পদ মূল্যায়নের উদ্দেশ্য

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় পদ মূল্যায়নের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো, ঠিক করা প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মীকে পদোন্নতি দেয়া হবে, কার বেতন বৃদ্ধি করা হবে কিংবা পদ পরিবর্তন করা হবে কিংবা কাকে পদচ্যুত করা হবে। তবে এ সকল উদ্দেশ্য ছাড়াও পদ মূল্যায়নের আরও কতিপয় উদ্দেশ্য রয়েছে। নিম্নে সে সব উদ্দেশ্য আলোচনা করা হলো:

১। পেশা উন্নয়ন (career development): পেশা উন্নয়ন হলো পদ মূল্যায়নের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। পদ মূল্যায়ন পেশা উন্নয়নের জন্য যে সকল ক্ষেত্রে সম্পর্কিত সেগুলো হলো:
ক. যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী পেশা নির্ধারণ ও পেশা উন্নয়নের জন্য কৌশল প্রণয়ন করা।
খ. পেশা উন্নয়নের জন্য কর্মীদের পরামর্শের প্রয়োজন হয়। পদ মূল্যায়ন কর্মীদের জন্য পেশাগত পরামর্শের সুযোগ তৈরি করে দেয়।
গ. পেশাগত উন্নয়নের জন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। কোনো কর্মীর কোন ধরনের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন, তা পদ মূল্যায়নের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়।
ঘ. পেশা উন্নয়নের জন্য কর্মীদের দক্ষতার মূল্যায়ন এবং দক্ষতার উন্নয়ন আবশ্যক। পদ মূল্যায়নের মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতা মূল্যায়ন ও উন্নয়ন সম্ভব হয়।

২। তথ্য সংগ্ৰহ (data collection): প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মী সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা, পদ মূল্যায়নের প্রধান উদ্দেশ্য। কর্মীরা তাদের কাজ কতটুকু সাফল্যের সাথে সম্পাদন করতে পারছে, কাজ করতে গিয়ে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হলো এবং কোনো সংশোধনমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে কিনা? এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে পদ মূল্যায়ন করা হয়।

৩। কর্মী বাছাই (employee selection): প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকল কর্মীর যোগ্যতা ও দক্ষতা সমান হয় না। এদের মধ্যে কারো দক্ষতা বেশি আবার কারো দক্ষতা কম। কর্মীদের অনেকেই পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য, আবার অনেকে বর্তমান স্থানটি ধরে রাখার জন্য উপযুক্ত নয়। পদ মূল্যায়নের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো এ সকল দক্ষ, অদক্ষ, পদোন্নতি ও পদাবনতির যোগ্য কর্মীদের চিহ্নিত বা বাছাই করা।

৪। মজুরি ও বেতন নির্ধারণ (determine wages and salary): কর্মীদের বেতন ও মজুরি নির্ধারণ করা পদ মূল্যায়নের অন্যতম উদ্দেশ্য। কারণ কর্মীরা তাদের কৃতকাজ অনুযায়ী বেতন ও মজুরি আশা করে। তাই পদ মূল্যায়ন এক্ষেত্রে বিশেষ প্রয়োজন।

৫। কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধি (increase employees’ confidence): পদ মূল্যায়নের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো কর্মীদের মনোবল উন্নয়ন। পদ মূল্যায়নের ফলে কর্মীরা তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা সম্পর্কে জানতে পারে। এতে তাদের মনোবল বৃদ্ধি পায় এবং প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

৬। কার্যে অনুপ্রাণিত করা (inspired to work): কর্মীদের মধ্যে অনুপ্রেরণা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পদ মূল্যায়ন পরিচালনা করা হয়। কর্মীরা যদি মূল্যায়নে ভালো ফলাফল পায়, তবে স্বাভাবিকভাবেই কাজে অনুপ্রাণিত হবে। আবার খারাপ ফলাফল পেলে, সেটা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করে।

৭। কার্যকর নিয়ন্ত্রণ (effective control): পদ মূল্যায়নের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ অতি সহজেই প্রত্যেক কর্মী সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারেন। ফলে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ তাদেরকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

৮। সিদ্ধান্ত গ্রহণ (decision making): প্রতিষ্ঠান উপযুক্ত পদ্ধতিতে কর্মী মূল্যায়ন করলে কর্তৃপক্ষ কর্মী সংক্রান্ত যে কোনো সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারেন। দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে প্রতিষ্ঠানের কর্ম পরিবেশ সুন্দর রাখা সম্ভব হয়।

৯। প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা (training): প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা হলো পদ মূল্যায়নের বিশেষ একটি উদ্দেশ্যে। এই মূল্যায়ন অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা প্রণয়নে সহযোগিতা করে। ফলে কর্মীদের মধ্যেও কাজ সন্তুষ্টি যথাহারে বৃদ্ধি পায়।

১০। কাজ তুলনা করা (similarity of act): প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কাজের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করে কাজ তুলনা করা পদ মূল্যায়নের অন্যতম উদ্দেশ্য।

১১। পদের ক্রম তৈরি (order of job): প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্রম অনুসারে পদ তৈরি করা অত্যন্ত উপযোগী। এর পরিপ্রেক্ষিতে ধাপে ধাপে কাজ সম্পাদন করা যায়। কর্মীরাও কাজের প্রতি আগ্রহী হয়।

পরিশেষে বলা যায়, কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের সম্পর্কে সঠিক ধারণা গ্রহণ এবং সকলের সাথে উত্তম সম্পর্ক স্থাপন, তথা প্রতিষ্ঠানে শান্তি শৃঙ্খলা আনয়ন ও লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে, পদ মূল্যায়ন অপরিহার্য। [শারমিন জাহান সায়মা]


সহায়িকা: আলাউদ্দিন, প্রফেসর ড. মোঃ; ইসলাম, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ নূরুল; ইসলাম, মোহাঃ বদরুল; ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থাপনা; আগস্ট, ২০১৮/২০১৯; ঢাকা: গ্রন্থ কুটির; পৃষ্ঠা ৮৬-৮৭।


পদ মূল্যায়নের উদ্দেশ্য কি?


Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL


Leave a Reply