একটি ছোট দেশ বাণিজ্যের মাধ্যমে কীভাবে লাভবান হয়?
আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে ছোট দেশ কিংবা বড় দেশ বিবেচনার ক্ষেত্রে দেশের আয়তন বিবেচনা না করে উৎপাদন ও ভোগের পরিমাণ বিবেচনা করা হয়। একটি দেশ আয়তনে বড় হয়েও যদি উৎপাদন ও ভোগের পরিমাণ কম হয়, তবে তাকে ছোট দেশ হিসেবে অভিহিত করা হয়। আবার আয়তন তুলনামূলক কম হলেও উৎপাদন কিংবা ভোগের পরিমাণ বেশি হলে তাকে বড় দেশ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এভাবে ছোট দেশ বড় দেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্কে আবদ্ধ হলে ছোট দেশ অধিক লাভবান হয়।
আন্তর্জাতিক বাজারে বিনিময় অনুপাতকে তেমনভাবে প্রভাবিত না করেই একটি ছোট দেশ উৎপাদনে বিশেষায়ন করে সফল হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাংলাদেশ বিশ্বের মোট তৈরি পোশাকের ৪% উৎপাদন করে, এই বিবেচনায় বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ। তাই বাংলাদেশ তৈরি পোশাকের উৎপাদন দ্বিগুণ বাড়ালে বিশ্ব বাজারে তেমন প্রভাব ফেলবে না। অর্থাৎ পূর্বের বিশ্ব বাজার দামে বাংলাদেশের পক্ষে তৈরি পোশাক রপ্তানি করা সম্ভব না। তাই বাংলাদেশ এক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে বাণিজ্যিক লাভ অর্জন করতে পারবে।
অন্যদিকে, একটি বড় দেশ কোনো দ্রব্য উৎপাদনে বিশেষায়ণ ঘটালে, দ্রব্যটির যোগান যথেষ্ট পরিমাণ বেড়ে যায়। যেমন- চীন বিশ্বের মোট তৈরি পোশাকের ৪০% উৎপাদন করে, এই বিবেচনায় চীন তৈরি পোশাকের উৎপাদন বাড়ালে বিশ্বে যোগান বাড়বে, আর এ কারণে এর দাম অনেকটা কমে যাবে, এজন্য চীনের বাণিজ্য হতে লাভ কমে যাবে। একটি ক্ষুদ্র দেশ বড় দেশের তুলনায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের থেকে বেশি লাভবান হয়ে থাকে। আর দেশের আয়তনের উপর বাণিজ্য থেকে লাভ নির্ভর করে থাকে। নিচে এ সম্পর্কিত দুইটি দিক তুলে ধরা হলো:
ক. বিনিময়জনিত লাভ: একটি ক্ষুদ্র দেশ আন্তর্জাতিক বাজারে বিনিময় অনুপাতকে কার্যত তেমনভাবে প্রভাবিত না করে পণ্য সামগ্রী উৎপাদন করতে সক্ষম হয়ে থাকে। ক্ষুদ্র দেশের উৎপাদন ব্যয়ের অনুপাত আন্তর্জাতিক মূল্যের অনুপাত থেকে সাধারণত দূরে অবস্থান করে থাকে। তাই বিনিময়জনিত লাভের কারণে ক্ষুদ্র দেশ বাণিজ্য থেকে লাভ করে থাকে।
খ. বিশেষায়নজনিত লাভ: বিনিময় অনুপাতকে তেমনভাবে প্রভাবিত না করেই একটি ক্ষুদ্র দেশ পণ্যসমূহ উৎপাদনে বিশেষায়ন করে সফল হয় বিধায় বিশেষভাবে পণ্যসমূহ রপ্তানির বিনিময়ে যে আমদানিকৃত পণ্য পাওয়া যায়, তা থেকে যথেষ্ট পরিমাণ লাভ পাওয়া সম্ভব। বলা যায় যে, পণ্যসমূহ বিশেষায়নের মাধ্যমে ক্ষুদ্র দেশ বড় দেশের তুলনায় বেশি লাভবান হয়।
অতএব, একটি দেশের আয়তন কেবল ভৌগোলিক সীমারেখার দিক থেকে বিবেচনা করা হয় না, তা বিবেচনা করা হয়েছে অর্থনৈতিক অবস্থার দিক থেকে। যদি ক্ষুদ্র দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদ এবং অভ্যন্তরীণ ব্যয় আন্তর্জাতিক বিনিময় অনুপাতের নিকটে অবস্থান করে, তাহলে বাণিজ্য থেকে লাভ কম হবে। তবে প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধশালী ক্ষুদ্র দেশের পণ্যসমূহের আন্তর্জাতিক মূল্য এবং অভ্যন্তরীণ ব্যয়ের মধ্যে কার্যত ব্যবধান বেশি থাকে তাহলে লাভ বেশি হয়ে থাকে। [শারমিন জাহান সায়মা]
সহায়িকা: জোয়ারদার, সুকেশ চন্দ্র; আলম, মোঃ শাহ; আখতার, সুফিয়া ও ইসলাম, মোঃ নজরুল, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, (২০২০), মিলেনিয়াম পাবলিকেশন্স, ঢাকা, পৃষ্ঠা-৯৮।
ছোট দেশ বাণিজ্যের মাধ্যমে কীভাবে লাভবান হয়?
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL