গবেষণা প্রশ্নপত্রের শব্দ নির্বাচনে অনুসরণীয় বিষয়

গবেষকগণ গবেষণা কাজ সম্পাদনের জন্য মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে প্রশ্নপত্র বা প্রশ্নমালা (questionnaire) জরিপ তথ্য সংগ্রহের অন্যতম পদ্ধতি। গবেষণার এ প্রশ্নমালার শব্দ চয়ন অত্যন্ত মার্জিত ও রুচি সম্পন্ন হওয়া আবশ্যক। প্রশ্নমালার শব্দ নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় কতিপয় বিষয় নিচে তুলে ধরা হলো:

১. সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন (specific questions): কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে উত্তরদাতার মতামত জানার ক্ষেত্র প্রশ্ন অবশ্যই সুনির্দিষ্ট হতে হবে। অন্যথায় গবেষণার উদ্দেশ্য সাধিত হয় না। এ কারণে গবেষণার প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে খুবই নির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন।

২. সহজবোধ্য ভাষা (easy language): উত্তরদাতার সুবিধার্থে প্রশ্নপত্রে সহজবোধ্য ও উপযুক্ত ভাষা ব্যবহার করা উচিত। প্রশ্নের ভাষা দুর্বোধ্য হলে উত্তরদাতার পক্ষে সঠিক উত্তর দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে।

৩. দ্ব্যর্থবোধক (ambiguity): গবেষণা প্রশ্নে দ্ব্যর্থবোধক শব্দ পরিহার করতে হবে। কারণ এর অর্থ বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন ধরনের হয়। সে জন্য প্রশ্নোত্তর অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের সাথে মিশ্রিত হয়ে পড়ে।

৪. স্পষ্ট শব্দাবলি (legible words): সঠিক প্রশ্নমালার উপর গবেষণার সঠিকতা অনেকাংশে নির্ভর করে। কাজেই প্রশ্নপত্রে স্পষ্ট শব্দাবলি ব্যবহার করা উচিত। কেননা অস্পষ্ট প্রশ্নে অস্পষ্ট উত্তর আসে, যা গবেষণার উদ্দেশ্য অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

৫. অযাচিত প্রশ্ন (unexpected questions): যে সমস্ত প্রশ্ন একটি মূল প্রশ্নের অতিরিক্ত সেগুলোকে অযাচিত প্রশ্ন বলে। গবেষণার প্রশ্নে এ ধরনের অযাচিত প্রশ্ন পরিহার করা ভালো। যেমন- আপনি প্রতিদিন কটা সিগারেট খান? এ প্রশ্নটি করার আগে উত্তরদাতাকে অবশ্যই জিজ্ঞাসা করা উচিত যে, আপনি কি ধূমপান করেন?

৬. অনুকল্পিত প্রশ্ন (hypothetical questions): যে সমস্ত প্রশ্নে উত্তরদাতাকে ভবিষ্যতের একটি অবস্থা কল্পনা করে উত্তর দিতে হয়, তাকে অনুকল্পিত প্রশ্ন বলে। এগুলোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি খুবই কম বিধায় এটা পরিহার করা উচিত।

৭. ব্যক্তিগত প্রশ্ন (personalised questions): গবেষণা প্রশ্নে ব্যক্তিগতভাবে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা না করাই শ্রেয়। এতে উত্তরদাতা বিব্রতবোধ করতে পারে। তাছাড়া প্রশ্নের উদ্দেশ্যের সাথে ব্যক্তির ইচ্ছার মিল নাও হতে পারে।

৮. বিব্রতকর প্রশ্ন (embarrassing questions): এমন অনেক প্রশ্ন আছে যেগুলো উত্তরদাতাকে একটি বিব্রতকর বা নাজুক পরিস্থিতির মুখোমুখি করে, সেসব প্রশ্ন পরিহার করে সহজভাবে প্রশ্ন করা উচিত। যেমন- কোনো ব্যক্তির আচরণ, রাজনৈতিক সমর্থন, ইত্যাদি বিষয়ে সরাসরি প্রশ্ন না করা।

৯. সময় বুঝে আচরণ সম্পর্কিত প্রশ্ন (questions on periodical behaviour): ব্যক্তির কিছু কিছু আচরণ সময় সাপেক্ষ। যেমন- সংবাদপত্র পাঠ, রেডিও শোনা, টেলিভিশন দেখা, সিনেমা দেখা, ইত্যাদি। এ সমস্ত সময় সাপেক্ষ আচরণ সম্পর্কে প্রশ্ন অত্যন্ত সতর্কভাবে গঠন করতে হয়; যাতে করে সত্যিকার সময় ও অভ্যাস সম্পর্কিত নির্দিষ্ট তথ্যাবলি সংগ্রহ করা সম্ভব।

১০. স্মৃতি সম্পর্কিত প্রশ্নাবলি (questions involving memory): অনেক সময় ঘটনাভিত্তিক প্রশ্নে উত্তরদাতাকে তার স্মরণ শক্তির উপর নির্ভর করে উত্তর প্রদান করতে হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঘটনা ঘটার কাল উত্তরদাতার নিকট তার গুরুত্ব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ কারণে স্মৃতি সম্পর্কিত প্রশ্ন সতর্কভাবে গঠন করতে হয়।

১১. পূর্ণ ব্যাপ্ত প্রশ্ন (complete questions): প্রশ্নপত্রে এমন সুযোগ থাকা উচিত, যাতে করে সংশ্লিষ্ট সকল উত্তরদাতাই সে প্রশ্নের উত্তরদানের সমর্থ হয়। এ কারণে যে কোনো প্রশ্নের শেষেই জানি না ‘নিরুত্তর’ অন্যান্য (নির্দিষ্ট কারণ …) ইত্যাদির উল্লেখ থাকা আবশ্যক।

পরিশেষে বলা যায়, যে কোনো প্রশ্নমালার মান, গবেষণার উদ্দেশ্য অর্জন, ইত্যাদি প্রশ্নপত্রের শব্দ চয়নের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই এক্ষেত্রে গবেষকের সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। [শারমিন জাহান সায়মা]


সহায়িকা: আলাউদ্দিন, প্রফেসর ড. মোঃ; উদ্দীন, প্রফেসর ড. মোঃ সেরাজ; আতিকুজ্জামান, এম. এম.; প্রধান, মোঃ সাইফুল্লাহ; (জানুয়ারি, ২০১৯); ব্যবসায় গবেষণা Business Research; গ্রন্থ কুটি: ঢাকা; পৃষ্ঠা- ১৪৬ – ১৪৭।


গবেষণা প্রশ্নমালায় শব্দ নির্বাচনে অনুসরণীয়


Follow Us in Our Youtube Channel: GEONATCUL


Leave a Reply