বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে জোয়ার ভাটার প্রভাব

প্রথমত উপকূল সম্পর্ক ধারণা করা যাক। উপকূল বলতে সমুদ্রের তীরবর্তী অঞ্চলকে বোঝায়। অন্যভাবে বলা যায় স্থলভাগ যেখানে সমুদ্রের সাথে গিয়ে মিশেছে সেই সংযোগ স্থলকেই উপকূল বলে। আবার এভাবেও বলা যায়, জোয়ারের পানি তীরভূমির সর্বোচ্চ যতদূর উঠতে পারে তাকে উপকূল রেখা বলে।

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল: বাংলাদেশে দক্ষিণ ও পূর্ব- দক্ষিণের পশ্চিম অংশ উপকূলে ঘেরা। বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার হলো উপকূলবর্তী জেলা। বাংলাদেশের স্থলভাগের সর্বদক্ষিণ পশ্চিমের হাড়িভাঙ্গা নদীর মোহনা হতে পূর্ব দিকে ফেনী নদীর মোহনা এবং সেখান থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল হতে নাফ নদীর তীর ভাগ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে ৭১২ কি.মি. উপকূল রেখা।

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে জোয়ারভাটার প্রভাব: উপকূলীয় অঞ্চলে জোয়ার ভাটা অতি সাধারণ একটি ঘটনা। জোয়ারভাটার কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। নিচে তা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো :

১। বাংলাদেশের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় অবস্থিত। এ বনভূমিকে বলা হয় সুন্দরবন। সুন্দরবনের বৃক্ষাদির ওপর জোয়ার ভাটার প্রভাব লক্ষণীয়। এ বনভূমিকে ম্যানগ্রোভ বা লবণাক্ত পানির বনভূমি বলা হয়। যা জোয়ার ভাটার ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে। শুধু তাই নয় জীববৈচিত্র্যের ওপর জোয়ার ভাটা প্রভাব বিস্তার করে।

২। জোয়ার ভাটার কারণে দেশের উপকূলবর্তী এলাকাতে বড় বড় মৎস্য আহরণ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। নদীর মোহনা ও খাঁড়ি অঞ্চলে প্রচুর মৎস্য খাদ্যের প্রাচুর্য থাকার কারণে সমুদ্র থেকে জোয়ারের সময় অসংখ্য মাছ এসে ভিড় করে উপকূলীয় অঞ্চলের নদী মোহনায়। মৎস্যজীবীরা অতি সহজে এখান থেকে মৎস্য আহরণ করে থাকে। এখানে যে সমস্ত মৎস্য ধরা পড়ে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ভেটকি, কোরাল, চান্দা, রূপচান্দা, চিংড়ি, গলদা চিংড়ি, পোয়া, স্যামন এবং ছুরি মাছ।

৩। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের লবণ চাষিরা জোয়ারভাটাকে কাজে লাগিয়ে লবণ চাষ করে থাকে। জোয়ার ভাটার জন্য পলিমাটি পড়ে নদীর মুখ বন্ধ হয়ে যেতে পারে না। সে কারণে নৌ চলাচলের যোগ্য থাকে। জোয়ার ভাটার কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে নদীর পানি নির্মল থাকে। উপকূলীয় অনেক নদীর পাশে খাল খনন করে পানি আটকিয়ে জমিতে সেচ দেয়া হয়। এতে উপকূলীয় এলাকায় কৃষিকাজের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে।

সর্বোপরি জোয়ার ভাটা উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য, নৌ-চলাচল, লবণ চাষ, মৎস্য শিল্প, মৎস্য ব্যবসায়, পর্যটন, বনভূমি প্রভৃতি বিষয়ের ওপর প্রভাবের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৪। জোয়ার ভাটার প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে একদিকে যেমন নানা ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়, অন্যদিকে উপকূলীয় অঞ্চল বিপদসংকুলও বটে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, ভূমিকম্প, সুনামি, প্রভৃতির মত মারাত্মক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি উপকূলীয় অঞ্চলে সবসময়ই থাকে। [ইশরাত জাহান মিম]


✅ বাংলাদেশের উপকূলে জোয়ার ভাটার প্রভাব


Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL


Leave a Reply