপাত্তকে বিশেষক (attribute) বলা হয়।

এগুলো ছাড়াও পরিসংখ্যান ক্ষেত্রে সময়ভিত্তিক (time series) উপাত্ত ও অবস্থানভিত্তিক তথ্যের প্রচুর ব্যবহার দেখা যায়। [শারমিন জাহান সায়মা]


সহায়িকা: আলাউদ্দিন, প্রফেসর ড. মোঃ; উদ্দীন, প্রফেসর ড. মোঃ সেরাজ; আতিকুজ্জামান, এম. এম.; প্রধান, মোঃ সাইফুল্লাহ; (জানুয়ারি, ২০১৯); ব্যবসায় গবেষণা Business Research; গ্রন্থ কুটি: ঢাকা; পৃষ্ঠা- ১২৮-১৩০।


উপাত্ত কত প্রকার?


Follow Us in Our Youtube Channel: GEONATCUL


Leave a Reply