জীবকোষ ও কোষের প্রকারভেদ

জীবকোষ:

আমরা জানি যে, জীবকোষ হলো জীবদেহের একক। বিজ্ঞানীদের মধ্যে কেউ কেউ জীবকোষকে জীবদেহের গঠন ও জীবজ ক্রিয়াকলাপের একক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ১৯৬৯ সালে বিজ্ঞানী Loewy এবং Slekevita উল্লেখ করেন যে, বৈষম্য ভেদ্য (selectively permeable) পর্দা নিয়ে আবৃত এবং জীবজ ক্রিয়াকলাপের একক, যা অন্য সজীব মাধ্যম ছাড়াই নিজের প্রতিরূপ তৈরি করতে পারে, এমন সত্তাই হলো কোষ (cell)।

কোষের প্রকারভেদ:

বিজ্ঞানীগণ সকল জীবকোষের মধ্যে ভিন্নতা লক্ষ্য করেন। প্রতিটি জীবকোষের মধ্যে যেমন গঠনগত পার্থক্য রয়েছে, তেমনই আকৃতি ও কাজেরও পার্থক্য রয়েছে। নিউক্লিয়াসের গঠনের উপরে ভিত্তি করে কোষ সাধারণত দুই প্রকারের। যেমন- (১) আদি কোষ এবং (২) প্রকৃত কোষ।

জীবকোষ ও কোষের প্রকারভেদ

(১) আদিকোষ (prokaryotic cell): আদিকোষে সাধারণত কোনো ধরনের সুসংগঠিত নিউক্লিয়াস (nucleus) নেই। এ কারণেই এসব কোষকে আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত কোষও বলে। কোনো ধরনের পর্দা দিয়ে এসব কোষের নিউক্লিয়াস আবৃত থাকে না। তাই নিউক্লিও-বস্তু এসব কোষের সাইটোপ্লাজমে ছড়ানো থাকে। এসব কোষে রাইবোজোম থাকলেও মাইটোকন্ড্রিয়া, প্লাস্টিড, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, প্রভৃতি অঙ্গাণু থাকে না। এসব কোষের ক্রোমোজোমে কেবল ডিএনএ (DNA) থাকে। এ ধরনের কোষসমূহ সাধারণত নীলাভ সবুজ শৈবাল বা ব্যাকটেরিয়ায় পাওয়া যায়। এ আদিকোষকে আবার প্রাককেন্দ্রিক কোষও বলা হয়।

(২) প্রকৃত কোষ (eukaryotic cell): প্রকৃত কোষে সাধারণত সুসংগঠিত নিউক্লিয়াস রয়েছে। অর্থাৎ এসব কোষ নিউক্লিয়ার ঝিল্লি (nuclear membrane) দিয়ে নিউক্লিও-বস্তু পরিবেষ্টিত এবং সুসংগঠিত। এসব কোষে রাইবোজোমসহ সকল অঙ্গাণু থাকে। এসব কোষের ক্রোমোজোমে ডিএনএ (DNA), প্রোটিন, হিস্টোন এবং অন্যান্য উপাদান থাকে। অধিকাংশ জীবে এ ধরনের কোষ পাওয়া যায়। এ প্রকৃত কোষকে আবার সুকেন্দ্রিক কোষও বলা হয়। কাজের ভিত্তিতে প্রকৃত কোষ দুই ধরনের। যেমন- (২.১) দেহকোষ এবং (২.২) জননকোষ।

(২.১) দেহকোষ (somatic cell): এসব কোষ সাধারণত বহুকোষী জীবের দেহ গঠন করে। দেহকোষ মাইটোসিস পদ্ধতিতে বিভাজনের মাধ্যমে বিভাজিত হয়। এরূপভাবে জীবের দেহের বৃদ্ধি ঘটে। জীবের বিভিন্ন তন্ত্র এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠনে দেহকোষ অংশগ্রহণ করে।

(২.২) জননকোষ (gametic cell): যে সব জীবে যৌন প্রজনন ও জনঃক্রম হয়, সে সব জীবে জননকোষ উৎপাদিত হয়। সাধারণত মিয়োসিস পদ্ধতিতে জনন মাতৃকোষ বিভাজিত হয় এবং জনন কোষ উৎপাদিত হয়। মাতৃজনন কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা অপত্য জননকোষের ক্রোমোজোম সংখ্যার দ্বিগুণ থাকে। পুরুষ ও স্ত্রী জননকোষ মিলিত হয়ে নতুন জীবের দেহ গঠন শুরু হয়। পুরুষ ও স্ত্রী জননকোষের মিলনের ফলে বিশেষ ধরনের প্রথম কোষ সৃষ্টি হয়। সৃষ্ট এ কোষকে জাইগোট (zygote) বলা হয়। আর এ জাইগোট বারবার বিভাজিত হয়ে জীবদেহ গঠিত হয়। [সংকলিত]


Image: Cell (biology)


Leave a Reply