বহুপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি

প্রকৃতপক্ষে অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন দেশ অনুভব করছে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার, যা বহুপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে বাণিজ্য উদারীকরণ ও সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা চালাবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল প্রতিষ্ঠার পর বিশ্ব বাণিজ্য উদারীকরণ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু বিভিন্ন দেশ এ ব্যাপারে মতৈক্যে পৌছাতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে হাভানা সম্মেলনে (havana conference) শুল্ক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত সাধারণ সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়, যা সংক্ষেপে গ্যাট (GATT) নামে পরিচিত।

প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশের সংখ্যা ২৩টি ছিল। বাণিজ্য উদারীকরণে আন্তর্জাতিক সমন্বিত উদ্যোগ শুরু হয় ১৯৪৭ সালে। শুল্ক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত সাধারণ সমঝোতা (general agreement on tariffs and trade-GATT) প্রতিষ্ঠার পর থেকে মূলত এটিকে প্রথমে বাণিজ্য ও শুল্ক সংক্রান্ত অস্থায়ী ব্যবস্থা বিবেচনা করা হয়। কালক্রমে এটি স্থায়ী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে, গ্যাট (GATT) একটি সাধারণ সমঝোতা বা চুক্তি, যা স্বাক্ষরকারী দেশসমূহ একক ও যৌথভাবে মেনে চলে, দেশসমূহের প্রতিনিধিরা বাণিজ্য ও শুল্ক সম্পর্কে সময়ে সময়ে মিলিত হয়ে ঐক্যমত্যে উপনীত হতে চেষ্টা করে। নিম্নোক্ত চারটি মূলনীতির ভিত্তিতে গ্যাট (GATT) পরিচালিত হয়:

১। বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য বৈষম্য দূর করা উচিত।
২। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য একমাত্র শুল্ক বিবেচনা করা উচিত।
৩। শুল্ক আরোপের আগে এক দেশ অন্য দেশের সাথে আলোচনা করা উচিত।
৪। প্রতিযোগিতা স্বচ্ছ হওয়া উচিত, যাতে বাণিজ্যের অংশীদার ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

গ্যাট (GATT) এ নীতিমালাগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তবে ১৯৪৮ – ১৯৬২ সালের মধ্যে ৫টি সম্মেলন করেছে। এতে প্রায় ৬০ হাজার শুল্ক হার পর্যালোচনা ও সম্পাদনা করা হয়। শুল্ক হার কমানো ও বিভিন্ন বাধা দূর করায় এ সময় বিশ্ববাণিজ্য প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। গ্যাটের সম্মেলনকে রাউন্ড বলে। যে স্থানে সম্মেলন হয় তার নাম অনুসারে রাউন্ডের নামকরণ করা হয়, যেমন: জেনেভা রাউন্ড, টোকিও রাউন্ড, ইত্যাদি।

আশির দশকের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আবার সংরক্ষণবাদী প্রভাব দেখা দেয়। তেল উৎপাদনকারী দেশসমূহ ওপেক (OPEC) গঠন করে তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করে। জাপান বিশ্ববাজারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে। ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির চেষ্টা চালায়। যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু পশ্চিমা দেশ বাণিজ্য হুমকির সম্মুখীন হয়। এই পেক্ষাপটে বিশ্ব বাণিজ্য পুনরায় উদারীকরণ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে টোকিওতে গ্যাট সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। টোকিও রাউন্ডের মূল উদ্দেশ্য ছিল:

শিল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক স্বাভাবিক করা এবং শুল্ক ও অন্যান্য অ-শুল্ক বাধা অপসারণ করা। এরপর ১৯৮৬ সালে উরুগুয়ে রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়। এখানে, বিশ্বের ১৬৬টি দেশ অংশ নেয়। আলোচনা ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত ৭ বছর ধরে চলে, অনেক আলোচনা ও তর্ক বিতর্কের পর ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বরে একটি চুক্তি গৃহীত হয়। উরুগুয়ে রাউন্ডে মতৈক্য হয় যে, একটি অধিকতর শক্তিশালী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা গঠিত হবে। যার ফলশ্রুতিতে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (World Trade organization – WTO) গঠিত হয়। [শারমিন জাহান সায়মা]


সহায়িকা: জোয়ারদার, সুকেশ চন্দ্র; আলম, মোঃ শাহ; আখতার, সুফিয়া ও ইসলাম, মোঃ নজরুল, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, (২০২০), মিলেনিয়াম পাবলিকেশন্স, ঢাকা, পৃষ্ঠা ১৩৬-১৩৭।


📖 বাণিজ্য উদারীকরণে আন্তর্জাতিক সমন্বিত উদ্যোগ।
📖 বহুপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি কি?
📖 International Integration for Trade liberalization.


Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL


Leave a Reply