নারীর প্রতি সম্মান: ইসলাম ধর্মে কী বলে?

নারীর প্রতি সম্মানবোধ একটি মহৎগুণ। সাধারণ অর্থে নারীর প্রতি সম্মানবোধ হলো নারীকে সম্মান প্রদর্শনের মনোভাবকে বুঝায়। আর ব্যাপক অর্থে নারীর প্রতি সম্মানবোধ হলো নারী জাতির প্রতি সম্মানজনক মনোভাব। অর্থাৎ সৃষ্টির বিচারে নর ও নারীর সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করা। যথাযথভাবে নারীদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা প্রদান, নারীদের কাজ করার সুযোগ প্রদান, তাদের সম্পদ, ইজ্জত, সম্মানের সংরক্ষণ, ইত্যাদি নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রকৃত উদাহরণ।

ইসলাম ধর্মে নারীদের সীমানাহীন সম্মান দেয়া হয়েছে। ইসলামের নবী মুহাম্মদ (স.)-এর আবির্ভাবের পূর্বে সারা বিশ্বজগৎ বিশেষ করে আরব সমাজে নারীদের কোনো মান-মর্যাদা ছিল না। অজ্ঞতা ও বর্বরতার অন্ধকারে নিমজ্জিত আরব সমাজের নারীদের কোনোরূপ অধিকার ছিল না। সে সময় নারীদের মনে করা হতো দ্রব্যসামগ্রী। তারা ছিল ক্রীতদাস, ভোগ্যপণ্য, আনন্দদায়ক, প্রেমদায়িনী, নরকের দরজা, ইত্যাদি নামে খ্যাত। এমনকি নারীদের মানুষ হিসেবে গণ্য না করে কোনো কোনো সভ্যতায় তাদের বিষধর সাপের সাথে তুলনা করা হয়েছিল। তৎকালীন আরব সমাজের লোকজন কন্যা সন্তানের জন্মকে অপমানজনক মনে করতো এবং কন্যা শিশুকে জীবন্ত কবর দিতো। ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ আল-কুরআনে তাদের এ নিকৃষ্ট কাজের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ (সৃষ্টিকর্তা) বলেন,

“যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তার মুখমন্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ব্যথিত হয়।” (সূরা আন-নাহল, আয়াত ৫৮)

নারীদের এরূপ অপমানজনক অবস্থা থেকে মুক্তি দান করে ইসলামই সর্বপ্রথম নারীদের অধিকার ও মর্যাদার ঘোষণা করেছে। জীবনের নানা ক্ষেত্রে নারীদের অবদান ও ভূমিকার স্বীকৃতি প্রদান করে মানুষকে নারীর প্রতি সম্মানবোধের আদেশ করেছে। ইসলামে নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে সফলতা লাভের দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে।
সৃষ্টিগতভাবে ইসলামে নর ও নারীর মধ্যে কোনো রূপ পার্থক্য নেই। বরং আল্লাহ (সৃষ্টিকর্তা) নর ও নারী উভয়ের মাধ্যমেই পৃথিবীতে মানবজাতির জন্ম ও বিস্তার ঘটিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,

يايها النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَ انْقَى
অর্থ: “হে মানব সম্প্রদায়! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও নারী থেকে।” (সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত ১৩)

ধর্মীয় স্বাধীনতা, মর্যাদা এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি অর্জনের ক্ষেত্রেও ইসলাম নারীদেরকে পুরুষের সমান সম্মান ও অধিকার প্রদান করেছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,

“ইমান গ্রহণ করে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যেই সৎকর্ম করবে সেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ ব্যাপারে কারও প্রতি বিন্দুমাত্র অবিচার করা হবে না।” (সূরা আন নিসা, আয়াত ১২৪)

পারিবারিক ও সামাজিক জীবনেও ইসলাম নারীদের মর্যাদা ও সম্মান প্রদান করেছে। মা হিসেবে নারীকে সন্তানের কাছে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদান করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.) ঘোষণা করেন,

الْجَنَّةُ تَحْتَ أَقْدَاءِ الْأُمَّهَاتِ
অর্থ: মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত।” (মুসনাদে শিহাব আল-কাযায়ি)

হাদিসে উল্লেখ রয়েছে,

একবার এক জন সাহাবি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার সবচেয়ে বেশি দাবিদার কে? রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, তোমার মাতা; ঐ সাহাবি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, অতঃপর কোন ব্যক্তি? রাসুল (স.) বললেন, তোমার মাতা। এভাবে পরপর তিনবার এরূপ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে রাসুল (স.) একই উত্তর দিলেন। চতুর্থবারে রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, তোমার পিতা।

এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সন্তানের উপর পিতার চেয়ে মাতার অধিকার তিনগুণ বেশি। এটি মা হিসেবে নারীর শ্রেষ্ঠ মর্যাদার পরিচায়ক।

ইসলামে কন্যা হিসেবেও নারীকে সীমাহীন মর্যাদা দিয়েছে। ইসলাম জীবন্ত কন্যা সন্তানকে কবর দেয়া হারাম ঘোষণা করেছে। ইসলাম কন্যা সন্তানদের ভালোভাবে প্রতিপালনের জন্য নির্দেশ প্রদান করেছে। স্ত্রী হিসেবে নারীর মর্যাদা ও সম্মান স্বামীর অনুরূপ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,

وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوْفِ
অর্থ : “নারীদের তেমনই ন্যায়সংগত অধিকার আছে, যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের ” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২২৮)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,

هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ
অর্থ : “তারা (নারীগণ) তোমাদের (পুরুষদের) ভূষণ (অলঙ্কার/প্রসাধন/আবরণ) আর তোমরা (পুরুষদের) তাদের (নারীগণ) ভূষণ।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৭)

ইসলাম অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও নারীদের সমান অধিকার ও মর্যাদা সংরক্ষণ করেছে। পিতা-মাতার সম্পত্তির উত্তরাধিকার হিসেবেও নারীগণ সম্পদ লাভ করবে। নারীগণ তাদের নিজেদের ধন-সম্পদ স্বাধীনভাবে ব্যয় করতে পারবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,

“পুরুষ যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ, এবং নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ” (সুরা আন-নিসা, আয়াত ৩২)

মানবজীবনের সকল ক্ষেত্রেই ইসলাম নারী জাতির অধিকার ও মর্যাদা ঘোষণা দিয়েছে। ইসলাম ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নারীদের সকল অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছে। [সংকলিত]


নারীর প্রতি সম্মানবোধ মানুষের কিসের পরিচায়ক?


Follow Us in Our Youtube Channel: GEONATCUL


Leave a Reply