কোটা ও কোটার শ্রেণিবিভাগ | Quota
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য যে সকল ধারণা ও কৌশল বা হাতিয়ারসমূহ ব্যবহৃত হয়ে থাকে তার মধ্যে একটি বহুল ব্যবহৃত ধারণা ও হাতিয়ার হলো কোটা। অন্যভাবে বলা গেলে, একটি দেশ একটি নির্দিষ্ট সময়ে কি পরিমাণ পণ্য আমদানি বা পণ্য রপ্তানি করতে পারবে, তা নিরূপণের পদ্ধতিকে বলা হয় কোটা। একটি দেশ আমদানি কোটা অথবা রপ্তানি কোটার মাধ্যমে পরিমাণগত বা মূল্যের দিক থেকে তাদের বাণিজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোটা পদ্ধতির ব্যবহার করে থাকে।
এ কারণে বলা যায় যে, কোটা হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণকারী ধারণা ও হাতিয়ার। কার্যত বিদেশি প্রতিযোগিতার হাত থেকে দেশীয় শিল্পকে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে নিয়ন্ত্রণকারী কৌশল হিসেবে সরকার বাণিজ্য কোটা ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। সাধারণত কোনো একটি দেশের সরকার কোটা আরোপের পূর্বে আগের সময়ের আমদানি বাণিজ্য বা রপ্তানি বাণিজ্যের ধারা পর্যালোচনা করে মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষান্মাষিক বা বছরের ভিত্তিতে কোটা আরোপ করে থাকে।
কোটার শ্রেণিবিভাগ: কোটার বৈশিষ্ট্য, সুবিধা-অসুবিধা, ব্যবহারের ক্ষেত্রে, আমদানি, রপ্তানি ইত্যাদির প্রেক্ষিতে বিভিন্ন শ্রেণিতে শ্রেণিভূক্ত করা হয়ে থাকে। নিম্নে কোটার শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করা হলো :
১. শুল্ক কোটা: যে কোটা ব্যবস্থায় পণ্যসামগ্রীর আমদানির ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণকে শুল্কমুক্ত বা সীমিত শুল্কে আমদানির অনুমতি দেয়া হয়, তাকে শুল্ক কোটা বলে। যেমন- বাংলাদেশ ১৫০০ সিসির নিচে গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক হার কম হলেও ১৫০০ সিসির বেশি গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে শুল্ক হার বেশি।
২. মিশ্র কোটা: বিদেশি প্রতিযোগীদের চাপে দেশীয় উৎপাদক ও উপকরণের যোগানদাতাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কোনো দেশের সরকার যখন বিশেষ ব্যবস্থায় একযোগে বিভিন্ন ধরনের কোটা চালু করেন তখন তাকে মিশ্র কোটা বলে।
৩. একপক্ষীয় কোটা: আমদানি পণ্যের উপর একতরফাভাবে যে কোটা আরোপ করা হয় তাকে একপক্ষীয় কোটা বলে। এক্ষেত্রে রপ্তানিকারক দেশের সাথে আমদানিকারক দেশ কোনোভাবেই আলাপ-আলোচনা বা পরামর্শ করে না। সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে আমদানি পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করা হয়ে থাকে।
৪. দ্বিপক্ষীয় কোটা: আমদানিকারক এবং রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে যে কোটা নির্ধারণ করা হয় তাকে দ্বিপক্ষীয় কোটা বলে। এক্ষেত্রে সাধারণত আমদানিকারক এবং রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে কোটা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
৫. মুক্ত কোটা: যে কোটা ব্যবস্থায় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে পণ্যসামগ্রী আমদানির অনুমতি দেয়া হয় তাকে মুক্ত কোটা বলে। একটি দেশের নির্দিষ্ট পণ্যের আমদানিকে পরিমাণগত দিক থেকে সীমিতকরণের জন্যই এ জাতীয় কোটার প্রচলন করা হয়।
৬. আমদানি লাইসেন্স কোটা: যে কোটা ব্যবস্থায় লাইসেন্স প্রাপ্ত আমদানিকারক নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যসামগ্রী যে কোনো দেশ বা নির্দিষ্ট করে দেয়া দেশ থেকে আমদানি করার অনুমতি থাকে তাকে আমদানি লাইসেন্স কোটা বলে। কার্যত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী আমদানিকারকগণ সুবিধা ভোগ করে থাকে।
৭. বিধিবদ্ধ কোটা: পণ্যসামগ্রী আমদানি ও রপ্তানির আইনের মাধ্যমে যে কোটা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়ে থাকে তাকে বিধিবন্ধ কোটা বলে। এ কোটা পদ্ধতিকে স্বয়ংক্রিয় কোটা হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। [শারমিন জাহান সায়মা]
✅ কোটা কি ও কোটার শ্রেণিবিভাগ ব্যাখ্যা কর।
✅ Explain what is Quota and Classification of Quota.
সহায়িকা: জোয়ারদার, সুকেশ চন্দ্র; আলম, মোঃ শাহ; আখতার, সুফিয়া ও ইসলাম, মোঃ নজরুল, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, (২০২০), মিলেনিয়াম পাবলিকেশন্স, ঢাকা, পৃষ্ঠা-৯৪।
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL