খলিফা আল-মাহদী (৭৪৫ – ৭৮৫)

খলিফা আল-মাহদী:

খলিফা আল-মাহদী ৭৪৪ মতান্তরে ৭৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতার নাম উম্মে সালমা এবং পিতার নাম খলিফা আল মানসুর। প্রথমে তিনি আস-সাফফার কন্যা রাইতাকে এবং পরবর্তীতে বার্বার তরুণী খায়জুরানকে বিবাহ করেন। তিনি ৭৭৫ সালে পিতার মৃত্যুর পর আল-মাহদী উপাধি নিয়ে বাগদাদের আব্বাসীয় সিংহাসনে আরোহন করেন।

খলিফা আল-মাহদীর শাসন নীতি:

শাসন নীতির ক্ষেত্রে খলিফা আল-মাহদী ছিলেন তার পিতার সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি শান্তিপ্রিয় মানুষ ছিলেন। অযথা রক্তপাত ও কঠোরতা পরিহার করে তিনি উদার ও সহনশীলতার নীতি গ্রহণ করেন। তিনি ইব্রাহিমের পুত্র হাসানকে কারাগার থেকে মুক্তি দেন এবং বৃত্তি প্রদান করেন। তিনি মিশর থেকে দ্রব্যসামগ্রী আমদানি করার অনুমতি দেন। তিনি ফিরিয়ে দেন তার পিতা মনসুর কর্তৃক রাসুলুল্লাহ (স.) -এর বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি।

খলিফা আল-মাহাদীর জনকল্যাণমূলক কার্যাবলি:

খলিফা মাহদী বহুমুখী জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য মহিমান্বিত হয়ে আছেন। তিনি কুষ্ঠ রোগগ্রস্ত ও ঋণের দায়ে কারারুদ্ধ ব্যক্তিদের জন্য বৃত্তি নির্ধারণ করেন। আব্বাসি বংশের প্রতিষ্ঠাতা আস্-সাফ্ফার সময়ে মক্কার পথে কাদেসিয়া ও জুবালার মধ্যে ৩০০ মাইলব্যাপী সরাইখানা নির্মিত হয়। খলিফা মাহদীর আদেশে শহরের সমুদয় পথ পাকা ও প্রশস্ত করা হয়। পবিত্র মক্কা-মদিনা নগরীদ্বয় পর্যন্ত সমগ্র পথে কূপ ও জলাধার সমন্বিত বৃহৎ এবং আরামদায়ক গৃহ নির্মিত হয়। এছাড়া তীর্থযাত্রী ও পথচারীর নিরাপত্তার জন্য প্রহরী নিযুক্ত করা হয়। এছাড়া খলিফা প্রতি বছর কাবা শরিফের জন্য গিলাফ প্রেরণের ব্যবস্থা করেন। এবং ৭৭৬ – ৭৭৭ সালে খলিফা আল-মাহদী নজিরবিহীন আড়ম্বর ও জাঁকজমকের সাথে মক্কায় হজব্রত সুসম্পন্ন করেন। এ উপলক্ষে তিনি হিজাজের লোকদের ৩,০০,০০,০০০ দিরহাম দান করেন। তিনি মক্কাবাসীদের মধ্যে ১,৫০,০০০ খণ্ড বস্ত্র বিতরণ করেন। খলিফা আল-মাহদীর আদেশক্রমে মসজিদ-ই-নববী পুনরায় নির্মিত ও সুশোভিত হয়।

খলিফা আল-মাহদী (৭৪৫ - ৭৮৫), আল মাহদির দিরহাম, ১৬৬ হিজরি, কিরমান, রৌপ্য ২.৯৫ গ্রাম।
আল মাহদির দিরহাম, ১৬৬ হিজরি, কিরমান, রৌপ্য ২.৯৫ গ্রাম। সূত্র: wikipedia.org

খলিফা আল- মাহদীর মৃত্যু:

৭৮৫ সালে খলিফা আল-মাহদী শিকারের উদ্দেশ্যে তার রাজত্বের পূর্বাঞ্চলে গমন করেন। তিনি শিকারী কুকুর কর্তৃক অনুসৃত একটি হরিণের পিছু অনুসরণ করছিলেন। তার ঘোড়া দ্রুতবেগে চলার সময় একটি প্রাসাদের ধ্বংসস্তুপের সাথে ধাক্কা খায়। এতে তার মেরুদণ্ড ভেঙে যায় এবং তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এ সময় তার বয়স ছিল ৪৩ বছর। মৃত্যুর পূর্বে তিনি তার দুই পুত্র মুসা ও হারুনকে পর পর উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান। [ইশরাত জাহান মিম]


সহায়িকা: হাছান, মোঃ মাহমুদুল, (২০১৩), ইসলামের ইতিহাস ১ম পত্র (একাদশ-দ্বাদশ), ঢাকা: লেকচার পাবলিকেশন্স লি., পৃষ্ঠা – ২৯১, ২৯২।


Follow Us in Our Youtube Channel: GEONATCUL


Leave a Reply