পরমাণু ধারণা বিকাশের ইতিহাস এবং এর গঠন

পরমাণু ধারণা বিকাশের ইতিহাস এবং এর গঠন:

পরমাণু হলো পদার্থের ক্ষুদ্র কণা। এ ক্ষুদ্র কণা দুই ধরনের হয়ে থাকে। যেমন- অণু ও পরমাণু। একের অধিক পরমাণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে অণু গঠিত হয়। ক্ষুদ্রতম কণার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞানী ও দার্শনিকগণ নানা রকম মতবাদ ব্যক্ত করেছেন।

গ্রীক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ অব্দে সর্বপ্রথম পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা নিয়ে মতবাদ পোষণ করেছেন। তার মতে সকল পদার্থই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অবিভাজ্য (যা আর ভাঙা যায় না) কণা দ্বারা গঠিত। তিনি এ ক্ষুদ্রতম কণার নাম দেন পরমাণু বা এটম (atom)। এটম (atom) কথাটি তিনি নিয়েছিলেন গ্রীক শব্দ এটোমোস (atomos) থেকে; যার অর্থ হলো অবিভাজ্য। তার সমসাময়িক সময়ের আরও দু’জন দার্শনিক প্লেটো (Plato) এবং অ্যারিস্টটল (Aristotle) তার মতবাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন।

অ্যারিস্টটলের মতে, পদার্থসমূহ নিরবিচ্ছিন্ন (continues), একে যতই ভাঙা হোক না কেন, পদার্থের কণাগুলো ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতর হতে থাকবে।

১৮০৩ সালে ইংরেজ বিজ্ঞানী জন ডান্টন (John Dalton) পরীক্ষালব্ধ তথ্যের উপর ভিত্তি করে পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা সম্পর্কে বলেন- পরমাণু হলো মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা এবং একে আর ভাঙা যায় না। ডান্টলের এ মতবাদ সকলে গ্রহণ করে। ফলে অ্যারিস্টটলের মতবাদটি পরিত্যক্ত হয়।

প্রকৃতপক্ষে পরমাণু অবিভাজ্য নয়; কিংবা ক্ষুদ্রতম কণিকাও নয়। পরমাণু বিভাজ্য। পরমাণু সাধারণত ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন দ্বারা গঠিত।

বোর প্রস্তাবিত পরমাণুর মডেল, পরমাণু ধারণা বিকাশের ইতিহাস এবং এর গঠন
বোর প্রস্তাবিত পরমাণুর মডেল

ডাল্টনের পরমাণুবাদের এ সীমাবদ্ধতা দূর করার জন্য পরবর্তীতে আরও অনেকে পরমাণু মডেলের প্রস্তাব করেন। এদের মধ্যে রাদারফোর্ডবোরের পরমাণু মডেল গ্রহণযোগ্যতা পায়।

রাদারফোর্ড প্রস্তাবিত পরমাণু মডেল, পরমাণু ধারণা বিকাশের ইতিহাস এবং এর গঠন
রাদারফোর্ড প্রস্তাবিত পরমাণু মডেল

একসময়ের বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড ও তাঁর সহকর্মীরা একটি পরীক্ষা করেন, যা পরমাণুর গঠন সম্পর্কে ভালো ধারণা দেয়। পরীক্ষালব্ধ ফল থেকে রাদারফোর্ড বলেন যে, পরমাণুতে ধনাত্নক আধান ও ভর একটি ক্ষুদ্র জায়গায় আবদ্ধ। তিনি এর নাম দেন নিউক্লিয়াস। তিনি আরও ব্যাখ্যা দেন যে, পরমাণুর বেশিরভাগ জায়গা ফাঁকা, আর ঋণাত্মক আধানযুক্ত কণার তেমন কোনো ভর নেই এবং তারা নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘুরছে।

উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় যে, পরমাণু অবিভাজ্য নয়। পরমাণু ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রনের সমন্বয় গঠিত। পরমাণুর কেন্দ্রে রয়েছে নিউক্লিয়াস। নিউক্লিয়াসে ধনাত্মক আধানযুক্ত প্রোটন ও নিরপেক্ষ আধানযুক্ত নিউট্রন রয়েছে। পরমাণুর ভরের প্রায় পুরোটাই নিউক্লিয়াসে থাকে। ঋণাত্মক আধানযুক্ত ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরে। ইলেক্ট্রন ও নিউক্লিয়াসের মধ্যবর্তী জায়গা ফাঁকা। প্রকৃতপক্ষে পরমাণুর বেশিরভাগ জায়গা ফাঁকা। [ইশরাত জাহান মিম]


সহায়িকা: পরমাণুর গঠন, বিজ্ঞান বোর্ড বই (৮ম শ্রেণি), পৃষ্ঠা ৫৬। ছবি: wikimedia.org


Follow Us in Our Youtube Channel: GEONATCUL


Leave a Reply