প্রত্নতত্ত্বের ধারণা এবং এর উৎস
প্রত্নতত্ত্ব [Archaeology] শব্দটির দুইটি অংশ হল ‘প্রত্ন’ ও ‘তত্ত্ব’। ‘প্রত্ন’ মানে হল পুরাতন বা প্রাচীন এবং ‘তত্ত্ব’ মানে হল জ্ঞান বা বিদ্যা। অর্থাৎ প্রাচীনকালে মানুষের সৃষ্ট ও ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণের (যেমন- হাতিয়ার, তীর, ধনুক, স্থাপত্য, ঘরবাড়ি, তৈজসপএ, আসবাবপত্র, মুদ্রা, লিপি, গ্রন্থ, ইত্যাদি) বিচার দ্বারা সেকালের ইতিহাস আবিষ্কার করার সাথে সংশ্লিষ্ট বিদ্যাকে প্রত্নতত্ত্ব বলা হয়। প্রত্নতত্ত্ব মূলত জরিপ, খনন ও অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ধারকৃত হাতিয়ার, তীর, ধনুক, স্থাপত্য, ঘরবাড়ি, তৈজসপত্র, আসবাবপত্র, ইত্যাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে নিকট অতীতের মানব সমাজ সম্পর্কে গবেষণার বিষয়। আবার বলা যায় যে, প্রাচীন যুগের মানুষের ব্যবহার্য দ্রব্যসামগ্রীর ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সে যুগের মানুষের সমীক্ষা বা অধ্যয়নই হলো প্রত্নতত্ত্ব। এককথায় প্রাগৈতিহাসিক থেকে শুরু করে নিকট অতীতকালের কিংবা বিলুপ্ত সংস্কৃতির অধ্যয়নই হল প্রত্নতত্ত্ব।
প্রত্নতত্ত্বের উৎস (sources of archaeology): প্রত্নতত্ত্বের প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানুষের ইতিহাস খুঁজে বের করা। এসব তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রত্নতত্ত্বের বেশকিছু উৎসের সাহায্য নিতে হয়। নিচে কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক উৎস সম্পর্কে ধারণা দেয়া হলো:
১. দলিল- দস্তাবেজ: প্রত্নতাত্ত্বিকগণ লিখিত দলিল-দস্তাবেজকে প্রত্নতত্ত্বের উৎস হিসেবে ব্যবহার করেন। যেমন: মেসোপটেমিয়া, মিশর ও গুয়েতেমালায় প্রাপ্ত নিদর্শন, ইত্যাদি। এছাড়া বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় ইতিহাস গ্রন্থও প্রত্নতত্ত্বের উত্তম উৎস হিসেবে কাজ করে।
২. প্রাচীন মানুষের কর্মকাণ্ড: পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ইউরোপীয়দের আগমনের পূর্বে কোন লিখিত ভাষার অস্তিত্ব ছিল না। যেহেতু প্রাগৈতিহাসিক যুগের কোনো লিখিত দলিল নেই, সে জন্য প্রত্নতাত্ত্বিকগণ মানুষের কর্মকাণ্ডের যেকোনো একটি ক্ষুদ্র অংশ, যেমন- হাতিয়ার, যন্ত্রপাতি, মাটির পাত্র, জীবজন্তুর হাড়, লতা-গুল্মা, লোহা, পাথর ইত্যাদির অংশবিশেষ গবেষণার সূত্র হিসেবে ব্যবহার করেন।
৩. জীবজন্তুর জীবাশ্ম: প্রত্নতাত্ত্বিক কাল নিরূপণ করার জন্য প্রত্নতাত্ত্বিকগণ জীবজন্তুর হাড়, কাঠ-কয়লা এবং গাছপালার অবশিষ্টাংশ সংরক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। অতীতের পরিবেশগত অবস্থা যাচাই এবং প্রত্নতাত্ত্বিক কাল নিরূপণের জন্য তেজস্ক্রিয় অঙ্গার কৌশল বা কার্বন ডেটিং ও তেজস্ক্রিয় পটাশিয়াম পদ্ধতির সাহায্য নেয়া হয়ে থাকে।
৪. নৃবিজ্ঞানের সহায়তা: সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের ও দৈহিক নৃবিজ্ঞানের তথ্যাদিও প্রত্নতাত্ত্বিক উৎস হিসেবে বিবেচিত। সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানী যেখানে বর্তমানের জীবিত মানবগোষ্ঠীকে নিয়ে গবেষণায় ব্যাপৃত, সেখানে প্রত্নতাত্ত্বিকগণ অতীতের বিকাশমান মানব সংস্কৃতি এবং মানবের উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কিত কাহিনি খুঁজে বের করতে চান। ফলে দৈহিক নৃবিজ্ঞানের সাথেও রয়েছে এর যোগ সাজশ, কারণ জীবশ্ম নিয়েও তাকে গবেষণা করতে হয়। এদিক থেকে প্রত্নতত্ত্ব দৈহিক নৃবিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের মধ্যে একটি বিশ্বস্ত সেতুর মতো কাজ করে।
৫. স্থানীয় মানুষের ধারণা: কোনো বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্থানীয় মানুষের ধারণা বা জ্ঞানও প্রত্নতত্ত্বের উৎসের মধ্যে পড়ে। যে কোনো কিছু সম্পর্কে প্রত্নতাত্ত্বিক ধারণা লাভের উদ্দেশ্যে স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা নেয়া যায়।
৬. সরকারি উৎসাদি: বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানও প্রত্নতত্ত্বের উৎস হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে জাদুঘর, গ্রন্থাগার, জাতীয় আর্কাইভস ইত্যাদি। [ইশরাত জাহান মিম]
সহায়িকা: সরকার, ড. মোহাম্মদ আব্দুল মালেক, সমাজ বিজ্ঞান, লেকচার পাবলিকেশন্স লি. ঢাকা পৃ: ৫৬-৫৭
প্রত্নতত্ত্বের ধারণা
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL