মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় কর্মী প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিবেশ নিরাপদ ও উৎপাদনশীল রাখা এবং সমস্ত কার্যক্রম প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের দিকে নিবেদিত করা। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণের জন্য কর্মী ও ব্যবস্থাপকদের প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। প্রশিক্ষণের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো উপযুক্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্মী ও ব্যবস্থাপকদের প্রশিক্ষিত করে প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগকে সহযোগিতা প্রদান করা। নিম্নে প্রশিক্ষণের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে তুলে ধরা হলো।

১. প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা (concept about the organization): প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়ার পর কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেয়া হয়। এতে কর্মীদেরকে প্রতিষ্ঠানের রীতি-নীতি, কার্য সম্পাদনের কৌশল, প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ সম্পর্কে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা হয়। প্রশিক্ষণের ফলে কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্তরের সাথে পরিচিত হয় এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে উৎসাহিত হয়।

২. প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা (organisational benefits): প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের এমনভাবে দক্ষ করে গড়ে তোলা হয়, যাতে তারা প্রতিষ্ঠানের কৌশলগত পরিকল্পনা, মানব সম্পদ পরিকল্পনা (কর্মী নিয়োগ, নির্বাচন, পদোন্নতি, ইত্যাদি) সঠিক ও কার্যকরভাবে প্রণয়ন করতে পারে। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়।

৩. দক্ষতা বৃদ্ধি (increasing skills): প্রশিক্ষণের ফলে প্রতিষ্ঠানের কর্মী দক্ষতার স্তর বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। ফলে তারা প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে পারে। আর এতে কর্মীর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

৪. সময় জ্ঞান (time knowledge): সঠিক সময়ে কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য কর্মীদের সময় সম্পর্কে জ্ঞান দেয়া হয়। ফলে কর্মীরা যথাসময়ে কার্যাদি সম্পাদন করতে পারে এবং প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

৫. উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি (enhancing productivity): প্রশিক্ষণের ফলে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা অধিক পরিমাণ কর্মদক্ষতা অর্জন করে। ফলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। কেননা কর্মীরা যত দক্ষ হবে উৎপাদন তত বেশি হবে।

৬. পুনঃসচেতন (reactive): অনেক সময় প্রতিষ্ঠানের কর্মী কাজ করতে করতে বিরক্ত হয়ে পড়েন। ফলে তারা কাজে উৎসাহ হারাতে থাকে। তাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের তাদের কর্ম সম্পর্কে সচেতন করে তোলা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।

৭. অপচয় হ্রাস (eliminating wastages): প্রশিক্ষণের ফলে কর্মীদের সচেতনতা বৃদ্ধি পায় এবং সম্পদে সদ্ব্যবহার নিশ্চিত হয়। ফলে অপচয় অনেকাংশে কমে যায়।

৮. মনোভাব পরিবর্তন (change in attitude): প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের সাধারণ মনোভাব পরিবর্তন করে প্রতিষ্ঠানের কার্যোপযোগী করা হয়।

৯. ঝুঁকি হ্রাস (reducing risk): কর্মীদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দিলে তারা ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো অধিক সতর্কতা সাথে করে থাকে। ফলে একদিকে ঝুঁকি কমানো যায়, অন্যদিকে অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়।

১০. আত্মনির্ভরশীল (self-dependence): সঠিকভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীরা তাদের কাজের প্রতি অধিক পারদর্শিতা অর্জন করে এবং তাদের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। ফলে অন্যের তদারকি ছাড়াই তারা কার্য সম্পাদন করতে পারে।

১১. কর্মে উৎসাহী ও শ্রম ঘূর্ণায়মানতা হ্রাস (encourage to work and reduce turnover): যথার্থ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীরা কাজের প্রতি আনন্দ খুঁজে পায়, ফলে মনোযোগসহ কাজ করতে পারে। এতে করে তারা অধিক পরিমাণ কার্যানুরাগী হয় এবং প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করার প্রবণতা হ্রাস পায়।

১২. নির্বাহী পর্যায়ে কার্য সম্পাদন (functioning in executive level): প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের পদোন্নতির উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়। এতে তারা পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে নির্বাহী পর্যায়ে কার্য সম্পাদন করতে পারে।

১৩. তথ্য সরবরাহ (providing information): বর্তমান যুগ তথ্য প্রবাহের যুগ। সঠিক তথ্য ছাড়া বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়া অসম্ভব। তাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদেরকে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ক্ষেত্রের তথ্য প্রবাহ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেয়া প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।

পরিশেষে বলা যায়, পরিবর্তিত অবস্থার সাথে তাল মেলানোর জন্য প্রতিষ্ঠানের নতুন কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও পুরাতন কর্মীদের প্রযুক্তি ও পরিবর্তিত অবস্থার সাথে খাপ খাওয়ানো যে কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণের মুখ্য উদ্দেশ্য। [শারমিন জাহান সায়মা]


সহায়িকা: রেজা, প্রফেসর আজিজ আহমেদ সাদেক; হোসেন, মোঃ আলতাফ; হোসেন, মোঃ ইব্রাহিম; সরকার, সমাপন; সম্পাদনায়: এম. এ. কালাম; , (২০১৯); প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন, ঢাকা: কমার্স পাবলিকেশন্স; পৃষ্ঠা ৯৫ – ৯৬।


Follow Us in Our Youtube Channel: GEONATCUL


Leave a Reply