কোলেস্টেরল: এর কাজ, উপকারিতা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

কোলেস্টেরল (cholesterol) হলো হাইড্রোকার্বন কোলেস্টেইন (cholestane) থেকে উৎপন্ন একটি যৌগ। এটি উচ্চশ্রেণির প্রাণিজ কোষের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কোলেস্টেরল লিপোপ্রোটিন নামক যৌগ সৃষ্টির মাধ্যমে রক্তে প্রবাহিত হয়। রক্তে তিন ধরনের লিপোপ্রোটিন দেখা যায়। যেমন-
১। LDL (low density lipoprotein) – ১.৮ লিটার;
২। HDL (high density lipoprotein) – ১.৫ লিটার; এবং
৩। ট্রাই-গ্লিসারাইড (tri-glyceride) – ১.৭ লিটার।

১। LDL (low density lipoprotein): LDL কে খারাপ কোলেস্টেরলও বলা হয়, কারণ এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। সাধারণত আমাদের রক্তে 70℅ LDL থাকে। ব্যক্তিবিশেষ এই পরিমাপের পার্থক্য দেখা যায়।
২। HDL (high density lipoprotein): HDL কে সাধারণত ভালো কোলেস্টেরল বলা হয়। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
৩। ট্রাই-গ্লিসারাইড (tri-glyceride): এই কোলেস্টেরল চর্বি হিসেবে রক্তের প্লাজমায় অবস্থান করে। ট্রাই-গ্লিসারাইড আমাদের খাদ্যের প্রাণিজ চর্বি অথবা কার্বোহাইড্রেট থেকে তৈরি হয়ে থাকে।
অধিক মাত্রায় কোলেস্টেরল রয়েছে এমন খাদ্যের মধ্যে মাখন, চিংড়ি, ঝিনুক, গবাদিপশুর যকৃৎ, ডিম, বিশেষ করে ডিমের কুসুম উল্লেখযোগ্য।

কোলেস্টেরল
চিত্র: কোলেস্টেরল ব্লকিং ধমনী, সূত্র: blmhospital.com

রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যা:

দেহের অন্যান্য অঙ্গের মতো হৃৎপিণ্ডে অক্সিজেন এবং খাদ্যসার সরবরাহের প্রয়োজন হয়। হৃৎপিণ্ডের করোনারি ধমনিগাত্রে চর্বি জমা হলে ধমনিতে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহে বিঘ্ন ঘটে, ফলে হৃৎপিন্ড পর্যাপ্ত অক্সিজেন এবং খাদ্যসার না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রক্ত চলাচল কমে যাওয়ার কারণে বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। এ অবস্থাকে অ্যানজিনা (Angina) বলা হয়। এছাড়া ধমনির গায়ে বেশি চর্বি জমা হলে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে করোনারি হৃদরোগের আশঙ্কা অনেকগুণ বেড়ে যায়।

কোলেস্টেরলের কাজ ও উপকারিতা:

কোলেস্টেরল কোষপ্রাচীর তৈরি এবং রক্ষার কাজ করে। কোলেস্টেরল প্রতিটি কোষের ভেদ্যতা (permeability) নির্ণয় করে বিভিন্ন দ্রব্যাদি কোষে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে। মানবদেহের জনন হরমোন এনড্রোজেন ও ইস্ট্রোজেন তৈরিতে সাহায্য করে। অ্যাডরেনাল গ্রন্থির হরমোন ও পিত্তরস তৈরিতে কোলেস্টেরলের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। কোলেস্টেরল পিত্ত তৈরি করে। সূর্যালোকের উপস্থিতিতে চামড়ার কোলেস্টেরল থেকে ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি হয়, যা রক্তের মাধ্যমে কিডনিতে গিয়ে ভিটামিন ‘ডি’র কার্যকর রূপে পরিণত হয় এবং আবার রক্তে ফিরে আসে। কোলেস্টেরল দেহের চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন (এ, ডি, ই এবং কে) বিপাকে সহায়তা করে। স্নায়ুকোষের কার্যকারিতার জন্য কোলেস্টেরল প্রয়োজন। দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সাথে কোলেস্টেরল ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।

কোলেস্টেরলের স্বাস্থ্যঝুঁকি:

গবেষণায় প্রমাণিত যে, রক্তে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল হৃৎপিন্ড এবং রক্ত সংবহনের বিশৃঙ্খলার সাথে জড়িত। কোলেস্টেরল পিত্তরসের অন্যতম উপাদান হলেও এটি একটি বর্জ্য পদার্থ এবং যকৃতের মাধ্যমে দেহ থেকে অপসারিত হয়। পিত্তরসে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে তা তলানির পিত্তথলিতে জমা হয়। কোলেস্টেরলের এ তলানিই শক্ত হয়ে পিত্তথলির পাথর (gallbladder stone) নামে পরিচিত হয়। উল্লেখ্য যে, কোলেস্টেরল ছাড়াও ফসফেট, ক্যালসিয়াম, প্রভৃতি জমেও পিত্তথলির পাথর হতে পারে। [ইশরাত জাহান মিম]


সহায়িকা: জীববিজ্ঞান (নবম-দশম) বোর্ড বই পৃ: ১৫২, ১৫৩, ১৫৪।


Follow Us in Our YouTube channel: GEONATCUL


Leave a Reply