পাহাড়পুর বিহার বিখ্যাত কেন? এবং এটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার কারণ

বাংলাদেশের মানবসভ্যতার ইতিহাসের সেরা কীর্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কীর্তি হলো সোমপুর বিহার বা পাহাড়পুর মহাবিহার। প্রাচীনকালের মানুষের তৈরি এ কীর্তিটি বর্তমান নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলায় পাহাড়পুরে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর বিশাল আকৃতির বৌদ্ধ বিহারগুলোর মধ্যে অন্যতম। সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে এর চেয়ে বড় কোনো বৌদ্ধ বিহার নেই। এ বিহারের ভিক্ষুরা নালন্দা, বুদ্ধগয়া, ইত্যাদি ধর্ম উপাসনালয় ও শিক্ষাকেন্দ্রে ধনরত্ন ও নগদ অর্থ সাহায্য দিতেন। এতে এ বিহারটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কথা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এ বিহারটি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হতো। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়টিতে জ্ঞান অর্জনের জন্য তখনকার সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ছাত্ররা এসে ভিড় জমাতো। এককালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি নালন্দাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল বলে একে বাংলাদেশের নালন্দা বলে অভিহিত করা হয়। এজন্যই পাহাড়পুর বিহার বিখ্যাত।

পাহাড়পুর বিহার
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, সূত্র: wikipedia.org

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার কারণ:

উত্তর ভারতের প্রতীহার নামীয় ব্রাহ্মণ্য মতাদর্শ অনুসারী রাজবংশের শাসনামলে এ বিহারটিতে প্রথম আক্রমণ পরিচালিত হয়। সর্বশেষ একাদশ শতকের শেষদিকে অথবা দ্বাদশ শতাব্দীর প্রথমদিকে এ বিহারটি বিদ্রোহী ব্রাহ্মণ্য মতানুসারী সৈন্যদের দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং এ শতাব্দীতেই এ অঞ্চলে ব্রাহ্মণ্য মতানুসারী রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে এ বৌদ্ধবিহার থেকে রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য প্রত্যাহার করা হয়। তাছাড়া তখন এ মহাবিহারের জ্ঞানার্থী শিক্ষার্থীরাও এদেশে বৌদ্ধধর্মের চূড়ান্ত বিপর্যয়ের সময় বিহার ছেড়ে চলে যায়। এভাবেই ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত এ মহাবিহারটি ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয় এবং বনজঙ্গলে ভরে যায়। [ইশরাত জাহান মিম]


সহায়িকা: সরকার, ড. মোহাম্মদ আব্দুল মালেক, (জুন ২০১৩), সমাজ বিজ্ঞান একাদশ-দ্বাদশ, ঢাকা: লেকচার পাবলিকেশন্স লি., পৃষ্ঠা – ৯৯।


Follow Us in Our Youtube Channel: GEONATCUL


Leave a Reply