কার্য বর্ণনা কি এবং কার্য বর্ণনার বৈশিষ্ট্য
কার্য বর্ণনা (job description) হলো কার্য বা কাজ সম্পর্কিত বিবরণ। অর্থাৎ, একটি প্রতিষ্ঠান কী কী কাজ করবে, এবং কিভাবে করবে, তার পূর্ণ বিবরণ এতে দেয়া থাকে। সাধারণত কার্য বর্ণনা বলতে প্রতিষ্ঠানের সকল কাজ সম্পর্কে যে বর্ণনা বা বিবরণ দেয়া হয় তাকে বুঝায়। ব্যাপক অর্থে বলা যায় যে, কোনো কর্মীকে কাজে নিয়োগ করে তাকে দিয়ে কী কাজ করানো হবে, তার দায়িত্ব কী কী হবে, সেই কাজের পারিশ্রমিক কত হবে অর্থাৎ সকল কাজের বর্ণনা উল্লেখ করাকেই কার্য বর্ণনা বা Job description বলা হয়। কার্য বর্ণনা সম্পর্কে কয়েকজন বিশেষজ্ঞের সংজ্ঞা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
J. M. Ivance Rich বলেন, “প্রতিষ্ঠানের কাজ সম্পর্কিত বিস্তারিত এবং লিখিত বর্ণনাকে কার্য বর্ণনা বলা হয়।”
Robbins এর মতে, “একজন কর্মী নিয়োগের পর সে কী কাজ করবে, কার্য পরিবেশ কেমন হবে, তার দায়িত্ব কী হবে, তাকে কী পরিমাণ পারিশ্রমিক দেয়া হবে, তার বর্ণনাকেই কার্য বর্ণনা বলে।”
Edwin B. Flippo এর মতে, “কর্মীকে কাজটি কীভাবে করতে হবে, কখন করতে হবে, কোন পরিবেশে করতে হবে, তার লিখিত বর্ণনাই হলো কার্য বর্ণনা।”
সুতরাং সহজেই বলা যায়, যে সকল কাজ প্রতিষ্ঠানে কর্মীকে করতে হবে এবং এটি সম্পাদনের জন্য যে সব প্রয়োজন, তার বিস্তারিত বর্ণনাই হলো কার্য বর্ণনা। অর্থাৎ কার্য বর্ণনা হলো কার্য বিশ্লেষণ এর গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। কার্য বর্ণনা হলো এমন একটি কাজের বিবরণ যেখানে প্রতিষ্ঠানে সার্বিক কাজের উল্লেখ থাকে।
কার্য বর্ণনার বৈশিষ্ট্য: কার্য বর্ণনার কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো:
১. কাজের শিরোনাম (title of work): কার্য বর্ণনার বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য হলো কাজের শিরোনাম। কারণ কাজটি কী কী, এর শিরোনাম কী, তাই যদি জানা না থাকে, তবে কাজ পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
২. কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ (description of work): কার্য সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা থাকা আবশ্যক। এতে কর্মীরা কাজ করতে সহযোগিতা পায়। কর্মীরা যে কাজটি বাস্তবায়িত করবে, সে সম্পর্কে যদি তাদের ধারণা থাকে বা জানা থাকে, তবে তাদের জন্য কাজটি করা সহজতর হয়।
৩. পারিশ্রমিক (remuneration): প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মী তাদের পরিশ্রমের বিনিময়ে কী পরিমাণ পারিশ্রমিক পাবে, তাও কার্য বর্ণনায় লিখে রাখতে হবে। তা না হলে কর্মীরা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চিত থাকতে পারে না।
৪. পদের নাম (name of the position): যে কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের নিয়োগ দেয়ার পর তারা কী পদে কাজ করবে, তার নাম উল্লেখ থাকতে হবে।
৫. বিভাগের নাম (name of department): প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের কাজের ভিত্তিতে তাদের কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয় এবং সেই বিভাগের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়।
৬. কার্য পরিবেশ (work environment): কার্য বর্ণনার গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য হলো কার্য পরিবেশ। অর্থাৎ যে পরিবেশে কর্মীরা কাজ করবে তার বিস্তারিত বর্ণনা দিতে হবে।
৭. শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতা (physical and mental abilities): কার্য বর্ণনায় কাজ সম্পর্কে যে সার্বিক বর্ণনা দেয়া থাকে, তার মধ্যে অন্যতম হলো কর্মীর শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতা। তাদের এই যোগ্যতার ওপর কার্য বিশ্লেষণের ফলাফল নির্ভর করে। তারা যদি মানসিক বা শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকে, তবে তাদের দ্বারা কাজ করানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
৮. কাজে ঝুঁকির পরিমাণ (measurement of risk of work): যে কোনো কাজে ঝুঁকি থাকার সম্ভাবনা থাকে, তাই কোনো কাজে কী পরিমাণ অনিশ্চয়তা রয়েছে বা কোথায় কেমন মুনাফা হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যা কার্য বর্ণনার মাধ্যমে পূর্বেই যাচাই করে নেয়া উত্তম।
৯. প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা (training activities): প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলো কার্য বর্ণনার প্রধান একটি বৈশিষ্ট্য। এতে কর্মীরা কাজের প্রতি আরো আগ্রহী হয় এবং নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে শিখতে বা জানতে চায়।
১০. কাজের মধ্যে সম্পৃক্ততা (relationship between job): কার্য বর্ণনায় মূল বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিষ্ঠানে প্রতিটি কাজের মধ্যে সম্পর্ক বজায় রাখা। তাহলে কাজের সাথে মিল রেখে কর্মীরা সহজেই কার্য পরিচালনা ও বাস্তবায়ন করতে পারে।
১১. অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা (other opportunism): প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত সকল কর্মীকে বেতন বা মজুরির পাশাপাশি অন্যান্য সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়। আর সুবিধা আর্থিক-অনার্থিক যা হবে তা কার্য বর্ণনায় লিখিত থাকে।
পরিশেষে বলা যায়, উপরে উল্লেখিত সকল বৈশিষ্ট্য ছাড়াও যে কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন অনুসারে কার্য বর্ণনার আরও কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। [শারমিন জাহান সায়মা]
সহায়িকা: আলাউদ্দিন, প্রফেসর ড. মোঃ; ইসলাম, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ নূরুল; ইসলাম, মোহাঃ বদরুল; ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থাপনা; আগস্ট, ২০১৮/২০১৯; ঢাকা: গ্রন্থ কুটির; পৃষ্ঠা ৭৮।
কার্য বর্ণনা কি এবং এর বৈশিষ্ট্য।
Follow Us in Our YouTube channel: GEONATCUL