খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা এবং খাদ্য ও পুষ্টির সম্পর্ক
মানব দেহ সুস্থ রাখার জন্য খাদ্য এবং পুষ্টির ভূমিকা ব্যাপক। আজকের বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল বা অনুন্নত সকল দেশেই পুষ্টি একটি মারাত্মক সমস্যা। আর এ পুষ্টি উৎপাদিত হয়ই খাদ্য থেকে। পুষ্টিহীনতা সমস্যা সমাধানের অন্যতম পথ হল জনসমাজকে খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে সচেতন করা। এ সচেতনতার অভাবে আমাদের দেশের জনগণ মারাত্মক অপুষ্টির শিকার হয়। নিচে খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা এবং খাদ্য ও পুষ্টির সম্পর্ক তুলে ধরা হলো।
খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা (importance of food): আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, খাদ্য শুধু আমাদের ক্ষুধা নিবৃত্ত করে। কিন্তু মানবদেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদনের জন্য খাদ্য প্রয়োজন। খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা নিম্নরূপ তুলে ধরা হলো:
১. বৃদ্ধিসাধন ও ক্ষয়পূরণ : খাদ্য দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধিসাধন করে। মাতৃগর্ভ থেকে শুরু করে প্রায় ২৫ বছর পর্যন্ত আমাদের দেহ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। দেহের এই বৃদ্ধির জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। প্রত্যেক জীবন্ত প্রাণীর দেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ, যেমন – হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, পাকস্থলী, মস্তিষ্ক, ইত্যাদি সর্বদাই চলমান থাকে। এছাড়া হাঁটাচলা, ওঠাবসা, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন বিভিন্ন কাজে মাংসপেশির সঞ্চালন হয়ে থাকে। ফলে দেহের কোষগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এই ক্ষয়পূরণের জন্য খাদ্য প্রয়োজন।
২. দেহে তাপ ও শক্তির উৎপাদন : তেল ছাড়া যেমন গাড়ি চলে না, তেমনি খাদ্য ছাড়া আমরা বেঁচে থাকতে পারি না। খাদ্য আমাদের দেহের অভ্যন্তরীণ ও বাহিরের বিভিন্ন কাজে তাপ ও শক্তি উৎপাদন করে দেহকে সচল রাখে।
৩. দেহকে সুস্থ-সবল ও কর্মক্ষম রাখা : খাদ্য দেহের অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করে দেহকে সুস্থ-সবল ও কর্মক্ষম করে তোলে। শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়া অক্ষুন্ন রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের এনজাইম ও হরমোনের প্রয়োজন। খাদ্য থেকে দেহের অভ্যন্তরে এই সমস্ত হরমোন ও এনজাইম তৈরি হয়, যা দেহের প্রয়োজনীয় জৈব রাসায়নিক ক্রিয়া অক্ষুন্ন রাখতে এবং দেহকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি : খাদ্য বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। খাদ্যের মধ্যে বিভিন্ন উপাদান রয়েছে। এই উপাদানগুলোর মধ্যে থেকে ভিটামিন ও ধাতব লবণজাতীয় খাদ্য আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান করে থাকে। এদের অভাব হলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের অপুষ্টিজনিত রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। এসব অপুষ্টিজনিত রোগের মারাত্মক পর্যায়ে অঙ্গহানি বা মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
খাদ্য ও পুষ্টির সম্পর্ক (relation between food and nutrition): খাদ্য থেকে আমরা প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেয়ে থাকি। আমাদের শরীরকে সুস্থ-সবল, কর্মক্ষম ও রোগমুক্ত রাখতে হলে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা আবশ্যক। দীর্ঘদিন যদি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গ্রহণ না করা হয় কিংবা চাহিদার তুলনায় কম খাদ্য গ্রহণ করা হয়, তাহলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। কর্মক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং নানাবিধ রোগব্যাধিতে আক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার চাহিদা অনুযায়ী পরিমিত পরিমাণ খাদ্য গ্রহণের ফলে একদিকে যেমন শরীর সুস্থ-সবল ও কর্মক্ষম থাকে, অন্যদিকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বজায় থাকে। সে কারণে এককথায় বলা যায়, খাদ্যের সাথে পুষ্টির সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। কেননা দেহে খাদ্যের অভাবে পুষ্টি-প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। [ইশরাত জাহান মিম]
সহায়িকা : সুলতানা, প্রফেসর রাফিকা, এবং আরা, গাজী হোসনে, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, পৃষ্ঠা ২০০-২০১।
নিরাপদ খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL