প্রেষণা (motivation) কী?

প্রেষণাকে ব্যবস্থাপনার একটি মনস্তাত্ত্বিক দিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই কমবেশি কর্মক্ষমতা থাকে, এবং কাজের ইচ্ছাও থাকে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে মানুষের এ কর্মদক্ষতা ও ইচ্ছা অপ্রকাশিত বা অন্তর্নিহিত থেকে যায়। প্রেষণার মাধ্যমে এগুলো জাগিয়ে তোলা সম্ভব। তাই বলা যায়, প্রেষণা (motivation) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মানুষের কর্মস্পৃহাকে জাগিয়ে তোলা হয়।

ইংরেজি ‘Motivation’ শব্দের বাংলা হলো প্রেষণা‘Motivation’ শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ‘Mover’ থেকে নেয়া হয়েছে, যার অর্থ হলো ‘To move’ অর্থাৎ চালনা করা বা গতিশীল করা কিংবা অবস্থার পরিবর্তন সাধন করা। সুতরাং প্রেষণা হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যার ফলে কর্মীগণ তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরূপে সম্পন্ন করে এবং তাদের অভাব পূরণে উৎসাহিত হয়।
একটি প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের সম্পদকে দু’ভাগ ভাগ করা যায়। যেমন-

১. কারিগরি সম্পদ (technical resources): সকল প্রকার মেশিন ও যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তি, কৌশল, কর্মপদ্ধতি প্রভৃতি হলো কারিগরি সম্পদ (technical resources)।
২. মানবীয় সম্পদ (human resources): নির্বাহীবৃন্দ, দক্ষ ও অদক্ষ কর্মীবৃন্দ ইত্যাদি হলো মানবীয় সম্পদ।

মেশিন ও যন্ত্রপাতিকে ঠিক মতো পরিচালনা করলে কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ করা যায়। কিন্তু মানবীয় সম্পদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তারা প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনাকে যথাযথভাবে গ্রহণ করছে না, ফলে প্রতিষ্ঠানের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে না। এ অসুবিধা দূর করে লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, যাতে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করতে আগ্রহী হয়। আর এ পদ্ধতির নামই হলো প্রেষণা (motivation)। এ প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্রেষণা হলো কর্মীদের কোনো নির্দিষ্ট কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করার প্রক্রিয়া, যা কর্মীদের কর্মস্পৃহা জাগিয়ে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যার্জনে সহায়তা করে। নিচে প্রেষণা (motivation) সম্পর্কে প্রদত্ত বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের মতামত তুলে ধরা হলো:

হেইলম্যান ও হরাস্টিন (Heilman and Horustein)-এর মতে, ‘কাজের প্রতি ব্যক্তির ইচ্ছাই হলো প্রেষণা।


ভ্রম (Vroom)-এর মতে, ‘প্রয়োজনীয় লক্ষ্য অর্জনের জন্য কর্মীদেরকে তাদের কর্মক্ষমতাকে পরিপূর্ণভাবে ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত বা প্ররোচিত করার প্রক্রিয়াকে প্রেষণা বলে।’

R. W. Griffin-এর মতে, ‘Motivation is the set of forces that causes people to behave in certain ways.’ (অর্থাৎ মানুষকে কাঙ্ক্ষিত আচরণে বাধ্য করে এমন ধরনের প্রভাবক শক্তিকে প্রেষণা বলে।)

এম. জে. গ্যানন (M. J. Gannon)-এর মতে, ‘Motivation basically means an individual’s needs, desires and concepts that cause him or her to act in a particular mariner.’ (অর্থাৎ প্রেষণা হলো মূলত একজন ব্যক্তির প্রয়োজন, ইচ্ছা এবং ধারণাসমূহ, যা তাকে একটি বিশেষ রীতিতে কাজ করতে বাধ্য করে।)

সুতরাং বলা যায় যে, প্রেষণা হলো কর্মীদের ইচ্ছা শক্তিকে জাগিয়ে তোলার একটি প্রক্রিয়া বিশেষ, যা দ্বারা কর্মীর ভেতর এমন একটি কর্মপ্রেরণা জাগিয়ে তোলা হয়, যে কর্মপ্রেরণা বলে কর্মী কার্যসম্পাদনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়োগ করে এবং প্রতিষ্ঠানের কার্যকরী লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। [শারমিন জাহান সায়মা]


সহায়িকা: আলাউদ্দিন, প্রফেসর ড. মোঃ; ইসলাম, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ নূরুল; ইসলাম, মোহাঃ বদরুল; ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থাপনা; আগস্ট, ২০১৮/২০১৯; ঢাকা: গ্রন্থ কুটির; পৃষ্ঠা ২৫১।


প্রেষণা কাকে বলে?


Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL


Leave a Reply