গবেষণার প্রকারভেদ | Types of Research
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ভিন্নতার কারণে গবেষণার প্রকৃতিও ভিন্নতর হতে পারে। তাছাড়া গবেষণার রয়েছে বিভিন্ন ভিত্তি, যার আলোকে গবেষণামূলক পর্যালোচনা করা হয়। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ভিন্নতার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ধরনের ভিত্তিতে গবেষণা প্রকারভেদ নিম্নে বর্ণনা করা হলো:
১. প্রয়োগের ভিত্তিতে গবেষণা (research on the basis of application): গবেষণার প্রয়োগের ভিত্তিতে গবেষণাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
ক. মৌলিক গবেষণা (fundamentals research),
খ. ফলিত গবেষণা (applied research) ও
গ. কার্যমূলক গবেষণা (action research)।
ক. মৌলিক গবেষণা (fundamentals research): কেবল পৃথিবী ও পৃথিবীর কোনো বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের জন্য যে গবেষণা কার্য পরিচালিত হয়, তাকে মৌলিক গবেষণা বলে। জ্ঞান অর্জনই মৌলিক গবেষণার মূল লক্ষ্য। নতুন কিছু উদ্ভাবন কিংবা অজানাকে জানার জন্যই মৌলিক গবেষণা কার্য পরিচালিত হয়ে থাকে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ একে বুনিয়াদি গবেষণাও বলে থাকেন। নতুন জ্ঞানভাণ্ডার উন্মোচন করাই এ গবেষণার মূল্য লক্ষ্য।
খ. ফলিত গবেষণা (applied research): যে গবেষণা কোনো সমস্যার বাস্তব সমাধানের জন্য পরিচালিত হয়, তাকে ফলিত গবেষণা বলে। এটি হলো এক ধরনের মাঠ গবেষণা। কারণ এটি সমাজের বাস্তব সমস্যা সমাধান করে। মূলত ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক দিককে প্রাধান্য দিয়ে এ ধরনের গবেষণা কর্ম পরিচালিত হয়। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের উৎকর্ষের সূত্র ধরে আধুনিক প্রযুক্তির যে উন্নয়ন, তা মূলত ফলিত গবেষণারই ফলশ্রুতি।
গ. কার্যমূলক গবেষণা (action research): কোনো উদ্দেশ্য অর্জন করতে হলে কতকগুলো কার্যসম্পাদন করতে সম্পাদিত কার্যের ফলপ্রদতা বৃদ্ধির জন্য যে গবেষণা পরিচালনা করা হয়, তাকে কার্যমূলক গবেষণা বলে। কোন পন্থায় কার্যসম্পাদন করা হলে কার্যের ফলপ্রদতা বা সফলতা বৃদ্ধি পায়, তা খুঁজে বের করাই এ গবেষণার মূল উদ্দেশ্য।
২. উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে গবেষণা (research on the basis of objective): উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে গবেষণা দু’প্রকার। যথা:
ক. উদঘাটনমূলক গবেষণা (exploratory research) ও
খ. ব্যাখ্যামূলক গবেষণা (explanatory research)।
ক. উদ্ঘাটনমূলক গবেষণা (exploratory research): উদ্ঘাটনমূলক বা অনুসন্ধানমূলক গবেষণা হলো এমন ধরনের গবেষণা, যা কোনো অস্পষ্ট বা জটিল পরিস্থিতিকে স্পষ্ট ও সহজতর করে ব্যাখ্যা প্রদান করে অথবা সম্ভাবনাময় কোনো ব্যবসায় বা অন্য কোনো ক্ষেত্র আবিষ্কার করে। নতুন কিছু উদ্ভাবন করাই এর প্রধান কাজ। তাই এটি উপসংহারমূলক নয় বরং নতুন বিষয় সংযোগকারী। উদ্ভাবনমূলক গবেষণা মূলত নতুন পণ্য উন্নয়নের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য।
খ. বর্ণনামূলক গবেষণা (explanatory research): দুই বা ততোধিক বস্তু অথবা অধীন চলক এবং দুই বা ততোধিক স্বাধীন চলকের মধ্যকার সম্পর্কের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করার জন্য যে ধরনের গবেষণা পরিচালিত হয়, তাকে বর্ণনামূলক গবেষণা বলে। এ পদ্ধতিতে কোনো গবেষণা সমস্যার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য চিহ্নিতকরণের প্রয়াস চালানো হয় এবং পরবর্তী গবেষণার উপযোগী পর্যবেক্ষণ পরিবেশ তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে কোনো সুপ্রতিষ্ঠিত অনুমানসিদ্ধ কল্পনার (hypothesis) আলোকে গবেষণা কর্মটি সম্পাদিত হয়। এ রীতিতে বাস্তব পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সমস্যার অনুসন্ধান করা হয়ে থাকে।
৩. পদ্ধতিগত মূলনীতির ভিত্তিতে গবেষণা (research on the basis of methodological principles): পদ্ধতিগত মূলনীতির ভিত্তিতে গবেষণা দু’প্রকার। যথা:
ক. সংখ্যাত্মক গবেষণা (quantitative research) এবং
খ. গুণাত্মক গবেষণা (qualitative research)।
ক. সংখ্যাত্মক গবেষণা গবেষণা (quantitative research): সংখ্যাত্মক গবেষণা হল সংখ্যাবাচক বা পরিমাণবাচক কোনো বিষয়। সংখ্যা বা পরিমাণে প্রকাশ করা যায় এমন চলকসমূহ এ ধরনের গবেষণায় ব্যবহার করা হয়। চলকসমূহের মধ্যকার সম্পর্ক নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে এখানে পরিসংখ্যানগত পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
খ. গুণগত গবেষণা (qualitative research): যে গবেষণায় সমস্যার অন্তর্নিহিত বিষয়গুলো তুলে ধরা হয় এবং সমস্যার বিস্তার অনুধাবনের চেষ্টা করা হয়, তাকে গুণগত গবেষণা বলে। গুণগত গবেষণা সমস্যার অন্তর্নিহিত বিষয় এবং সমস্যা অনুধাবনের বিষয়গুলো উপস্থাপন করে। [শারমিন জাহান সায়মা]
সহায়িকা: আলাউদ্দিন, প্রফেসর ড. মোঃ; উদ্দীন, প্রফেসর ড. মোঃ সেরাজ; আতিকুজ্জামান, এম. এম.; প্রধান, মোঃ সাইফুল্লাহ; (জানুয়ারি, ২০১৯); ব্যবসায় গবেষণা Business Research; গ্রন্থ কুটি: ঢাকা; পৃষ্ঠা-৯।
গবেষণা প্রধানত কত প্রকার
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL