প্রকল্প ঝুঁকির প্রকারভেদ

প্রকল্প ঝুঁকি বলতে এই সকল ঝুঁকিকে বুঝায়, যা দ্বারা প্রকল্প ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। তাই প্রকল্প ঝুঁকি সঠিকভাবে চিহ্নিত করা অতি জরুরি। নিম্নে বিভিন্ন প্রকার প্রকল্প ঝুঁকি সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো।

১. বাহ্যিক ঝুঁকি (external risk): প্রকল্প বা প্রতিষ্ঠানের বাহিরে বিদ্যমান যে সকল ঝুঁকি প্রকল্পকে প্রভাবিত করে বা সফলভাবে প্রকল্প সম্পন্ন করার অন্তরায় হিসেবে কাজ করে তাকে বাহ্যিক ঝুঁকি বলে। যেমনঃ সরকারের আইন-কানুন, ক্রেতা, প্রতিযোগী, ইত্যাদি।

২. আর্থিক ঝুঁকি (monetary risk): প্রকল্পের অর্থ সংক্রান্ত ঝুঁকি হলো আর্থিক ঝুঁকি। মুদ্রাস্ফীতি, ব্যয়, আয়, বাজেট, মুদ্রার বিনিময় হার ইত্যাদি সম্পর্কিত ঝুঁকিসমূহ আর্থিক ঝুঁকির অন্তর্ভুক্ত।

৩. পরিবেশগত ঝুঁকি (environmental risk): প্রকল্পের পরিবেশ সংশ্লিষ্ট ঝুঁকিসমূহ হলো পরিবেশগত ঝুঁকি। আবহাওয়া প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রকল্পের অবস্থান, প্রকল্পের পরিবেশ ইত্যাদি সম্পর্কিত ঝুঁকি হলো পরিবেশগত ঝুঁকি।

৪. সাংগঠনিক ঝুঁকি (organizational risk): প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত ঝুঁকিকে সাংগঠনিক ঝুঁকি বলে। যোগাযোগ, নেতৃত্ব, সাংগঠনিক কাঠামো ইত্যাদি সম্পর্কিত ঝুঁকিসমূহ সাংগঠনিক ঝুঁকির অন্তর্ভুক্ত।

৫. সম্পদ উপকরণের ঝুঁকি (resource risk): কোম্পানির সামর্থ্য সংশ্লিষ্ট ঝুঁকিকে সম্পদ উপকরণের ঝুঁকি বলে। সরঞ্জাম এবং এদের গুণগত মান সম্পর্কিত ঝুঁকি সম্পদ উপকরণের ঝুঁকির অন্তর্ভুক্ত।

৬. পরিচালনাগত ঝুঁকি (operational risk): প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট ঝুঁকিকে পরিচালনাগত ঝুঁকি বলে। গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতির নষ্ট বা প্রয়োজনীয় কার্য ও কাজের নকশা পরিবর্তন ইত্যাদি সম্পর্কিত ঝুঁকি পরিচালনাগত ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।

৭. কারিগরি ঝুঁকি (technical risk): প্রকল্পের কারিগরি ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত ঝুঁকিকে কারিগরি ঝুঁকি বলে। প্রযুক্তির পরিবর্তন, প্রযুক্তি অচল বা বিকল হওয়া, কার্যপদ্ধতি পরিবর্তন, যন্ত্রপাতি বিন্যাসে ত্রুটি, যন্ত্রপাতির সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ইত্যাদি কারিগরি ঝুঁকির অন্তর্ভুক্ত।

৮. আইনগত ঝুঁকি (legal risk): প্রকল্পের আইনগত বিষয়ে যে ঝুঁকি সৃষ্টি হয় তাকে আইনগত ঝুঁকি বলে। যেমন- লাইসেন্স, প্যাটেন্ট, আইন ভঙ্গ, চুক্তিগত ব্যর্থতা, ইত্যাদি সম্পর্কিত ঝুঁকি আইনগত ঝুঁকির উদারহরণ।

৯. অবস্থানগত ঝুঁকি (site risk): প্রকল্পের স্থান দুষ্প্রাপ্য হতে পারে অথবা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প সম্পন্ন করার জন্য যে স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে, তা ব্যবহারের অনুপযোগী হতে পারে। এ ধরনের ঝুঁকিকে প্রকল্পে অবস্থানগত ঝুঁকি বলে।

০. ঠিকাদার বা উদ্যোক্তা ঝুঁকি (contractor risk): বিশেষ কোনো ঠিকাদার ও উপ-ঠিকাদার চুক্তি মোতাবেক কার্য সম্পন্ন করতে পারে না। সেক্ষেত্রে ঠিকাদার বা উদ্যোক্তার নিকট থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায় না। যেমন: বেশ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশে অক্সিডেন্টাল কোম্পানি কর্তৃক পরিচালিত মাগুর ছড়া গ্যাস ক্ষেত্র প্রকল্পে দুর্ঘটনা দ্বারা বিপুল ক্ষতি সাধিত হলেও বাংলাদেশ সরকার অক্সিডেন্টাল কোম্পানির নিকট থেকে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারেনি। এ ধরনের ঝুঁকি উদ্যোক্তা ঝুঁকির উদাহরণ।

১১. চাহিদা পূর্বানুমান ঝুঁকি (demand forecasting risk): প্রকল্প যখন শুরু করা হয়, তখন পণ্য বা যে চাহিদা পূর্বানুমান করা হয় তা সর্বদাই নির্ভুল হয় না। কেননা চাহিদা পরিবর্তনশীল। চাহিদা হ্রাস পেলে প্রকল্পের প্রত্যাশিত মুনাফা অর্জিত হয় না এবং প্রকল্পের আয় কমে যায়। এ ধরনের ঝুঁকিকে চাহিদা পূর্বানুমান ঝুঁকি বলে।

১২. শিল্প সম্পৰ্কীয় ঝুঁকি (industrial relations risk): বিরূপ শিল্প সম্পর্কেএর জন্য যে ঝুঁকি সৃষ্টি হয়, তাকে শিল্প সম্পৰ্কীয় ঝুঁকি বলে। যেমন- হরতাল, ধর্মঘট, তালাবদ্ধ অবরোধ, শ্রমিক অসন্তোষ, জ্বালাওপোড়াও, পিকেটিং, কার্য স্থগিত ইত্যাদি বিষয় দ্বারা শিল্প সম্পর্কীয় ঝুঁকি সৃষ্টি হয় এবং এ ধরনের ঝুঁকি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রকল্পকে প্রভাবিত করে।

১৩. আইন বিষয়ক ও সরকারের নীতি ঝুঁকি (legislative and government policy risk): অনেক সময় সরকার এমন কিছু বিধি বিধান ও নীতি প্রণয়ন করেন, যা প্রকল্পের বিপক্ষে যায় এবং প্রকল্পের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। যেমন- সরকারের শিল্পনীতি, বাণিজ্যনীতি, বিনিয়োগ নীতি, আমদানি-রপ্তানি নীতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি, মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি, ইত্যাদি প্রকল্পের অনুকূলে না থাকলে এ সকল নীতি প্রকল্পের জন্য নানামুখী ঝুঁকি সৃষ্টি করে।

১৪. সম্পত্তি মালিকানা ঝুঁকি (asset ownership risk): দ্রুত প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও পরিবর্তনের দরুণ প্রকল্পের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম অচল বা বিকল হতে পারে। ফলে যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম এবং অন্যান্য সম্পত্তির মূল্য হ্রাস পায়। ফলে প্রকল্পের বিরাট আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়। এ ধরনের সমস্যা প্রকল্পের চুক্তিকালীন সময়ে হতে পারে আবার চুক্তির মেয়াদ শেষেও হতে পারে। ফলে এ ধরনের আর্থিক ক্ষতির দায় ভারকে বহন করবে, তা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয় এবং সম্পত্তি মালিকানা ঝুঁকি সৃষ্টি হয়।

যে কোন ঝুঁকি সুষ্ঠুভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে বাঁধা সৃষ্টি করে। সুতরাং ঝুঁকিসমূহ যথাযথভাবে মোকাবিলা করা গেলে সফলভাবে প্রকল্প সম্পন্ন করা সম্ভব। [শারমিন জাহান সায়মা]


ঝুঁকির প্রকারভেদ।
Types of Risk


সহায়িকা: রাসুল, ড. মো: সিরাজুর এবং ইসলাম, মো: নজরুল, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, (২০১৬/১৭), কমার্স পাবলিকেশন্স, ঢাকা, পৃষ্ঠা ২৯৮-২৯৯।


Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL


Leave a Reply